সরকারিভাবে দুদিন ছুটি থাকায় শুকবার ও শনিবার দেশের শেয়ারবাজারে লেনদেন হয় না। এ নিয়ম ভেঙে দীর্ঘ ২০ বছর পর দেশের শেয়ারবাজারে শনিবার লেনদেনের ঘটনা ঘটেছে। টানা দরপতনের মধ্যে এমন ব্যতিক্রমী লেনদেনের দিনে শেয়ারবাজার ছিল ঊর্ধ্বমুখী। তবে কমে গেছে লেনদেনের গতি।
Advertisement
শনিবার (১৭ মে) দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে সবকটি মূল্যসূচক। এর আগে গত সপ্তাহের শেষ তিন কার্যদিবস শেয়ারবাজারে ঢালাও দরপতন হয়।
একসময় দেশে সাপ্তাহিক সরকারি ছুটি ছিল একদিন। ১৯৯৭ সালে প্রথম দুদিন (শুক্রবার ও শনিবার) সাপ্তাহিক ছুটি নির্ধারণ করা হয়। তবে ২০২১ সালে তা বাতিল করে আবার সাপ্তাহিক ছুটি একদিন করা হয়। অবশ্য ২০০৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর আবার সাপ্তাহিক ছুটি দুদিন করা হয়।
সাপ্তাহিক ছুটি দুদিন করার পর দেশের শেয়ারবাজারের লেনদেনও দুদিন বন্ধ থাকে। তবে আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে সরকার দীর্ঘ ছুটি দেওয়ার পাশাপাশি দুই শনিবার অফিস খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। তার আলোকে আজ শনিবার সরকারি সব অফিস খোলা থাকার পাশাপাশি শেয়ারবাজারে লেনদেন চলছে।
Advertisement
এর মাধ্যমে ২০০৫ সালের পর আবারও শেয়ারবাজারে শনিবারে লেনদেনের ঘটনা ঘটলো। এমন ঐতিহাসিক দিনে শেয়ারবাজারে লেনদেনের প্রথম ঘণ্টায় বাজারে পতন প্রবণতা দেখা যায়। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমায় একপর্যায়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ২০ পয়েন্ট কমে যায়।
তবে প্রথম ঘণ্টার লেনদেন শেষ হওয়ার পর বাজারের চিত্র বদলে যেতে থাকে। দাম কমার তালিকা থেকে একের পর এক প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার তালিকায় চলে আসে। লেনদেনের শেষ পর্যন্ত চলে এ ধারা। ফলে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার পাশাপাশি সবকটি মূল্যসূচক বেড়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়েছে।
দিনের লেনদেন শেষে সব খাত মিলে ডিএসইতে ২৭৭টি কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে পেরেছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৭৯টির। আর ৪০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ভালো কোম্পানি বা ১০ শতাংশ অথবা তার বেশি লভ্যাংশ দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১৪৩টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে ৫৫টির দাম কমেছে এবং ১৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
মাঝারি মানের বা ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেওয়া ৭৩টি কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে ৬টির দাম কমেছে এবং ৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেওয়ার কারণে পচা ‘জেড’ গ্রুপে স্থান হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৬১টির শেয়ারের দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৮টির এবং ১৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আর তালিকাভুক্ত ৩৬টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ২৩টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে ৫টির দাম কমেছে এবং ৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
Advertisement
অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার দিনে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসই-এক্স আগের দিনের তুলনায় ৩৯ পয়েন্ট বেড়ে ৪ হাজার ৮২০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৩ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৫২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৮ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৭৮৮ পয়েন্টে উঠে এসেছে।
সবকটি মূল্যসূচক বাড়লেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কমেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ২৬২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ২৯৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ৩৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।
এ লেনদেনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির ১৩ কোটি ২২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিচ হ্যাচারির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১১ কোটি ৬৩ লাখ টাকার। ৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সিটি ব্যাংক।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- উত্তরা ব্যাংক, বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার, ফাইন ফুডস, মিডল্যান্ড ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন এবং শাহিনপুকুর সিরামিক।
অন্য শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৪ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৫৮ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৫৭টির এবং ২৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১০ কোটি ২৯ লাখ টাকা।
এমএএস/এমএইচআর/এমএস