খাবারটা মুখে দিয়েই টেবিল থেকে ফোনটা তুলে নিয়ে মাকে ফোন করলাম। ‘কই মা, যা যা বলেছিলে সেভাবেই তো রান্নাটা করলাম, তাও মাছের স্বাদটা তোমার রান্নার মতো হলো না কেন!’
Advertisement
আপনার সঙ্গেও কি এমন হয়েছে যে, খুব সুস্বাদু একটি খাবার খেয়েও মনে হয়, ইশ মায়ের মতো হয়নি। অনেকে হয়তো বলতেও শুনেছেন যে, তোমার ডালটা ভালো হয়েছে, কিন্তু আমার মায়ের মতো হয়নি। অনেকে আবার নিজে চেষ্টা করে দেখেছেন মায়ের রেসিপি, কিন্তু কীসের যেন অভাব থেকে যায়। কী যেন নেই নেই লাগে। তবে কি সবার মা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ রাধুনী? তা তো সম্ভব নয়। তবে কীসের অভাবে স্বাদটা অপূর্ণ থেকে যায়?
মায়ের রান্না শুধু খাবার না, এটি আপনার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতাগুলোর একটি। কারণ খাবারের সঙ্গে আপনার পরিচয় ঘটেছে আপনার মায়ের হাতে রান্না খাবার দিয়েই। আপনার পছন্দের খাবারগুলোর স্বাদের মান তৈরি হয়েছে আপনার মায়ের রান্না করা একেকটি পদের মধ্যদিয়ে। তাই মায়ের রান্না করা সেই আমডালটা, কিংবা কষা মাছটার স্বাদ শুধু মসলা দিয়ে আনা সম্ভব নয়। সেই স্বাদ আপনাকে ওই সময়ের কথা মনে করিয়ে দেয়। ফিরিয়ে নিয়ে যায় শৈশবে। আপনি ফিরে যান উদ্বেগহীন সেই সময়ে, যেখানে একবেলা বকুনি খেয়েই পরের বেলা ‘ভাত খেতে আয়’ শুনে ছুটে গিয়ে দেখেছেন। মা ঠিকই আপনার পছন্দের তরকারিটা সামনে নিয়ে বসে আছেন। সেই তরকারির স্বাদ এক নস্টালজিয়া, ভালোবাসার মূর্ত রূপ। অনেক বছর পর দূরের কোন রান্নাঘরে সেই একই রেসিপিও তাই আর মায়ের মতো লাগে না।
তাই বলে কি আপনার ইচ্ছে করবে না মায়ের মতো খাবার রান্না করতে? অবশ্যই করবে। ঠিক যেমন ক্লান্ত দুপুরে অফিসে বসে মনে হয়, ছোটবেলায় বার্ষিক পরীক্ষার পর ভরদুপুরে কাঁথার নিচে গল্পের বই পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে যাওয়ার মতো সেই শান্তিটা যদি আরেকবার পেতাম! কিন্তু সেই ইচ্ছা কি আর পূরণ করা সম্ভব। মনের কোণে সুখের স্মৃতি হয়ে থেকে যায় সেসব অনুভূতি।
Advertisement
দুপুরবেলা খেলার মাঠ থেকে ঘরে টেনে এনে একটু বকা দিতে দিতে মা যখন মুখে ভাত তুলে খাইয়ে দিতেন, তখন কি আসলেই আমরা কেউ তরকারির স্বাদ আর মসলার কথা ভেবেছি? আসলেও কি তা মনে থাকার কথা? অথচ ওই পদটা দিয়ে ভাত খেতে গেলে আজ মনে হয়, ওই স্বাদটা আরেকবার পেলে প্রাণ জুড়িয়ে যেত। এই টান আসলে মায়ের প্রতি, তার ভালোবাসার প্রতি, তার ওপর নির্ভর করার সেই শান্তির প্রতি। এ কারণেই হাজার চেষ্টা করেও যেন মনে হয় ‘রান্নাটা ভালো হয়েছে, তবে মায়ের মতো হয়নি।’
মায়ের মতো আসলে কেউ হয় না, কিচ্ছু হয় না। তাই এই মা দিবসে মায়ের কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করুন সেসব শত-কোটি মুহূর্তের জন্য যা, আপনার জীবনকে গড়ে দিয়েছে। আর নিজ হাতে রান্না করুন আপনার মায়ের পছন্দের খাবারটি, যেন তিনি ভালোবেসে বলতে পারেন ‘আমার সন্তানের রান্না সেরা।’
এএমপি/জিকেএস/আরএমডি
Advertisement