কৃষি ও প্রকৃতি

বায়োগ্যাস প্লান্টে বেকারদের কর্মসংস্থান

বায়োগ্যাস প্লান্টে বেকারদের কর্মসংস্থান

ড. ফোরকান আলী

Advertisement

বায়োগ্যাস বা জৈব গ্যাস। যা মূলত মিথেন গ্যাস। এই গ্যাস দাহ্য মানসম্পন্ন। বায়োগ্যাস খুব সহজে উৎপাদন করা যায়। উৎপাদিত গ্যাস দিয়ে রান্নার কাজ, বাতি জ্বালানো, এমনকি ইঞ্জিন চালিয়ে তা থেকে বিদ্যুৎ শক্তিও পাওয়া যায়। গ্রামেগঞ্জে যেখানে গোবর, হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা, অন্যান্য গৃহপালিত পশু বা মানুষের বিষ্ঠা, লতা-পাতা, কচুরিপানা ইত্যাদি দিয়ে একক বা মিশ্রিত ভাবে প্লান্টের মাধ্যমে পচিয়ে খুব সহজে বায়োগ্যাস উৎপাদন করা যায়।

প্রতিবেশী দেশসমূহ এ নিয়ে কাজ শুরু করেছে অনেক আগে। ভারত, থাইল্যান্ড, নেপাল ও চীনে বায়োগ্যাস প্লান্ট বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। আরও ব্যাপক গবেষণা চলছে উন্নত বিশ্বে। উন্নত এবং স্বল্পমূল্যের প্লান্ট উদ্ভাবন হচ্ছে। আমাদের দেশেও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতায় লাগসই প্রযুক্তি কাজে লাগানো হলে জ্বালানি সমস্যার আংশিক সমাধান হতে পারে। পাশাপাশি লাখ লাখ প্রশিক্ষিত যুবককে বায়োগ্যাস প্লান্ট তেরির কাজে নিয়োজিত করা যেতে পারে। ফলে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।

পলিথিন ব্যাগ দ্বারা তৈরি স্বল্পমূল্যের বায়োগ্যাস প্লান্ট মূলত দুই প্রকার। একটি বড়, একটি ছোট। গ্যাস উৎপান চেম্বারের দূরত্ব এবং ম্যানটেল লাইট লাগালে তৈরি খরচ কমবেশি হবে। আপনার বাড়ির আঙিনায় নিজেও ইচ্ছা করলে বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরি করতে পারেন।

Advertisement

তাহলে আসুন জেনে নিই কীভাবে বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরি করবেন—

পলিব্যাগ দিয়ে নির্মিত বায়োগ্যাস প্লান্ট-১যে স্থানে বৃষ্টির পানি জমা হয় না। কিছুটা উঁচু জায়গা অথবা মাটির ১২ ইঞ্চি চওড়া দেওয়ালযুক্ত একটি আয়তাকার নৌকার তলা সাদৃশ্য চৌবাচ্চা বা গর্ত ৮ ইঞ্চি ঢালু করে বা তৈরি বা খনন করতে হবে। তলীতে ভিটি বালু ব্যবহার করা যেতে পারে। পলিব্যাগটি সমান তিনভাগে ভাঁজ করে একটির মধ্যে অন্যটি ঢুকাতে হবে। ব্যাগটি টুকরা না করাই উত্তম। এবার দুই প্রান্তে দুটি মুখের প্রথমটিতে ৩ ইঞ্চি ব্যাস গুণ ৩ ইঞ্চি লম্বা পিভিসি পাইপের খণ্ডটিকে পলিব্যাগের সাথে চেপ্টা টেপ ও সল্যুশন দিয়ে মজবুত করে বাতাস নিরোধী করে বাঁধতে হবে। এভাবে দ্বিতীয়টিও বাঁধতে হবে।

লক্ষ্য রাখতে হবে, এবার পলিব্যাগের উপরিভাগে প্রথম মুখ থেকে দ্বিতীয় মুখের প্রথমটিতে ব্যাস ৩ ইঞ্চি গুণ ৩ ইঞ্চি লম্বা পিভিসি পাইপের খণ্ডটিকে পলিব্যাগের সাথে চেপ্টা টেপ ও সল্যুশন দিয়ে খুব মজবুত ও বাতাস নিরোধ করে বাঁধতে হবে। অনুরূপভাবে টুকরা ২টিও বাঁধুন। এবার পলিব্যাগের উপরিভাগের প্রথম মুখ থেকে দ্বিতীয় মুখ ২.৫ ইঞ্চি দূরে শক্ত পিভিসি পাইপ মজবুত করে অন্য দুটি মুখের মত ছিদ্র নিরোধ করে বাঁধতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে, যাতে পাইপটি যেন চুপসে না যায়। এ জন্য শক্ত পিভিসি বা ধাতব পাইপ ব্যবহার করা যেতে পারে। পলিব্যাগ সম্ভব হলে বাতাস দিয়ে ফুুলিয়ে নিলে ব্যাগটির কতটা নৌকার আকৃতি হয় সেটা বোঝা যাবে।

এবার এ আকৃতি অনুযায়ী চৌবাচ্চা বা গর্তের ঢালু উঁচু দিকে লম্বা পাইপ ও অপর প্রান্তে বসাতে হবে কম দৈর্ঘের পাইপটি। এরপর পাইপের জোড়াগুলো যাতে নেতিয়ে না পড়ে; সে জন্য তিন খণ্ড বাঁশ মাটিতে পুঁতে রাখতে হবে। পাইপের জোড়াগুলো ভালোভাবে বেঁধে দিতে হবে। প্রাথমিকভাবে প্লান্টটি যদি ৩-৪ জন ব্যবহার করে ৮-১০ মণ গোবর সমপরিমাণ পানি বা গোচনা একক বা অন্যান্য বস্তু দিয়ে মিশিয়ে প্রথম পাইপ দিয়ে ঢালবে। যতক্ষণ পর্যন্ত ব্যাগটির অর্ধেক অংশ ভর্তি না হয় ততক্ষণ ঢালতে থাকবে। এ অবস্থায় ১০-১২ দিন বন্ধ রাখতে হবে। আস্তে আস্তে গোবর ও অন্যান্য দ্রব্য পচে বুদ্বুদ সৃষ্টি হয়ে ফেঁপে উঠবে। এবার বর্জ্য বাহির হওয়ার মুখ দিয়ে গ্যাস বের হয়ে নির্দিষ্ট পাত্র বা গর্তে জমা হবে। উৎপাদিত গ্যাস দিয়ে আপনার প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারেন।

পলিব্যাগ দিয়ে নির্মিত বায়োগ্যাস প্লান্ট-২ আগের পদ্ধতি অনুসরণ করে প্লান্টটি যদি ৮-১০ জনের ব্যবহারের উপযোগী করতে চান, তবে ৮-১০ মণ গোবর সমপরিমাণ পানি বা গোচনা এককভাবে বা উভয় প্রকার তরল বস্তু দ্বারা মেশাতে হবে। এবার মিশ্রণ বস্তু প্রথম পাইপ দিয়ে ব্যাগে ঢালতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত ব্যাগটির অর্ধেক ভর্তি না হয়। এ অবস্থায় দ্বিতীয় মুখটিও ১০-১২ দিন বন্ধ রাখতে হবে। এসময়ে গোবর পচে বুদ্বুদ সৃষ্টি হয়ে ব্যাগটি ফেঁপে উঠবে। ১০-১২ দিন পর গ্যাস উৎপন্ন হয়ে ব্যাগটি ফুলে উঠবে। উৎপন্ন হওয়া গ্যাস দ্বিতীয় মুখ দিয়ে বের হয়ে নির্দিষ্ট পাত্র বা গর্তে জমা হবে। এখন আপনার কাঙ্ক্ষিত গ্যাস দিয়ে চুলা, বাতি জ্বালানোর কাজে ব্যবহার করা যাবে। এখন থেকে প্রতিদিন প্লান্টে একই সময়ে (সকালবেলা) ১০-১২ কেজি গোবর (প্লান্ট বড় হলে অনুপাতিক হারে) পানি বা গোচনা মিশিয়ে প্রথম মুখ দিয়ে ঢালতে হবে। মনে রাখতে হবে, গোচনা ব্যবহারের ফলে গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। বর্জ্য বা উপচানো গোবর মৎস্য খাদ্য বা জমির সার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। এ নির্মাণ পদ্ধতিটি গ্যাস উৎপাদন এবং গ্যাস ধারণ চেম্বার একই ব্যাগের মধ্যে। পদ্ধতিটি অস্থায়ী তবে ব্যাগের পুরত্ব বেশি বা ভাঁজের সংখ্যা বেশি হলে স্থায়িত্ব বেশি হবে। পরে পলিব্যাগ পরিবর্তন করা যায়। ভবিষ্যতে পলিথিন পরিবর্তন করে স্থায়ী ভাবেও প্লান্টটি তৈরি করা যাবে। গ্যাস উৎপাদনের কাঁচা মালের পরিমাণ, সদস্য সংখ্যা, সর্বোপরি আর্থিক অবস্থার স্থাপনাটি ছোট বা বড় আকারে তৈরি করা যায়।

Advertisement

আরও পড়ুন কৃষকের কাঠের লাঙলের দেখা মেলে মাঠে  আধুনিক পদ্ধতিতে চারা উৎপাদনে বছরে আয় ৫ লাখ 

ডিবিডের ভাসমান ডোমযুক্ত বায়োগ্যাস প্লান্ট প্লান্টটি আগের ২ ধরনের প্লান্ট অপেক্ষা উন্নত এবং ব্যয়বহুল। এর ২টি অংশ, ১টি গ্যাস ডাইজেস্টার ট্যাংক (পাকা); দ্বিতীয়টি গ্যাস হোল্ডার ট্যাংক (ধাতব)। উৎপাদিত গ্যাস তলা খোলা ডাইজেস্টার ট্যাংকে জমা হয়। ফলে ট্যাংকটি ডাইজেস্টার ট্যাংকে অবস্থিত তরলিকৃত গ্যাস সৃষ্টিকারী উপাদান (গোবর বা পশুর বিষ্ঠা) এর ওপর ভাসমান অবস্থায় থাকবে। গ্যাসের পরিমাণ বাড়লে ট্যাংকটি ওপরের দিকে উঠবে। উল্লেখ্য, গ্যাসের ওপর ট্যাংকটির ওজন স্থায়ীভাবে চাপ সৃষ্টি করায় গ্যাসের চাপ একই রকম থাকে। এ সুবিধা প্রথম ও দ্বিতীয় প্লান্টটিতে পাওয়া যাবে না।

প্রদত্ত মাপ অনুযায়ী গোলাকারভাবে মাটিতে গর্ত কাটতে হবে। গর্তটির উচ্চতা এমন হওয়া উচিত, যাতে মাটির উপরিভাগ থেকে ডাইজেস্টার ট্যাংকটি (পাকা) ৩ ফুট ০ ইঞ্চি উপরে থাকে। তলা ভালোভাবে দুর্মুজ (র‌্যামিং) করার পর ৩ ইঞ্চি ব্রিক সলিং বসাতে হবে। এর ওপর আরসিসি ঢালাই দিতে হবে। ঢালাইয়ের ঠিক কেন্দ্র বরাবর অ্যাংকর বোল্টের সাহায্যে ফ্ল্যাঞ্জ এবং খাড়া গাইড পাইপটি বসাতে হবে। পাইপটি বৃত্তাকারে গাঁথুনি তৈরির কাজে সহায়তা করবে। পাইপটির গায়ে ডাইজেস্টার ট্যাংকের ব্যাসার্ধ অনুযায়ী ১টি দণ্ড বাঁধতে হবে। যা দ্বারা গাথুনি চলাকালীন ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মাপ সঠিক রাখা যায়। গাঁথুনি ২-৩ রদ্দা ওঠার পর পূর্বে প্রস্তুত করা পিভিসি পাইপের ওপরে রি-ইনফোর্সড করা (ফেরো-সিমেন্ট) পাইপ নির্দিষ্ট মাপে ঢালু বা খাড়া অবস্থায় বসাতে হবে। পাইপ জোগানের সাহায্যে হেলান ভাবে রাখতে হবে। যতক্ষণ অবধি ওপরে গোবর ঢুকানো মুখ বা ট্যাংক তৈরি না হয়।

ধারক ট্যাংকটি যাতে তার নিজস্ব উচ্চতা অবধি নিচে নামতে পারে, সেজন্য নিচে একটি ধাপ রাখতে হবে। অর্থাৎ নিচের অংশের ব্যাস ৪ ইঞ্চি পরিমাণ ছোট হবে। গাঁথুনি চলাকালীন দেওয়ালের নিচের অংশে গাইড পাইপটি মজবুত থাকার জন্য বোল্ট এবং বোল্টের সাথে ৪টি টানা (পাইপ অথবা অ্যাংগেল) দিতে হবে। নির্দিষ্ট মাপের উচ্চতায় প্রথম পর্যায়ে গাঁথুনির কাজ শুরু হবে। ডাইজেস্টার ট্যাংকের ব্যাস অপেক্ষা ওপরের অংশ ৪ ইঞ্চি + পরিমিত বড় হবে। উচ্চতা হবে ডাইজেস্টার ট্যাংকের মাপ অনুযায়ী ওপরের কিনার থেকে ১২ ইঞ্চি-১৫ ইঞ্চি নিচে ৪টি বর্জ্য নিষ্কাশন মুখ থাকবে। ট্যাংকটির ভেতর এবং ওপরের ও বাহিরের অংশ নেট ফিনিশিং হবে। ট্যাংকের উপরিভাগ অথবা বাহিরে ২টি অথবা ৪টি পিলার তৈরি করা যেতে পারে। বিশেষত বড় আকারের প্লান্টের ক্ষেত্রে পিলার থাকলে ট্যাংক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ওপরে ওঠাতে সুবিধা হবে।

এ পোস্ট বা পিলারে টানা দিয়ে ডাইজেস্টার ট্যাংকের জন্য বাড়তি গাইড ব্যবহার করা যাবে। নিস্ক্রান্ত বর্জ্য যাতে এক স্থানে রাখা যায় এবং কমপোস্ট হিসেবে ব্যবহার করা যায়, সেজন্য ঢাকনা চালুযুক্ত ট্যাংক বা চাতাল তৈরি করা ভালো। এতে বৃষ্টির পানির হাত থেকে কমপোস্ট রক্ষা করা যাবে। ১১০ ঘনফুট অথবা ২০ জন সদস্যের অধিক ব্যবহারযোগ্য প্লান্টের ক্ষেত্রে ১০ ইঞ্চি গাঁথুনি (৫ঃ১ অনুপাত) এবং এর চেয়ে ছোট প্লান্টের ক্ষেত্রে ৫ ইঞ্চি গাঁথুনি (৪ঃ১ অনুপাতে) দ্বারা ট্যাংক তৈরি হবে। ভাসমান ট্যাংকটির ১৬ কেজি মরিচা নিরোধী ব্যবস্থাযুক্ত হলে স্থায়িত্ব বেড়ে যাবে।

ফিক্সড ডোম বায়োগ্যাস প্লান্টএবার এ আকৃতি অনুযায়ী চৌবাচ্চা বা গর্তের ঢালু উঁচু দিকে লম্বা পাইপ ও অপর প্রান্তে বসাতে হবে কম দৈর্ঘের পাইপটি। এরপর পাইপের জোড়াগুলো যাতে নেতিয়ে না পড়ে, সে জন্য তিন খণ্ড বাঁশ মাটিতে পুঁতে তার সাথে পাইপের জোড়া স্থানগুলো বেঁধে দিতে হবে। প্লান্টটি যদি ৪-৬ জনের ব্যবহার উপযোগী হয়, তবে ৮-১০ মণ গোবর সমপরিমাণ পানি বা গোচনা এককভাবে অথবা উভয় প্রকার তরল বস্তু দ্বারা মিশিয়ে মিশ্রণ প্রথম পাইপ দিয়ে পলিব্যাগে ঢালতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত ব্যাগটির অর্ধেক ভর্তি না হয়। অর্থাৎ বাহির মুখ এর পাইপের তলা পর্যন্ত। এ অবস্থায় দ্বিতীয় মুখটি ১০-১২ দিন পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হবে। এ সময় গোবর পচবে এবং বুদ্বুদ সৃষ্টি হয়ে ব্যাগটি ফেঁপে উঠবে। উৎপাদিত গ্যাস দ্বিতীয় মুখ (বর্জ্য বাহির হওয়ার মুখ) দিয়ে বের হয়ে নির্দিষ্ট পাত্র বা গর্তে জমা হবে। ১০-১২ দিন পর (গরমের দিনে আরও কম সময়ে) গ্যাস উৎপন্ন হয়ে ব্যাগটি ফুলে উঠবে। অর্থাৎ কাঙ্ক্ষিত গ্যাস এখন চুলা এবং বাতি জ্বালানোর কাজে ব্যবহার করা যাবে।

এখন থেকে প্রতিদিন এই প্লান্টে একই সময় (সকালবেলা) ১০-১২ কেজি গোবর (প্লান্ট বড় হলে অনুপাতিক হারে) পানি বা গোচনার সাথে মিশিয়ে প্রথম মুখ দিয়ে ঢালতে হবে। মনে রাখবেন, গোচনা ব্যবহারের ফলে গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। বর্জ্য বা উপচানো গোবর পুকুরে মাছ চাষের কাজে অথবা জমিতে সার হিসাবে সরাসরি ব্যবহার করা যাবে। স্থাপনাটির গ্যাস উৎপাদন এবং গ্যাস ধারক চেম্বার একই ব্যাগের মধ্যে। ব্যাগটি অস্থায়ী তবে পুরত্ব বেশি বা ভাঁজের সংখ্যা বেশি হলে স্থায়িত্ব বেশি হবে। পরবর্তীতে পলিব্যাগ পরিবর্তনযোগ্য। ভবিষ্যতে পলিথিন বাদ দিয়ে স্থায়ীভাবে প্লান্টটি পাকা করে নির্মাণ করা যেতে পারে। এ প্লান্ট মাটির নিচে ইট, বালু ও সিমেন্ট দ্বারা নির্মিত।

প্লান্টটি মূলত মাটির নিচে বসানো ফিক্সড ডোম (টাইপের)। এর সুবিধাজনক দিক হচ্ছে, প্লান্টটি মাটির নিচে হওয়ায় ওপরের জায়গা অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা যাবে। অর্থাৎ উচ্চতা জায়গা দখল করবে। প্রথমত ট্যাংকের ব্যাস এবং উচ্চতা অনুযায়ী মটিতে গর্ত করতে হবে। তলাটি অর্ধ গোলাকৃতি হবে। মাটি ভালোভাবে র‌্যামিং (দুর্মুজ) করার পর ৩ ইঞ্চি ব্রিক সলিং করতে হবে। এরপর (রি-ইনফোর্সমেন্ট) কালো তার ব্যবহার করে ৩ ইঞ্চি আরসিসি ঢালাই করতে হবে। প্রদত্ত মাপ অনুযায়ী ঢালাই করার সময় বৃত্তের কেন্দ্রে ৩টি বোল্ট রেখে একটি ফ্ল্যাঞ্জের সাহায্যে খাড়াপাড়ে একটি ১.৫ ইঞ্চি পাইপ ভূমির ওপর লেভেল অনুযায়ী উচ্চতার বসানো হলে ইটের গাঁথুনি সঠিক বৃত্তাকারে গাঁথা যাবে। খাঁড়া পাইপটি যাতে কেন্দ্রে সঠিকভাবে থাকে, যে জন্য মাটির ওপরের লেভেল থেকে পানা রাখতে হবে। পাইপটির গায়ে ট্যাংকের ব্যাসার্ধ অনুযায়ী একটি দণ্ড লাগাতে হবে। দণ্ডটি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ইটের গাঁথুনি নির্দিষ্ট উচ্চতায় গেঁথে শেষ করতে হবে।

এরপর ওপরের অংশ ও প্রদত্ত মাপ অনুযায়ী ছাতার আকৃতি রি-ইনফোর্সমেন্ট দ্বারা তৈরি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ফেরোসিমেন্ট পদ্ধতি অনুসরণ করা যায়। অন্যথায় ঢালাইয়ের কাজে ছাতার সাটারিং ব্যবহার করতে হবে। কাজটি যথেষ্ট ব্যয়বহুল। নিচের ঢালাই থেকে ওপরের ছাদ অবধি প্লাস্টারিংয়ে নেট ব্যবহার করা যেতে পারে। এই নেট ইটের গাঁথুনির ভেতর পিঠে ছোট ছোট হুকের সাহায্যে আটকিয়ে রেখে নেট গাঁথুনির গায়ে রাখার পর প্লাস্টারিং দ্বারা ঢেকে দেওয়া হলে ট্যাংকটি বিশেষ চাপ সহিষ্ণুতা গুণসম্পন্ন হবে। তবে কাজটিও কিছুটা বাড়তি ব্যয়সাপেক্ষ। ওপরে গম্বুজাকৃতি ছাদে গ্যাস বাহির হওয়ার জন্য ফ্ল্যাঞ্জযুক্ত গ্যালভানাইজড পাইপ রাখতে হবে। এ পাইপের সাথে গ্যাস নিয়ন্ত্রণ ভাল্ব থাকবে। ভাল্বের সাথে সংযুক্ত পাইপ রান্না ঘরের চুলায় সংযোগ হবে। প্রয়োজনে বাতির লাইনের জন্য বাতি ব্যবস্থা থাকতে পারে। গ্যাস উৎপাদন চেম্বারের দূরত্ব কমবেশি এবং ম্যানটেল লাইট লাগানো হলে মূল্যের তারতম্য হবে।

লেখক: গবেষক ও সাবেক অধ্যক্ষ।

এসইউ/জিকেএস