মালয়েশিয়ায় জোরপূর্বক শ্রমের শিকার কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। বুধবার (১৪ মে) স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় মালয়েশিয়ার নেগরি সিম্বিলানের মেডিসিরাম এসডিএন বিএইচডিতে জোরপূর্বক শ্রমের শিকার বাংলাদেশি কর্মীদের সাথে আলোচনায় বসেন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। এ সময় কর্মীরা তাদের দীর্ঘদিনের সমস্যা তুলে ধরলে সমাধানের আশ্বাস দেন উপদেষ্টা।
Advertisement
এদিকে বন্ধ শ্রমবাজার নিয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নিতে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
মঙ্গলবার (১৩ মে) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তিনি কুয়ালালামপুরে পৌঁছান। এ সময় কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান।
সিন্ডিকেট মুক্ত বন্ধ শ্রমবাজার উন্মুক্ত করতে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে প্রবাসীদের মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান। ছবি: সংগৃহীত
Advertisement
সফরসূচি অনুযায়ী বুধবার (১৪ মে) তিনি নেগরি সিম্বিলানের মেডিসিরাম এসডিএন বিএইচডিতে জোরপূর্বক শ্রমের শিকার বাংলাদেশি কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
১৫ মে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুশন ইসমাইল এবং মানবসম্পদমন্ত্রী স্টিভেন সিম চি কেওংয়ের সঙ্গে শ্রমবাজার ইস্যুতে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন তিনি।
মালয়েশিয়া সফর প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, মালয়েশিয়া সফর হচ্ছে শ্রমবাজার নিয়ে। প্রবাসীদের এখানে অনেক সমস্যা আছে, অনেকে অনিয়মিত হয়ে গেছে, অনেকে কাজ পাচ্ছেন না। আমাদের প্রবাসী ভাইয়েরা হচ্ছেন রেমিট্যান্সযোদ্ধা, তারা অনেকে অনেক কষ্টে আছেন, যতটা পারা যায় আমাদের দেশের স্বার্থ রক্ষা।
সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি কোনো কথা দিতে চাই না, আমি চাই আলোচনাটা বাংলাদেশের মানুষের পক্ষে থাক।
Advertisement
এদিকে মালয়েশিয়া-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক বিশেষ বৈঠকে কর্মী নিয়োগে সিন্ডিকেট বন্ধ করার বিষয়ে আলোচনা করতে বলেছেন মালয়েশিয়ার প্রাক্তন এমপি চার্লস সান্তিয়াগো।
ক্লাং-এর প্রাক্তন এমপি চার্লস সান্তিয়াগো বলেছেন, বর্তমান ব্যবস্থা এবং প্রক্রিয়াগুলো সংস্কার করতে হবে, বিশেষ করে যেভাবে সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের কাজ করার জন্য ২০ হাজার রিঙ্গিত পর্যন্ত ফি আদায় করে।
এমপি বলেন, বন্ধ দরজা পুনরায় খোলার জন্য তাড়াহুড়ো করা উচিত নয়। প্রথমে ঘরটি ঠিক করুন। প্রকৃত সংস্কার ছাড়া মালয়েশিয়া-বাংলাদেশ শ্রম বাজার পুনরায় খোলার বিরুদ্ধে তিনি সতর্ক করেছেন।
এদিকে সিন্ডিকেটমুক্ত বন্ধ শ্রমবাজার উন্মুক্ত করতে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে মানববন্ধন করেছেন প্রবাসীরা। শেষে তারা হাইকমিশনারের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার বরাবরে স্মারকলিপি দেন।
সিন্ডিকেট মুক্ত বন্ধ শ্রমবাজার উন্মুক্ত করতে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে প্রবাসীদের মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান। ছবি: সংগৃহীত
প্রসঙ্গত, প্রায় এক বছর ধরে কর্মী যাওয়া বন্ধ মালয়েশিয়ায়। গত বছরের ৩১ মে’র পর থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দেয় দেশটি। এরপর কর্মী যাওয়ার বিষয়ে দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক আর হয়নি। তবে আলোচনা চলেছে নানা উপায়ে।
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে আবারও এখন আলোচনা তুঙ্গে। জনশক্তি রফতানিকারকরা দুইভাগে ভাগ হয়ে আলাদা কর্মসূচি পালন করে বাজার খুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছে।
এর আগে ২০০৮ সালে বন্ধ হয় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। আট বছর পর তা চালু হয়েছিল ২০১৬ সালে। এরপর দুর্নীতির অভিযোগে ফের ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়া বন্ধ করে দেয় মালয়েশিয়া।
২০২১ সালের ১৮ ডিসেম্বর নতুন সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে সেই বাজার খুলতে সময় লেগেছিল তিন বছর। ২০২২ সালের আগস্টে দেশটিতে আবারও বাংলাদেশি কর্মী যাওয়া শুরু হয়। এরপর গত বছরের ১ জুন থেকে কর্মী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় দেশটি।
এমআরএম/এএসএম