দেশজুড়ে

অন্যের বই ধার নিয়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় জয়, টাকার চিন্তায় বাবা-মা

অন্যের বই ধার নিয়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় জয়, টাকার চিন্তায় বাবা-মা

এক বেলা খেয়েছে, তো অন্য বেলা উপোস থেকে অন্যের বই ধার নিয়ে পড়ালেখা করেছে। এতকিছুর পরও মেধাবী তাহমিনা আক্তার আজ এলাকাবাসীর গর্ব। দরিদ্র পরিবারের তাহমিনা এবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছে। তবে খবরটি শুনে আনন্দের পরিবর্তে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তার বাবা-মা।

Advertisement

তাহমিনা আক্তার নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার হরণী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের জোডখালী গ্রামের কামাল উদ্দিন ও রাবেয়া খাতুন দম্পতির মেয়ে। পাঁচ ছেলে-মেয়ের বাবা কামাল উদ্দিন একজন দরিদ্র দিনমজুর, আর মা রাবেয়া খাতুন গৃহিণী।

নদীভাঙনে জর্জরিত আর চরম দারিদ্রতার কষাঘাতে বেড়ে ওঠা তাহমিনা আক্তার এবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় স্থান পাওয়ার খবরে বাড়িতে আনন্দের পরিবর্তে দুশ্চিন্তার ছাপ পড়েছে। মেয়েকে ভর্তি এবং ঢাকায় থাকার খরচের চিন্তায় এখন নাওয়া-খাওয়া বন্ধ কামাল ও রাবেয়া দম্পতির।

তাহমিনা আক্তার বলেন, অন্যের বই ধার করে নিজে নিজে চেষ্টা করে এতদূর পর্যন্ত পৌঁছেছি। বাকিটা আল্লাহ সহায় হলে পড়ালেখা শেষ করে দেশের জন্য কিছু করতে চাই। আমি অসহায় পরিবারের সন্তান, কিন্তু আমার ইচ্ছা কখনো অসহায় হতে পারে না। সবার দোয়া চাই, আমি যেন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারি।

Advertisement

এর আগে হাতিয়া জনকল্যাণ শিক্ষা ট্রাস্ট হাইস্কুল থেকে জিপিএ ৪.৮৩ পেয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি এবং মোহাম্মদ আলী কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন তাহমিনা। কোচিংয়ের সামর্থ্য না থাকলেও প্রবল আত্মবিশ্বাস, অধ্যবসায়ের নিজেকে প্রস্তুত করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। এতেই তিনি মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছেন।

তাহমিনার বাবা কামাল উদ্দিন বলেন, দিনমজুর হিসেবে যখন যে কাজ পাই তাই করে কোনো রকম সংসার চালাই। মেয়ের উচ্চশিক্ষার খরচ দেওয়ার মতো টাকা আমার কাছে নেই। আমি বাবা হিসেবে মেয়ের মেধার মূল্য দিতে অপারগ। দেশবাসীসহ সমাজের শিক্ষানুরাগীদের সহায়তা কামনা করছি।

তাহমিনার মা রাবেয়া খাতুন বলেন, সুখবর শুনে সবাই হাসে, আর আমরা কাঁদছি। গরিবের মেয়ে হিসেবে তাহমিনা আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছে। সে অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করেছে। কিন্তু সামনের দিনগুলো নিয়ে আমরা খুবই দুশ্চিন্তায় আছি।

স্থানীয় সমাজসেবক আবদুল করিম বলেন, তাহমিনা আক্তার অত্যন্ত মেধাবী। তবে সে দরিদ্র পরিবারের সন্তান, শুধু এ কারণে যাতে তাকে ঝরে পড়তে না হয় আমরা সেটাই আশা করি। তার মতো মেধাবীর মূল্যায়ন আমাদের করতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে এ দেশে মেধাবীর জন্ম হবে না। সবাইকে এ পরিবারে পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানাই।

Advertisement

মোহাম্মদ আলী কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আজমির হোসেন বলেন, তাহমিনা আক্তার শুধু আমাদের কলেজ নয় পুরো এলাকার গর্ব। সে প্রমাণ করেছে কোচিং আর টাকা থাকলেই মেধার বিকাশ হবে এমনটি নয়। সে শুধু মেধাবীই নয়, অত্যন্ত বিনয়ী ও পরিশ্রমী একজন শিক্ষার্থী। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ায় আমরা খুবই আনন্দিত। তাকে সহযোগিতা করা এলাকাবাসী, সমাজ ও বিত্তবানদের নৈতিক দায়িত্ব।

ইকবাল হোসেন মজনু/এফএ/এমএস