আল্লাহ রাহমানুর রাহিম; পরম করুণাময়, দয়ার আধার। বান্দার প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও ইহসানের কোনো সীমা নেই। দুনিয়াতে মানুষ পাপাচারে লিপ্ত হয়, চরম সীমালঙঘন করে, এরপরও আল্লাহ ছাড় দেন, তওবার জন্য সময় দেন। আল্লাহর দয়া না হলে দুনিয়ার বেশিরভাগ মানুষই অবাধ্যতার অপরাধে ধ্বংস হয়ে যেতো।
Advertisement
পাশাপাশি ভুলে গেলে চলবে না, আল্লাহ তাআলা কঠোর শাস্তিদাতাও বটেন। মানুষ যদি স্বেচ্ছাচার, জুলুম ও অবাধ্যতায় সীমালঙ্ঘন করে, সুযোগ পাওয়ার পরও তওবা না করে, তাহলে দুনিয়া ও আখেরাতে সে আল্লাহ তাআলার কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে পারে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, জেনে রাখো, আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা এবং তিনি পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা মায়েদা: ৯৮)
আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা কি এটা থেকে নির্ভয় হয়েছ যে, যিনি আকাশে রয়েছেন তিনি তোমাদেরকেসহ ভূমিকে ধ্বসিয়ে দেবেন, অনন্তর তা আকস্মিকভাবে থর থর করে কাঁপতে থাকবে? নাকি তোমরা নির্ভয় হয়েছ যে, আকাশে যিনি রয়েছেন তিনি তোমাদের ওপর কঙ্করবর্ষী ঝঞ্ঝা প্রেরণ করবেন না? তখন তোমরা জানতে পারবে কেমন হয় আমার সতর্কবাণী! তাদের আগের লোকেরাও আমার সতর্কবাণী প্রত্যাখ্যান করেছিল, পরিণতিতে কেমন ছিল আমার শাস্তি! (সুরা মুলক: ১৬-১৮)
তাই আল্লাহ তাআলার ক্ষমা ও রহমতের আশা করার পাশাপাশি আমাদের কর্তব্য তার শাস্তি ও ক্রোধ থেকেও বাঁচার চেষ্টা করা। আল্লাহ তাআলা ক্রুদ্ধ হন এমন কাজগুলোর কাছে ধারেও না যাওয়া।
Advertisement
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলার ক্রোধের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এমন কিছু পাপের কথা এখানে আমরা উল্লেখ করছি:
১. আল্লাহর সাথে শিরক করা
শিরক আল্লাহর কাছে সবচেয়ে ঘৃণ্য ও জঘন্যতম পাপ। কোরআনে শিরককে সবচেয়ে নিকৃষ্ট জুলুম বলা হয়েছে এবং বিভিন্ন আয়াতে বারবার শিরক থেকে বেঁচে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ সব গুনাহ ক্ষমা করলেও শিরক ক্ষমা করবেন না। আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরিক করা ক্ষমা করেন না। এছাড়া অন্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। এবং যে আল্লাহর সাথে শরিক করে সে এক মহাপাপ করে। (সুরা নিসা : ৪৮)
শিরক যারা করবে, তাদের জন্য জান্নাত হারাম ঘোষণা করে আল্লাহ বলেন, আর যে আল্লাহর সাথে শরিক করে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন এবং তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। (সুরা মায়েদা: ৭২)
Advertisement
২. অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা
যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কোনো মুমিনকে হত্যা করে, তার ওপর আল্লাহ তাআলা ক্রুদ্ধ হন, তাকে লানত করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, আর যে ইচ্ছাকৃত কোন মুমিনকে হত্যা করবে, তার প্রতিদান হচ্ছে জাহান্নাম, সেখানে সে স্থায়ী হবে। আর আল্লাহ তার উপর ক্রুদ্ধ হবেন, তাকে লা‘নত করবেন এবং তার জন্য ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত করে রাখবেন। (সুরা নিসা: ৯৩)
আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, যে ব্যক্তি মানুষ হত্যা কিংবা জমিনে সন্ত্রাস সৃষ্টির কারণ ছাড়া কাউকে হত্যা করলো সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করল। আর যে একজন মানুষের প্রাণ বাঁচালো, সে যেন সব মানুষকে বাঁচালো। (সুরা মায়েদা: ৩২)
৩. ইমান গ্রহণের পর কুফরি করা
মুরতাদ হওয়া বা ইমান গ্রহণের পর কুফরি করা আল্লাহর তাআলার ক্রোধের কারণ। আল্লাহ তাআলা বলেন, যে ইমান আনার পর আল্লাহর সাথে কুফরি করেছে এবং যারা তাদের অন্তর কুফরি দ্বারা উন্মুক্ত করেছে, তাদের ওপরই আল্লাহর ক্রোধ এবং তাদের জন্য রয়েছে ভীষণ শাস্তি। ওই ব্যক্তি ছাড়া যাকে বাধ্য করা হয় কুফরি করতে অথচ তার অন্তর থাকে ইমানে পরিতৃপ্ত। (সুরা নাহল: ১০৬)
৪. হারাম ও অপবিত্র খাবার গ্রহণ করা
আল্লাহর দেওয়া হালাল ও পবিত্র রিজিক গ্রহণ না করে সীমালঙ্ঘন করা অর্থাৎ হারাম ও অপবিত্র খাবার গ্রহণ করা আল্লাহ তাআলার ক্রোধের কারণ। আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি তোমাদেরকে যে রিজিক দান করেছি তা থেকে ভালগুলো খাও এবং এতে সীমালংঘন করো না। করলে তোমাদের ওপর আমার ক্রোধ পতিত হবে। আর যার ওপর আমার ক্রোধ পতিত হয় সে অবশ্যই ধ্বংস হয়। (সুরা তোয়াহা: ৮১)
৫. আল্লাহর দ্বীনের ধ্বংস চাওয়া
যে মুশরিক ও মুনাফিকরা চায়, আল্লাহ তাআলার দ্বীন ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাক, আল্লাহ তাআলা তাদের ওপর ক্রুদ্ধ হন। আল্লাহ তাআলা বলেন, নিশ্চয় আমি তোমাকে সুস্পষ্ট বিজয় দিয়েছি; যেন আল্লাহ তোমার পূর্বের ও পরের পাপ ক্ষমা করেন, তোমার ওপর তার নেয়ামত পূর্ণ করেন আর তোমাকে সরল পথের হেদায়াত দেন। তোমাকে প্রবল সাহায্য দান করেন। তিনিই মুমিনদের অন্তরে প্রশান্তি নাজিল করেছিলেন যেন তাদের ইমানের সাথে ইমান বৃদ্ধি পায়; আসমানসমূহ ও জমিনের বাহিনীগুলো আল্লাহরই; আর আল্লাহ হলেন সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। যেন তিনি মুমিন নারী ও পুরুষকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার নিচ দিয়ে নহরসমূহ প্রবাহিত; সেখানে তারা স্থায়ী হবে; আর তিনি তাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন; আর এটি ছিল আল্লাহর নিকট এক মহাসাফল্য। আর যেন তিনি শাস্তি দিতে পারেন মুনাফিক নারী-পুরুষ ও মুশরিক নারী-পুরুষকে যারা আল্লাহ সম্পর্কে মন্দ ধারণা পোষণ করে; তাদের ওপরই অনিষ্টতা আপতিত হয়। আল্লাহ তাদের ওপর ক্রুদ্ধ হয়েছেন এবং তাদেরকে লা‘নত করেছেন, আর তাদের জন্য প্রস্তুত করেছেন জাহান্নাম; এবং গন্তব্য হিসেবে তা কতইনা নিকৃষ্ট! (সুরা ফাতহ: ১-৬)
ওএফএফ/এএসএম