লাইফস্টাইল

জটিলতার ভিড়ে সহজ জীবনের পথ মিনিমালিজম

জটিলতার ভিড়ে সহজ জীবনের পথ মিনিমালিজম

দৈনন্দিন জীবনে প্রতিনিয়ত আমরা নিজেদের ঘিরে ফেলছি অগণিত জিনিসপত্র, দায়িত্ব আর চাহিদার মধ্যে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যস্ততা, চারপাশে অগোছালো পরিবেশ, মনের ভেতর অস্থিরতা সব মিলিয়ে জীবন যেন এক ক্লান্তিকর দৌড়। এই দৌড়ে কোথাও গিয়ে আমরা ভুলে যাই, সহজ জীবনই হতে পারে সবচেয়ে শান্তিময়। ঠিক সেই জায়গাতেই এসে দাঁড়ায় 'মিনিমালিজম' বা মিনিমাল জীবনধারা। কম জিনিসে বেশি সুখ খোঁজার এই দর্শন কেবল বস্তুগত নয়, মানসিকভাবেও এক ধরনের মুক্তি।

Advertisement

মিনিমালিজম মানে এই নয় যে আপনি দরিদ্র বা নিঃস্ব হয়ে জীবন কাটাবেন। বরং এটি এমন এক জীবনচর্চা যেখানে অপ্রয়োজনীয় জিনিসকে সরিয়ে রেখে প্রয়োজনীয় এবং প্রিয় জিনিসগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। একটা ঘর ভাবুন, যেখানে অগোছালো শেলফ নেই, অব্যবহৃত জামা-কাপড় নেই, দেয়ালে বাহুল্য ডেকোরেশন নেই তবু আছে প্রশান্তি, বিশ্রাম আর এক ধরণের পরিচ্ছন্ন সৌন্দর্য। ঠিক তেমনি এক মনের অবস্থাও সম্ভব, যদি আমরা কম জিনিস নিয়ে বাঁচতে শিখি।

কম জিনিস ব্যবহার মানেই কম ঝামেলা। অনেক সময় আমরা এমন সব জিনিস জমিয়ে রাখি যেগুলোর কোনো দরকারই নেই। যেমন পোশাক, বই, কিচেন আইটেম, পুরনো গ্যাজেট। এগুলো শুধু জায়গা দখল করে না, বরং আমাদের মনেও অকারণ ভার সৃষ্টি করে। যত বেশি জিনিস, তত বেশি দেখভাল, যত বেশি চিন্তা, তত কম ফোকাস। মিনিমালিজম এই অতিরিক্ত চাপ থেকে মুক্ত করে। যে মানুষটা প্রতিদিন ভাবতে হয় না কোন পোশাক পরবে, সে আরও সহজে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যে ঘরটা পরিষ্কার ও হালকা, সেখানে মানসিক ভারও থাকে হালকা।

এই জীবনধারা আমাদের আর্থিকভাবেও স্বস্তি দেয়। কারণ একবার যখন আপনি বুঝে ফেলবেন কী আপনার দরকার, আর কোনটি দরকার না, তখন অনর্থক খরচ কমে যাবে। আবেগতাড়িত হয়ে কেনাকাটা করার প্রবণতা কমে আসবে। বাজেটের মধ্যে থেকেও আপনি নিজের প্রয়োজন মেটাতে পারবেন এবং সঞ্চয়ও বাড়বে। এক্ষেত্রে অনেকে মাসিক বাজেটের তালিকা তৈরি করেন, প্রয়োজন ছাড়া নতুন কিছু কেনেন না, উপহার বা ডেকোরেশনেও সরলতা বজায় রাখেন।

Advertisement

ডিজিটাল জগতে মিনিমালিজমের আলাদা গুরুত্ব আছে। আজকের দিনে আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এতটাই ডুবে থাকি যে নিজের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলো উপভোগ করা হয় না। ডিজিটাল মিনিমালিজম তাই শুধু অ্যাপ ডিলিট করা নয়, বরং সেইসব কনটেন্ট, মানুষ বা গ্রুপ থেকে নিজেকে সরিয়ে আনা যা মানসিক শান্তি নষ্ট করে। সময় ও মনোযোগ ফিরিয়ে আনে নিজের জীবনের দিকে।

মিনিমাল জীবনধারা শুরু করা খুব কঠিন নয়। ছোট থেকেই শুরু করা যায়। প্রতিদিন ৫টি অপ্রয়োজনীয় জিনিস জীবন থেকে ফেলে দিন। জামা-কাপড় বাছাই করে প্রয়োজনীয়গুলো রাখুন, অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ বা সাবস্ক্রিপশন বাতিল করুন, প্রতিদিন ১৫ মিনিট নিজের সঙ্গে সময় কাটান। এভাবেই ধীরে ধীরে তৈরি হয় এক হালকা, গোছানো জীবন।

জীবনটা ছোট, কিন্তু আমরা একে কঠিন করে ফেলি। মিনিমালিজম আমাদের সেই জীবনটাকে সহজ করে, অর্থবহ করে, শান্তি খুঁজে পেতে সাহায্য করে। যেসব জিনিস সত্যিকারের প্রয়োজন নেই, সেগুলো থেকে নিজেকে মুক্ত করলেই বোঝা যায়, কম জিনিসে জীবন কতটা স্বাচ্ছন্দ্যময় হতে পারে। বাস্তবিক অর্থেই, মিনিমালিজম কেবল একটি জীবনধারা নয়, এটি এক ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি যেখানে কমে আসে জটিলতা, বয়ে আনে শান্তি।

এএমপি/জিকেএস

Advertisement