ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আজ বৃহস্পতিবার অর্ধ দিবস ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করে। তবে এ ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে পূর্ণদিবস ধর্মঘট ঘোষণা করে ‘সন্ত্রাসবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম। তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জোর করে শ্রেণিকক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে জোর করে শ্রেণিকক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আন্দোলনকারীরা।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে তালা দেওয়া দেখা যায়। এছাড়া বেশ কয়েকটি অনুষদ ও রেজিস্ট্রার ভবনে তালা দেওয়া ছিল।
‘সন্ত্রাসবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ নামের নতুন এই প্ল্যাটফর্মে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, ছাত্রমৈত্রী, ছাত্র ফেডারেশন এবং কয়েকটি বাম সংগঠনের আধিক্য দেখা গেছে।
প্রতিবাদের শুরুতেই তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে তালা দেন। পরে কলাভবন, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ ভবনে তালা দেওয়া হয়। এসময় তারা উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান এবং প্রক্টর ড. সাইফুদ্দীন আহমেদের পদত্যাগ দাবি করেন।
Advertisement
মিছিলে উপস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হল ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক সাকিব বিশ্বাস বলেন, আমরা উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগের দাবিতে সামাজিক বিজ্ঞান ভবন, কলা ভবন, ব্যবসায় শিক্ষা ভবনে তালা দিয়েছি। বিজ্ঞান বিভাগের একাডেমিক ভবনগুলোতেও তালা দেওয়া হবে। এছাড়া আমরা পূর্ণদিবস ধর্মঘট হিসেবে প্রশাসনিক ভবনে তালা দেবো।
আরও পড়ুনঢাবি ভিসি-প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি, ছাত্রদলের কালোব্যাজ ধারণদাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাটডাউন ঘোষণাযদিও ‘সন্ত্রাসবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ প্ল্যাটফর্মের এমন কাজ ভালোভাবে নেননি শিক্ষার্থী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সব ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছিল। দুপুর ২টা থেকে আবার ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে ‘সন্ত্রাসবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে ঢাবি শাখা ছাত্রদল, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কয়েকজন নেতাকর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন ও প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের জোর করে বের দিয়ে তালা দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, কলা ভবনের ডিন অফিসে গিয়ে কর্মচারীদের বের করে দেন কয়েকজন। তাদের মধ্যে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের ক্রীড়া সম্পাদক সাইফ উল্লাহ সাইফ, কবি জসীমউদদীন হল ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক তানভীর বারী হামিম, সূর্যসেন হলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক আবিদ-উর রহমান মিশু, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ জুবেল।
Advertisement
ঢাবির রেজিস্ট্রার মুনসী শামস উদ্দিন আহমেদ বলেন, দুপুরের দিকে কয়েকজন এসে প্রশাসনিক ভবনের বিভিন্ন রুমে গিয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীদের বলেন দুই মিনিটের মধ্যে রুম থেকে বের হয়ে যেতে।
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী রুপা আক্তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ছাত্রদল ও বামদের ঘোষিত ধর্মঘট পালন করতে কি আমরা বাধ্য? আমরা কয়েকজন আমাদের পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলার জন্য বিভাগে এসেছিলাম। তারা একপ্রকার ধাক্কা দিয়ে বলতেছে, এখনই বের হয়ে যান, শহীদ সাম্যের রক্তের উপর কোনো ক্লাস পরীক্ষা চলবে না।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সূর্যসেন হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক আবিদ-উর রহমান মিশু বলেন, এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমরা অর্ধদিবস ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ধর্মঘট পালন করি এবং সবাইকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের আহ্বান করি। সবাই স্বাচ্ছন্দ্যে আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমাদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেন।
এফএআর/কেএসআর/জেআইএম