তাহমিদুল হাসান আকন্দ
Advertisement
প্রতি বছরের ন্যায় সরকারি তিতুমীর কলেজের গণিত বিভাগের আয়োজনে হয়ে গেলো আনন্দভ্রমণ। পূর্ব নির্ধারিত স্থান ছিল নুহাশ পল্লী। নুহাশ পল্লী হলো ঢাকার অদূরে গাজীপুরে অবস্থিত প্রয়াত নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের বাগানবাড়ি। আনন্দভ্রমণে উপস্থিত ছিলেন গণিত বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আফসারী আহমেদসহ শিক্ষক, কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীরা। ফলে আনন্দভ্রমণ হয়ে ওঠে আনন্দময় এবং মনোমুগ্ধকর।
বিভাগের চারটি সেশনের শিক্ষার্থী নিয়ে এমন বৃহৎ পরিসরে ভ্রমণ আয়োজন নিঃসন্দেহে চ্যালেঞ্জিং। আয়োজনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছেন প্রতিটি সেশনের নির্ধারিত প্রতিনিধিরা। যাদের সুন্দর পরামর্শ এবং দিকনির্দেশনায় আয়োজনটি সফল এবং প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। তারা হলেন—রফিকুল ইসলাম স্যার, মিলটন স্যার, নাজিয়া জাহান ম্যাম, রোকসানা ম্যাম, জাকির স্যার, আসমা ম্যাম, মতলবোবুর রহমান স্যারসহ অনেকেই।
আয়োজনের সবচেয়ে সুন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—ছাত্র-শিক্ষক, সিনিয়র-জুনিয়রের মিলনমেলা। আমাদের সম্মানিত শিক্ষকেরা শিখিয়েছেন ন্যায়পরায়ণতা, সততা এবং একতাবদ্ধ হয়ে থাকার বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা। সেই সাথে সিনিয়র শিক্ষার্থীরা শিখেছেন কিভাবে জুনিয়রদের স্নেহ করা যায় এবং জুনিয়ররা শিখেছেন কিভাবে সিনিয়রদের সম্মান করা যায়। আনন্দভ্রমণের স্পট হয়ে উঠেছে শ্রেণিকক্ষ। কেননা আমরা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ পাঠগুলো পেয়ে গেছি সেই আনন্দভ্রমণ থেকেই।
Advertisement
আনন্দভ্রমণের পূর্ব নির্ধারিত স্থান নুহাশ পল্লীর উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাস থেকে বাস ছেড়ে যায় ৭টা ৩০ মিনিটে। ৯টার সময় যাত্রাবিরতি দিয়ে গাজীপুরের অপরূপ সৌন্দর্যের সমাহার শালবনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে সকালের নাস্তা শেষ করি। নাস্তা শেষ করে আমাদের যাত্রা শুরু হয় নুহাশ পল্লীর দিকে। অনেক হইহুল্লোড়, গান, বাজনার মাধ্যমে সকাল ১০টায় পৌঁছাই। তারপর ৩০ মিনিটের জন্য সংক্ষিপ্ত বিশ্রামের মধ্যেই শেষ হয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরিচয়পর্ব।
আরও পড়ুন
কাপ্তাইয়ে ভ্রমণের নতুন স্পট ‘গরবা গুদি’ খুলনার উল্লাস পার্কে যা আছে দেখার মতোবিশ্রাম শেষে সাড়ে ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত নুহাশ পল্লীর বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানগুলো দেখা হয়। নুহাশ পল্লীর সবুজ প্রকৃতি এবং নান্দনিক পরিবেশ উপভোগ করতে গিয়ে প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদকে অনুভব করি। এ আনন্দভ্রমণে হুমায়ূন আহমেদের জীবন সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পারি। যা আগে বইয়ের পাতায় জানতে হতো। বইয়ের পাতা থেকে অর্জিত জ্ঞান থেকেও বাস্তবিক জ্ঞান বেশি টেকসই ও কার্যকরী। নুহাশ পল্লীর এই ভ্রমণে আমরা হুমায়ূন আহমেদ সম্পর্কে বাস্তবিক জ্ঞান লাভ করেছি।
ঘোরাঘুরি ও ছবি তোলার পর্ব শেষ হলে শুরু হয় খেলাধুলার ইভেন্ট। পুরুষের জন্য নির্ধারিত ইভেন্ট ছিল মোরগ লড়াই, বেলুন ফোটানো। নারীর জন্য ছিল জল-ডাঙা এবং খালি মাঠে গোল দেওয়া। ইভেন্ট পরিচালনা করেন রোকসানা ম্যাম। খেলাধুলার পর্ব শেষ হয় দেড়টায়। তারপর ৩০ মিনিটের জন্য নামাজের বিরতি দেওয়া হয়। নামাজ শেষে খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শুরু হয়। তারপর শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন নাজিয়া জাহান ম্যাম। সারাদিনের ক্লান্তি নিমিষেই শেষ হয়ে যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মনোমুগ্ধকর নাচ, গান, কৌতুক এবং আবৃত্তির মধ্য দিয়ে।
Advertisement
আনন্দভ্রমণের সর্বশেষ ইভেন্ট ছিল র্যাফেল ড্র এবং পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান। পুরস্কার বিতরণ করেন বিভাগের শিক্ষকরা। একদিনের আনন্দভ্রমণ শেষ হয় বিভাগীয় প্রধান আফসারী আহমেদের সমাপনী বক্তব্যের মাধ্যমে। তার বক্তব্য ছিল অনুপ্রেরণা এবং ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য দিকনির্দেশনা। বিকেল ৫টায় আমরা নুহাশ পল্লী ত্যাগ করে ক্যাম্পাসের দিকে যাত্রা শুরু করি। নুহাশ পল্লীর একদিনের আনন্দভ্রমণ যেন চোখের পলকেই শেষ হয়ে গেলো। এ আনন্দভ্রমণ থেকে যাবে চির স্মরণীয় হয়ে। মনের মণিকোঠায় রয়ে যাবে আজীবন।
লেখক: শিক্ষার্থী, গণিত বিভাগ, ৪র্থ বর্ষ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা।
এসইউ/এমএস