দেশজুড়ে

ঈদ সামনে বেড়েছে গরু চুরি, নিষ্ক্রিয় পুলিশ

ঈদ সামনে বেড়েছে গরু চুরি, নিষ্ক্রিয় পুলিশ

ময়মনসিংহে হঠাৎ গরু চুরি বেড়েছে। প্রতি রাতে জেলার কোথাও না কোথাও গরু চুরি হচ্ছে। এতে আতঙ্কে রয়েছেন কৃষক ও খামারিরা। অনেক গ্রামের কৃষকরা রাত জেগে গরু পাহারা দিচ্ছেন।

Advertisement

জেলার ১৩টি উপজেলার মধ্যে ঈশ্বরগঞ্জ, নান্দাইল, ফুলপুর ও তারাকান্দায় সংঘবদ্ধ গরু চোরের উৎপাত বেশি। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে গ্রামের গরুগুলোকে টার্গেট করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

শুক্রবার (১৭ মে) দিনগত মধ্যরাতে ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়। এসময়কে টার্গেট করে সংঘবদ্ধ চোর। এসময় জেলার ফুলপুর উপজেলার সিংহেশ্বর ইউনিয়নের বালিচাঁন্দা গ্রামে জামাল খার বাড়ির গোয়ালঘর থেকে চারটি গরু নিয়ে যায় চোর চক্র। একই সময় পার্শ্ববর্তী তারাকান্দা উপজেলার ধলিরকান্দা গ্রামের সালাম সরকারের তিনটি গরু চুরি হয়।

গত ১৩ মে রাতে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ ইউনিয়নের কুল্লাপাড়া গ্রামের কৃষক আবু সাঈদ ভূঁইয়া আব্দুল ও তার দুই ভাই প্রতিদিনের মতো আটটি গরু গোয়ালঘরে রেখে ঘুমিয়ে পড়েন। মধ্যরাতে গরুগুলো চুরি হয়ে যায়। চুরি হওয়া গরুগুলোর মধ্যে বড় দুুটি ষাঁড়, চারটি গাভি ও দুটি বাছুর ছিল।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২০ দিনে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে অর্ধশতাধিক গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে শুধু ঈশ্বরগঞ্জ ও নান্দাইল উপজেলাতেই অন্তত ৩০টি গরু চুরি হয়েছে। অনেকে চোরের উৎপাত থেকে রক্ষা পেতে কম দামেই গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন। যাদের গরু রয়েছে, তাদের অনেকে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। সংঘবদ্ধ চোরচক্র কখনো প্রাইভেটকারে, কখনো পিকআপে, আবার কখনো হেঁটে আসছে। সুযোগ মতো গরু নিয়ে চলে যাচ্ছেন তারা।

আরও পড়ুন গরু হাটে তুুলতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন ব্যাপারীরা, বলছেন ‘সংকট’ হবে না হারাম উপার্জনকারীর সঙ্গে কোরবানি করা যাবে? কোরবানির পশু পরিবহনে এবারও দুটি বিশেষ ট্রেন আফতাবনগরের দুটি ব্লক ও সানভ্যালির অংশে পশুর হাট বসানো যাবে না

ফুলপুর উপজেলার সিংহেশ্বর ইউনিয়নের বালিচাঁন্দা গ্রামের কৃষক জামাল খা জাগো নিউজকে বলেন, ‌‘আমার দুটি গাভি, একটি ষাঁড় ও একটি বকনা বাছুর ছিল। শুক্রবার মধ্যরাতে ঝড়বৃষ্টির সময় চোর গরুগুলো নিয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘গরু লালন-পালন করতে সমিতি থেকে ঋণ নিতে হয়েছে। কোরবানির ঈদের কয়েকদিন আগে ষাঁড়টি বিক্রি করার আশা করেছিলাম। চোর আমার আশাকে দুঃস্বপ্নে পরিণত করেছে।’

তারাকান্দা উপজেলার ধলিরকান্দা গ্রামের কৃষক সালাম সরকার বলেন, ‘চোরচক্র প্রাইভেটকারে এসেছিল। মধ্যরাতে ঝড়বৃষ্টির সময় সড়কের পাশে প্রাইভেটকার থামিয়ে তিনটি গরু পিকআপভ্যানে তোলা হয়। এসময় টের পেয়ে চোরদের আটকানোর চেষ্টা করলে দ্রুত গাড়ি চালাতে শুরু করে। এসময় ইটপাটকেল মারলে গাড়ির সামনের কাচ ভেঙে যায়। কিন্তু আটকানো সম্ভব হয়নি।’

Advertisement

নান্দাইল উপজেলার মুশল্লী ইউনিয়নের পাঁচমুশল্লী গ্রামের আবু তাহের ও সোহরাব উদ্দিন বয়ান জানান, তাদের দেড় লাখ টাকা মূল্যের দুটি গরু ছিল। গত ২১ এপ্রিল দুই গরুই চুরি হয়ে যায়। পরদিন এক গ্রাম্য সালিশে একই গ্রামের বাবুল মিয়া ও আগ মুশল্লী গ্রামের আবু সাইদকে চোর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। পরে তারেরঘাট ঈদগাহ মাঠে সালিশে তারা প্রকাশ্যে গরু চুরির কথা স্বীকার করেন। সেখানে বাবুল মিয়া জানান, একই গ্রামের হারিকুল ও বারই গ্রামের লিয়াকত মিয়াসহ তারা চারজন গরু দুটি চুরি করে গফরগাঁওয়ে এক কসাইয়ের কাছে ৬৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। পরে সালিশে সিদ্ধান্ত হয়, ১৫ দিনের মধ্যে গরুর মালিককে তারা আড়াই লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেবেন।

পাঁচমুশল্লী গ্রামের খামারি নজরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার ছয়টি গরু রয়েছে। এগুলো নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি। গরুগুলো রাত জেগে পাহারা দিচ্ছি।’

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘নিয়মিত গরু চুরির ঘটনা ঘটলেও পুলিশের তৎপরতা নেই। গ্রামগুলোতে পুলিশের নজরদারির অভাব থাকায় গরু চুরির ঘটনা বাড়ছে।’

এ বিষয়ে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম বলেন, গরু চুরির ঘটনা ঘটলে গরুর মালিকদের থানায় অভিযোগ দেওয়া উচিত। গরু চুরি বন্ধ করতে পুলিশ তৎপর রয়েছে। পাশাপাশি চোর চিহ্নিত ও চুরি হওয়া গরু উদ্ধারে পুলিশ কাজ করছে।

এসআর/জিকেএস