দেশজুড়ে

আ’লীগ নেতার দখলে থাকা বিদ্যালয়ের জমির ধান কেটে নিলেন শিক্ষকরা

আ’লীগ নেতার দখলে থাকা বিদ্যালয়ের জমির ধান কেটে নিলেন শিক্ষকরা

গাইবান্ধা সদর উপজেলার মালিবাড়ী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতা মতিয়ার রহমানের দখলে থাকা মুর্শিদের বাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের জমির পাকা ধান কেটে নিয়েছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।

Advertisement

মঙ্গলবার (১৩ মে) মুর্শিদের বাজার এলাকায় অবস্থিত বিদ্যালয়টির পেছনের জমি থেকে এই ধান কেটে নেওয়া হয়। তবে জমির মালিকানা নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মতিয়ারসহ তার পরিবার।

বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের অভিযোগ, ২০০২ সালে এমপিও হওয়া বিদ্যালয়টির নামে স্থানীয় দুই ব্যক্তির দান করা ৮ শতাংশ জমি দখলে নেন মতিয়ার। গত ১৭ বছর ধরে জমিতে চাষাবাদ করে আসছেন তিনি। মতিয়ার আওয়ামী লীগের ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক হওয়ার সুবাদে প্রভাব খাটিয়ে জমিটি ভোগ দখল করে আসছিলেন।

তবে ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর ওই জমিতে বিদ্যালয়ের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া সত্ত্বেও জোরপূবর্ক ধান রোপণ করেন মতিয়ার। সর্বশেষ জমির মালিকানার বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করেন শিক্ষকরা। সে অনুযায়ী মঙ্গলবার সকালে স্থানীয় এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে আশপাশের শ্রমিকদের সহায়তায় ৭ শতক জমির ধান কেটে নেওয়ার দাবি করেন তারা।

Advertisement

তবে জোরপূর্বক জমির ধান কেটে নেওয়ার অভিযোগ করেছেন মতিয়ার রহমান ও তার বাবাসহ পরিবারের লোকজন।

মতিয়ার রহমান বলেন, জমিটি পূর্বপুরুষের আমল থেকেই ভোগ দখল করে আসছেন তারা। এ মৌসুমেও জমিতে ধান রোপণ করেন। কিন্তু সেই জমির পাকা ধান আশপাশের ভাড়াটেসহ নিজেদের লোকজন নিয়ে এসে কেটে নিয়ে যান শিক্ষকরা। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, এ কারণে প্রভাব খাটিয়ে তাদের জমির ধান কেটে নিয়েছেন। এর আগে জমির মালিকানার বিষয়ে একাধিকবার সালিশ-বৈঠকে কাগজ-পত্র যাচাই-বাছাই করা হলেও কোনো সমাধান মেলেনি বলে জানান তিনি।

মতিয়ার রহমানের বাবা মঞ্জু মিয়া বলেন, সেই আমল থেকে জমিতে ধানসহ বিভিন্ন চাষাবাদ করে আসছি। কিন্তু হঠাৎ করে সেই জমির ধান কেটে নিয়ে গেছে শিক্ষকরা। স্কুলের নামে যে জমি দান করা হয়েছে সে জমি আলাদা রয়েছে। কাগজপত্র দেখে দাগ, খতিয়ান অনুযায়ী জমিটি নির্ধারণ না করে জোরপূর্বক তাদের জমির ধান কাটা হয়েছে।

এ বিষয়ে মুর্শিদের বাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক এ এস এম মুসলিম আলী বুধবার দুপুরে বলেন, ৮ শতাংশ জমি বিদ্যালয়ের নামে থাকায় আমরা নিয়মিত খাজনা-খারিজ পরিশোধ করে আসছি। কিন্তু মতিয়ার রহমান ক্ষমতার দাপটে জমিটি দখল করে আসছেন। এর আগে জমিটি অন্যের কাছে টাকার বিনিময়ে লিজ (বন্দক) রাখেন। মতিয়ারকে বারবার বলা হলেও তিনি জমির দখল ছাড়েননি। এলাকাবাসীর সহায়তায় দীর্ঘদিন পর হলেও স্কুলের জমির ধান কেটে নিয়েছি। ধানগুলো বিক্রির টাকা বিদ্যালয়ের উন্নয়নে ব্যয় করা হবে।

Advertisement

তিনি অভিযোগ করে বলেন, মতিয়ারের বড় ভাই লুৎফর রহমানের ছেলে শাকিল মিয়া বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী পদে কর্মরত। কিন্তু তিনি নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসেন না।

সহকারী শিক্ষক নুরুন্নবী সরকার বলেন, বিদ্যালয়টির নামে মোট ৬৭ শতাংশ জমি রয়েছে। এরমধ্যে ২৬ শতাংশ জমি বিদ্যালয়ের নামে দান করেন স্থানীয় এলাকার আব্দুল মুজিদ সরকার ও তার ভাই গোলজার রহমান। তারমধ্যে টিনশেড ভবনের পেছনে ৮ শতাংশ জমিটি নিজেদের দাবি করে দখলে রাখেন মতিয়ার। গত ৫ আগস্টের পর জমিটি দখলে নিয়ে ধান রোপণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। কিন্তু শুক্রবার-শনিবার স্কুল বন্ধের সুযোগে চারা রোপণ করেন তিনি। পরে আমরা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মহোদয়কে বিদ্যালয়ের জমির সমস্ত কাগজ-পত্র দেখিয়েছি। আমরা স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারী সবার উপস্থিতিতে জমির ধান কেটে নিয়ে আসি। পরে মাড়াই শেষে ধানগুলো বিক্রি করা হয়েছে।

এ এইচ শামীম/এফএ/জেআইএম