খেলাধুলা

‘মোহামেডানকে ভালোবেসেই অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি’

‘মোহামেডানকে ভালোবেসেই অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি’

মোহামেডানের খেলোয়াড় হিসেবে, অধিনায়ক হিসেবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর কোচ হিসেবে শীর্ষ লিগের শিরোপা জিতলেন আলফাজ আহমেদ। ২০০৭ সালে প্রবর্তন হওয়া প্রফেশনাল লিগের শিরোপা জিততে না পারা ছিল সাদাকালো সমর্থকদের সবচেয়ে আপসোসের জায়গা। দীর্ঘ ১৮ বছর অপেক্ষার পর চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে মোহামেডানের।

Advertisement

কাগজ-কলমে মোহামেডানকে অনেকেই দুই নম্বরে রেখেছিলেন মৌসুম শুরুর আগে। তিন ট্রফির দুটি কিংস ঘরে নিলেও সাদাকালোরা নিয়েছে সবচেয়ে মর্যাদার ট্রফিটি। যার মাধ্যমে মোহামেডান ভেঙ্গে দিয়েছে বসুন্ধরা কিংসের একচ্ছত্র আধিপত্য।

মাঠ নেই, খেলোয়াড়রা মাঝেমধ্যেই বেতনের দাবিতে অনুশীলন বর্জন করে- এমন অনেক সমস্যা নিয়েই মোহামেডান তিন ম্যাচ হাতে রেখেই চ্যাম্পিয়ন। এই কৃতিত্ব অভাবনীয়। মোহামেডানের এই সাফল্য এসেছে কোচ আলফাজ আহমেরে হাত ধরে। কি যাদু ছিল আলফাজের হাতে?

মারুফুল, মানিক, শন লিনরা যা পারেননি সেটা করে দেখিয়েছেন আলফাজ। মোহামেডানের সাফল্যের কারিগর ঐতিহাসিক শিরোপা জয়ের পর একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়ে রহস্যের ঝাঁপি খুলেছেন জাগো নিউজের কাছে।

Advertisement

জাগো নিউজ: আপনার কোচিংয়ে মোহামেডান দীর্ঘ ১৮ বছর অপেক্ষার পর পেশাদার ফুটবলে সাফল্য পেলো। কোচ হিসেবে আপনার কাছে কেমন লাগছে?

আলফাজ আহমেদ: এটা আমাদের অনেক কষ্টের ফসল। স্বাভাবিকভাবেই অনেক ভালো লাগছে।

জাগো নিউজ: কষ্টের কথাটাই প্রথমে বললেন। এর পেছনে কি কারণ আছে?

আলফাজ আহমেদ: আসলে কষ্টের ফসল এ কারণেই বললাম যে, আপনারা জানেন আমাদের অনুশীলনের মাঠ নেই। আমাদের খেলোয়াড়ও সংকট। আর্থিকভাবেও আমরা নানা সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি।

Advertisement

জাগো নিউজ: এই সাফল্য পাওয়ার ক্ষেত্রে কতটা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে আপনাকে?

আলফাজ আহমেদ: আসলে কোচিংটাই একটা চ্যালেঞ্জ। সব ক্লাবেই সমস্যা থাকে। তবে মোহামেডানের সমস্যাটা বেশি ছিল। তারপরও মোহামেডানকে আমরা ভালোবাসি। ভালোবাসি বলেই খেলোয়াড়রা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। কোচিং স্টাফও অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। যে কারণে আমরা এই সাফল্য পেয়েছি।

জাগো নিউজ: এখন পেশাদার যুগ। চুক্তি অনুযায়ীই কোচ-খেলোয়াড়দের সম্মানী পরিশোধ করতে হয়। এত সমস্যা আপনারা কিভাবে মোকাবিলা করলেন?

আলফাজ আহমেদ: আসলে মোহামেডানকে ভালোবাসেন বলেই খেলোয়াড় থেকে কোচিং স্টাফের সদস্য- সবাই ত্যাগ স্বীকার করেছেন। নাহলে এত সংকটের মধ্যে এই সাফল্য পাওয়া সম্ভব হতো না।

জাগো নিউজ: যে কোনো অর্জন রক্ষা করাও কঠিন কাজ। মোহামেডান কি পারবে এই সাফল্য ধরে রাখতে?

আলফাজ আহমেদ: ভবিষ্যতে আমরা মোহামেডানের এই অবস্থা থেকে আরো উন্নতি দেখতে চাই। সমস্যাগুলো যেন ভবিষ্যতে না হয় অফিসিয়ালরা যেন সেই ব্যবস্থা নেন।

জাগো নিউজ: আপনার কথায় বোঝা গেলো অনেক প্রতিবন্ধকতা টপকে আপনাদেরকে আজকের এ অবস্থায় আসতে হয়েছে। সেই প্রতিবন্ধকতাগুলো কি?

আলফাজ আহমেদ: আসলে অনেক কিছুই আছে এখানে। পারিশ্রমিকের বিষয় আছে। নিয়মিত টাকা-পয়সা পাওয়ার বিষয় আছে। মাঠ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার বিষয়ও আছে। এসব সমস্যা থাকার পরও আমরা সবাই ত্যাগ স্বীকার করেছি। আমাদের একটাই কথা ছিল, সবকিছুর উর্ধ্বে মোহামেডান ক্লাব।

জাগো নিউজ: আগামী মৌসুমের জন্য আপনার কি পরিকল্পনা?

আলফাজ আহমেদ: আগামী মৌসুমে আমি থাকবো কিনা তাতো ঠিক নেই। আমি জানিও না। নতুন করে আমার সাথে তো চুক্তি হয়নি। কি হয় সেটা ভবিষ্যত বলবে।

জাগো নিউজ: কোচ হিসেবে আপনার শক্তি ও দূর্বলতার জায়গা কি?

আলফাজ আহমেদ: সেটা তো আমি বলবো না। আপনারা মিডিয়া আছেন, দর্শক আছে- তারাই বলবেন আমার কোন জায়গাটায় শক্তিশালী ও কোন জায়গাটা দূর্বল।

জাগো নিউজ: দল চ্যাম্পিয়ন হলে সবাই কোচের সাফল্য নিয়েই কথা বলেন। আপনি কি মনে করেন?

আলফাজ আহমেদ: আসলে সবার কষ্ট ও পরিশ্রমেই এই সাফল্য এসেছে। খেলোয়াড়রা পরিশ্রম করেছেন, কর্মকর্তারা পরিশ্রম করেছেন এবং কোচিং স্টাফরাও পরিশ্রম করেছেন। তাই এই কৃতিত্ব সম্মিলিতভাবে সবারই।

জাগো নিউজ: এত বড় ক্লাব। অনেক রাঘব বোয়াল আছেন এই ক্লাবের পরিচালক ও স্থায়ী সদস্য। তাহলে অর্থ সংকটে পড়তে হয়েছিল কেন?

আলফাজ আহমেদ: দেখুন, আমাদের ক্লাবের সভাপতি ও ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান ছাড়া আমরা আসলে কাউকেই পাইনি।

জাগো নিউজ: সভাপতি ও ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান আপনাদের কিভাবে উদ্বুদ্ধ করেছেন?

আলফাজ আহমেদ: আসলে কেবল আর্থিক বিষয়টিই তারা দেখেননি, আমাদের মানসিকভাবেও চাঙ্গা করেছেন। তাদের চ্যাম্পিয়নশিপ নিয়ে কোনো চাপ ছিল না। তারা আমাদের কাছে চেয়েছিলেন যাতে মোহামেডানের ঐতিহ্যটা ফিরিয়ে আনতে পারি। আমরা সেই চেষ্টাই করেছি।

জাগো নিউজ: প্রফেশনাল লিগ চালু হওয়ার পর মারুফুল হক, সফিকুল ইসলাম মানিক, এমনকি বিদেশি কোচও মোহামেডানের ডাগআউটে দাঁড়িয়েছেন। কেউ পারেননি। শেষ পর্যন্ত আপনার হাত ধরেই স্বপ্নের শিরোপা আসলো মোহামেডানে।

আলফাজ আহমেদ: গত তিন-চার বছর ধরে আমরা টিমটা ধরে রেখেছি। দুই বছর আগে আমরা যখন ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপ জিতলাম তখনই বলেছিলাম লিগটা জিততে চাই। গতবার রানার্সআপ হয়েছি। এবার ৩ ম্যাচ হাতে রেখেই চ্যাম্পিয়ন। আল্লাহর অশেষ মেহেরবাণী যে, আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে পেরেছি।

জাগো নিউজ: কোচ হিসেবে আপনি কোন বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়েছিলেন যাতে মোহামেডান এত বছর পর ধরতে পারলো সোনার হরিণ?

আলফাজ আহমেদ: আমি খেলোয়াড়দের সাথে মধুর একটা সম্পর্ক তৈরি করেছিলাম। সেই সম্পর্ক ছিল কোচিং স্টাফের সদস্য এবং ম্যানেজমেন্টের সবার সাথে। কোচ যদি খেলোয়াড়দের বুঝতে পারেন এবং খেলোয়াড়রা যদি কোচকে বুঝতে পারেন তাহলে কাজটা অনেক সহজ হয়। আমরা সেই সম্পর্ক রেখে একটা ঐক্যবদ্ধ দল হিসেবে মাঠে ও মাঠের বাইরে পরিশ্রম করেছি।

জাগো নিউজ: খেলোয়াড় যাদের সাথে কথা হয়েছে তারা সবাই বলেছেন কোচের সহযোগিতা পেয়েছি। আপনি খেলোয়াড়দের কেমন সহযোগিতা পেয়েছেন?

আলফাজ আহমেদ: খেলোয়াড়দের দিক থেকে আমি অনেক সহযোগিতা পেয়েছি। সেটা আমার অ্যাডভান্টেজ ছিল। স্থানীয় ও বিদেশি সব খেলোয়াড়দের কাছ থেকেই ফ্যান্টাস্টিক সহযোগিতা পেয়েছি। পাশাপাশি কোচিং স্টাফ যারা ছিলেন। বিশেষ করে কানন (গোলরক্ষক কোচ ছাইদ হাছান কানন) সিনিয়র ভাই হিসেবে আমাদের সব সময় গাইড করতেন। সহকারী কোচ আবদুল কাইয়ুম সেন্টু সেও চমৎকার কাজ করেছে। আমাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ ছিল না। এই ঐক্যটাই আমাদের অনেক এগিয়ে দিয়েছে।

জাগো নিউজ: সোলেমান দিয়াবাতে ও মোজাফফরভের অন্য ক্লাব থেকে লোভনীয় অফার ছিল বলে আমরা শুনেছিলাম। তারপরও আপনারা তাদের রেখে দিতে পেরেছেন। কিভাবে সম্ভব হয়েছিল?

আলফাজ আহমেদ: এ কাজগুলো করার ক্ষেত্রে ক্লাবের অফিসিয়ালরাই বড় ভূমিকা পালন করেছেন। তা নাহলে তো তাদের রাখা সম্ভব হতো না।

জাগো নিউজ: ধন্যবাদ আপনাকে।আলফাজ আহমেদ : আপনাকেও ধন্যবাদ।

আরআই/আইএইচএস/