মাগুরার ৮ বছরের শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায় হলো আজ। এ রায়ে মামলার প্রধান আসামি ও তার বোনের শ্বশুর হিটু শেখকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। শিশু আছিয়ার সঙ্গে ঘটে যাওয়া নৃশংস ঘটনার দ্রুত বিচার দাবিতে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল গোটা দেশ। অবশেষে অভিযোগ গঠন বা বিচার শুরুর ২৫ দিনের মাথায় রায় ঘোষণা করা হলো।
Advertisement
শনিবার (১৭ মে) সকালে মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান এই ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করেন। রায়ে শিশুটির বোনের স্বামী, ভাসুর ও শাশুড়িকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন শিশু আছিয়া। চলতি বছরের ৬ মার্চ রাতে তার ওপর নির্মম নির্যাতন চালায় তার বোনের শ্বশুর, মামলার এজাহারে অভিযোগ করে তার মা। তিনি অভিযোগ করে বলেন, মেয়ের স্বামীর সহায়তায় তার বাবা (শ্বশুর) শিশুটিকে ধর্ষণ করে। বিষয়টি মেয়ের শাশুড়ি ও ভাসুরও জানতো। তারা ঘটনা ধামাচাপা দিতে শিশুটিকে হত্যাচেষ্টা চালায়। এ ঘটনায় ৮ মার্চ নিহত শিশুটির মা বাদী হয়ে ৪ জনের নামে মাগুরা সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার মামলা করেন।
আরও পড়ুন:
Advertisement
গত ১৩ এপ্রিল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মাগুরা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আলাউদ্দিন আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। ১৭ এপ্রিল মামলাটি চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। ২০ এপ্রিল অভিযোগপত্র গ্রহণ করা হয়। গত ১৫ মার্চ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সব্যসাচী রায়ের আদালতে শিশুটির বোনের শ্বশুর ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ৬ মার্চ ঘটনার দিন থেকে ৭৩ দিনের মাথায় আজ এ মামলার রায় ঘোষণা হলো।
ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ
ঘটনার পরদিন আছিয়াকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। ৭ মার্চ তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। এরপর ঢাকা মেডিকেল থেকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচে) নেওয়া হয় তাকে। সেখানেই তার চিকিৎসা চলছিল। ১৩ মার্চ সকালে দু-দফায় ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ (আকস্মিকভাবে হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়া) হয় তার। এরপর আবারও কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। সেদিনই ১টায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
এরপর সামরিক হেলিকপ্টারে মাগুরায় নেওয়া হয় আছিয়ার মরদেহ। আছিয়ার এভাবে চলে যাওয়া মেনে নিতে পারেনি তার গ্রামের মানুষ। তার বোনের শ্বশুরবাড়িতে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা।
Advertisement
আরও পড়ুন:
মাগুরায় শিশু ধর্ষণের ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছে সারাদেশধর্ষণে জড়িত অপরাধীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবেঢাবিতে ‘ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ’ গঠন, ধর্ষকের প্রকাশ্যে শাস্তিসহ ২ দাবিএদিকে, আছিয়ার সঙ্গে ঘটে যাওয়ার ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ শুরু হয় সারা দেশে। ৮ মার্চ মধ্যরাতে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গঠিত হয় ‘ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ। ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে এ ঘটনায় জড়িতদের প্রকাশ্যে শাস্তির দাবি জানান তারা। ধর্ষণ ও হত্যার বিচার দাবিতে মধ্যরাতে উত্তাল হয়ে ওঠে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। এসময় শিক্ষার্থীরা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, নো মোর রেপিস্ট’, ‘একটা একটা ধর্ষক ধর, ধইরা ধইরা বিচার কর’, ‘আমার বোনের কান্না আর না, আর না’, ‘আমার বোন ধর্ষিত কেন? ইন্টারিম জবাব চাই’, ‘ফাঁসি ফাঁসি, ফাঁসি চাই, ধর্ষকের ফাঁসি চাই’, ‘ধর্ষকের শাস্তি মৃত্যু, মৃত্য’, ‘ধর্ষকের ঠিকানা, এই বাংলাদেশে হবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
দেশের বিভিন্ন স্থানে শিশুসহ ক্রমাগত ধর্ষণের বিচারের দাবিতে মধ্যরাতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরাও। ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও। ধর্ষক ও নিপীড়কদের সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর করে নারীসহ জনসাধারণের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন:
মাগুরার শিশুটির সব ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সরানোর নির্দেশ ধর্ষণ মামলার বিচার ৯০ দিনে শেষ করতে হবেনির্মম এই ঘটনার পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। দ্রুত গ্রেফতার করা হয় জড়িতদের। নারী শিশু নির্যাতন ও দমন ট্রাইব্যুনালকে ১৮০ দিনের মধ্যে বিচারকাজ শেষ করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
এসএনআর/এমএস