মতামত

মরে গিয়ে কি বাঁচা যায়?

মরে গিয়ে কি বাঁচা যায়?

মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেছেন র‌্যাব কর্মকর্তা পলাশ সাহা। মরদেহের পাশেই পড়ে ছিল একটি চিরকুট। সেখানে লিখে তিনি নিজের মৃত্যুর দায় নিয়েছেন। সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকেই বলছেন পলাশ সাহা আসলে জীবন থেকে পালিয়ে বাঁচতে চেয়েছেন। সংক্ষিপ্ত চিরকুটটিতে পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশ্যে যা লিখেছেন, তাতে বোঝা যাচ্ছে তিনি মূলত পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে এই কাজ করেছেন।

Advertisement

এই মর্মান্তিক ঘটনার জন্য কে বা কারা দায়ী, কে কত বেশি দায়ী এই আলোচনায় আপাতত যেতে চাইছি না। তবে একজন প্রতিষ্ঠিত মানুষ কেন এই ভয়াবহ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এটাই আলোচনার দাবি রাখে। সম্পর্কের টানাপড়েন এমন একটি মানসিক চাপ, যা মানুষ মেনে নিতে পারেন না। আবার কাউকে সরাসরি দায়ীও করতে পারেন না এবং সমাজের সামনে মুখ খুলতে পারেন না।

এই কষ্ট বয়ে বেড়াতে বেড়াতে ব্যক্তি এতোটাই ক্লান্ত হয়ে পড়েন যে, একসময় নিজেই সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এটা নিজেকে একধরনের শাস্তি দেয়া। সেই সাথে মৃত ব্যক্তি হয়তো মনেকরেন দ্বন্দ্বের সাথে জড়িত চরিত্রগুলো যদি একটুও শিক্ষা পায়। এই আত্মহত্যার মাধ্যমে পলাশ সাহা পরিবারের প্রতি তার ক্রোধ প্রকাশ করেছেন।

যখন রোগীদের মানসিক, শারীরিক ও আবেগজনিত অসুস্থতা চিকিৎসা করা হয়, তখন সেইসব সুইসাইডাল রোগীরা আর মারা যেতে চান না। অনেকেই ফিরে এসেছেন মৃত্যুর মুখ থেকে। ফিরে এসে তারা বলেছেন তারা জীবন উপভোগ করতে চান। তারা স্বীকার করেছেন বিশেষ একটা অবস্থায় তারা মারা যেতে চেয়েছিলেন। তাহলে আমাদের সবার দায়িত্বটা হচ্ছে মানুষের ঐ মুহূর্তটাকে ঠেকানো।

Advertisement

মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, আত্মহত্যার চিন্তা (Suicidal Ideation) থেকে প্রকৃত আত্মহত্যা পর্যন্ত একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া রয়েছে। আত্মহত্যা গবেষণার পথিকৃৎ, ড. এডউইন শ্নেইডম্যান অবশ্য মনে করেন, "আত্মহত্যা মানুষের মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তির একটি বিকৃত প্রচেষ্টা।"

শুধু তো পলাশ সাহা নন, বিভিন্ন কারণে দেশে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। গত এপ্রিলে রাজশাহী জেলাতেই আত্মহত্যা করেছেন ৩৫ জন। তবে এর বাইরেও আরও অনেকে রয়েছেন, যেগুলো পুলিশের তালিকায় নাই। রিপোর্টটা পড়ার পর থেকেই বারবার ভাবছি এতগুলো বিভিন্ন বয়সের মানুষ এক মাসের মধ্যে জীবনের পরিবর্তে কেন মৃত্যুকে বেছে নিলেন? আমাদের মধ্যে যারা আত্মহত্যা করছেন, তারা আসলে নিজে বাঁচার উপায় হিসেবেই স্বেচ্ছামৃত্যুকে বেছে নেন। বিষণ্ণতা থেকে যখন নেতিবাচক আবেগ তৈরি হয়, আশা চলে যায়, যখন অবলম্বন হিসেবে অন্য কোন উপায় খুঁজে পায় না মানুষ- তখন একমাত্র উপায় হয় নিজের জীবন শেষ করে দেয়া।

অনেক মানুষ এখনো মনে করেন সুইসাইড করাটা স্বার্থপরের মত কাজ। কিন্তু কেন মনে করেন? অনেক রোগী নিজেরাই ডাক্তারকে বলেছেন যে, তারা যখন আত্মহত্যা করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তখন তারা তাদের প্রিয়জনদের কথা ভাবেননি। কারণ তখন তাদের কাছে নিজেদের ব্যথাটাই খুব বেশি ছিল। মনে হতেই পারে এটা খুব স্বার্থপরের মতো আচরণ। মানুষ আত্মহত্যা করে শুধু নিজে পালিয়ে বাঁচার জন্য, অন্য কারো জন্য মরে যাওয়াটা সুইসাইড নয়। সে আসলে নিজে বাঁচার উপায় হিসেবেই মৃত্যুকে বেছে নেয়।

সমাজবিজ্ঞানী ও নৃতত্ত্ববিদরা মনে করেন আত্মহত্যা একটি সামাজিক বিষয় বা ফেনোমেনা। প্রতিটি আত্মহত্যার ঘটনা সেদেশেরই সমাজ, অর্থনীতি, সংস্কৃতি এবং মানুষের মনো-সামাজিক অবস্থার প্রতিচ্ছবি। রাজশাহীর আত্মহত্যার তালিকায় যারা আছেন, তাদের মধ্যে সবচাইতে আলোচিত হচ্ছে পয়লা বৈশাখের দিন নন্দনগাছি স্টেশনে ষাটোর্ধ্ব রুহুল আমিনের আত্মহত্যার ঘটনা। তিনি খুব ঠান্ডা মাথায় ট্রেনের নিচে শুয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন। সেই ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

Advertisement

প্রথমে ভিন্ন কারণের কথা জানা গেলেও পরে পরিবার থেকে জানানো হয়, ঋণের বোঝা বইতে না পেরে তার এমন সিদ্ধান্ত। পিঁয়াজ চাষের জন্য তিনি ঋণ নিয়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন এনজিও, মহাজন ও কিছু ব্যাংক এভাবেই কায়দা করে মানুষকে ঋণ দেয়। এবং একসময় ঋণভারে জর্জরিত করে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করে।

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ ডা. শংকর কে বিশ্বাস বলেছেন, ‘বর্তমানে দেশে প্রতি লাখে চার জন আত্মহত্যা করছেন। তাদের মধ্যে ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সীই বেশি। এছাড়াও প্রাপ্তবয়স্করা আত্মহত্যা করছেন ঋণ পরিশোধ না করতে পেরে কিংবা সাংসারিক ঝামেলায়। তবে যারা বেঁচে যাচ্ছেন তারা পরবর্তী সময়ে ফলোআপ চিকিৎসা না নেওয়ায় ঝুঁকি কাটছে না।’

লেখা শেষ করে প্রেসে দেয়ার সময় (১৩ মে) পত্রিকায় দেখলাম নটরডেম কলেজের এক ছাত্র আত্মহত্যা করেছে। প্রায় প্রতিদিন পত্রপত্রিকায় আত্মহত্যার খবর আসছে। সব খবর আমরা পড়িও না। যে মানুষটি চলে যায়, সে চলে যায়। তার চলে যাওয়ার কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকে তার পরিবার। মনোবিজ্ঞানী ক্যাম্পবেল ওয়াট বলেছেন, ‘পরিবারের একজন সদস্যের মৃত্যু তার পরিবারের উপর ভয়াবহ প্রভাব রাখে। কারণ মানুষটির এই না বলে চলে যাওয়াটা, সেই মানুষটির একার বিষয় নয়। মৃত মানুষের পরিবার-পরিজন সারাজীবন একটা উত্তরবিহীন প্রশ্ন, অতৃপ্ত মন এবং গভীর শূন্যতা নিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দেয়।’

একজন মানুষ ঠিক কী কারণে জীবন থেকে পালিয়ে যেতে চান, এটা নিয়ে নির্দিষ্ট কোনো উপসংহারে পৌঁছানো কঠিন। বিশিষ্ট রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী সাদি মহম্মদ তকিউল্লাহ ৬৬ বছর বয়সে যখন স্বেচ্ছামৃত্যুকে বেছে নিয়েছিলেন, সমাজের কাছে তা এক দারুণ বিষাদময় ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আত্মহত্যা নিয়ে মানুষের মনে অনেক প্রশ্ন, ভুল ব্যাখ্যা, ভয় এবং কুসংস্কার কাজ করে। সাদি মহম্মদের আত্মহনন নিয়েও বিভিন্ন আলোচনা হয়েছে।

এই বয়সে তিনি কেন চলে গেলেন? এরজন্য দায়ী কি তাঁর একাকিত্ব, অতীতের ট্রমা, মায়ের উপর নির্ভরতা, বন্ধু-স্বজনদের পাশে না থাকা ইত্যাদি। প্রতিটি আত্মহত্যার পেছনে যিনি আত্মহত্যা করেন, তার নিজস্ব কিছু কারণ থাকে। প্রতিটি মানুষ আলাদা, তাদের আবেগ-অনুভূতিও আলাদা। একজন যেভাবে পৃথিবীকে দেখছেন, আরেকজন সেই দৃষ্টিতে পৃথিবীকে দেখবেন না, এটাই স্বাভাবিক।

বিভিন্ন সময়ে ডাক্তাররা কারণ বের করার চেষ্টা করেন কিন্তু তারাও স্বীকার করেছেন যে একজন মানুষ যতোক্ষণ পর্যন্ত নিজের মানসিক অবস্থার কথা খুলে না বলেন, ততোক্ষণ তার মনের মধ্যে ঠিক কী চলছে এটা বোঝা কঠিন। তেমনি কেন সে আত্মহত্যা করলো এটা জানাও প্রায় অসম্ভব।

স্কটিশ দার্শনিক ডেভিড হিউম ১৭ শতকে তাঁর ‘আত্মহত্যা’ বিষয়ক প্রবন্ধে লিখেছিলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি কোনো মানুষ কখনোই তার জীবনকে ছুড়ে ফেলে দিতে পারে না, যতোক্ষণ পর্যন্ত সেই জীবনটা তার কাছে মূল্যবান থাকে। অনেককিছুই একজন ব্যক্তির বোঝার ক্ষমতা, অভিজ্ঞতা এবং পরিবেশকে নাড়া দিতে পারে। তাই কেন সে নিজেই নিজের জীবন কেড়ে নেয়, তা আমরা কোনদিনও জানতে পারবো না। আমরা জানতে পারবো না একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত বিচার-বিবেচনা ও যুক্তি ঠিক সুইসাইড করার আগের মুহূর্তে কী থাকে।”

আজকের দিনে বিভিন্ন ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর, আমরা অনুভব করি বিষাদগ্রস্ত মানুষের পাশে থাকা দরকার, ট্রমা, ডিপ্রেশনের মধ্যে থাকা মানুষ ও সুইসাইডাল পেশেন্টের দ্রুত ও যথাযথ ট্রিটমেন্ট দরকার এবং ডিপ্রেশনের রোগীকে বুঝিয়ে বা কৌশল করে কাউন্সেলিং করানো উচিত। তবে অনেক পরিবার বুঝতেই পারে না বা বুঝতে চায় না বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে কেন মানুষ বিষণ্ণ হয়ে পড়ে। জানেনা সিচুয়েশনাল অথবা ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশন এর কথা, জানেনা বাইপোলার, সিজোফ্রেনিয়া ও বর্ডারলাইন ডিজিজ কী?

মনোচিকিৎসক ক্যাম্পবেল ওয়াট বলেছেন, ‘এটা আমাদের নৈতিক ও পেশাগত দায়িত্ব যে একজন মানুষকে তার আত্মহত্যা করার ইচ্ছার হাত থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা। আমরা যদি সফল হই, যদি ব্যক্তির কারণগুলোকে মিটিয়ে ফেলা সম্ভব হয়, তাহলে সেটাই হবে বড় উপহার।’ মনোচিকিৎসকরা এও বলেন তারা দেখেছেন যখন রোগীদের মানসিক, শারীরিক ও আবেগজনিত অসুস্থতা চিকিৎসা করা হয়, তখন সেইসব সুইসাইডাল রোগীরা আর মারা যেতে চান না। অনেকেই ফিরে এসেছেন মৃত্যুর মুখ থেকে। ফিরে এসে তারা বলেছেন তারা জীবন উপভোগ করতে চান। তারা স্বীকার করেছেন বিশেষ একটা অবস্থায় তারা মারা যেতে চেয়েছিলেন। তাহলে আমাদের সবার দায়িত্বটা হচ্ছে মানুষের ঐ মুহূর্তটাকে ঠেকানো, তার পাশে দাঁড়ানো।

মনোবিজ্ঞানীরা বলেন আত্মহত্যা দু’ধরনের হয় পরিকল্পিত এবং আবেগতাড়িত হয়ে বা কোনো ঘটনার প্রেক্ষিতে। সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে চরম বিষণ্ণতা বা ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশন থেকে। অধিকাংশ মানুষ খুব একটা পরিকল্পনা করে আত্মহত্যা করেন না। আমরা মানসিক স্বাস্থ্যকে বারবার অবহেলা করি বলেই স্বেচ্ছামৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটছে। মানুষ নিজেকে ভালোবাসে, জীবনকে ভালোবাসে এবং সে শত প্রতিকূল পরিবেশেও বেঁচে থাকতে চায়। তাই সেই মানুষ যখন নিজেই “মৃত্যুকে বরণ করে” নেয়ার জন্য তৈরি হয়, তখন ধরেই নিতে হবে সে মানসিকভাবে অসুস্থ বা ভয়াবহ রকমের ডিপ্রেশনের শিকার।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনেক বছর আগেই ‘স্বাস্থ্য’এর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছে ‘কেবল নীরোগ থাকাটাই স্বাস্থ্য নয় বরং শারীরিক, মানসিক, আত্মিক ও সামাজিকভাবে ভালো থাকার নামই স্বাস্থ্য।’ এদেশে শারীরিক রোগকে স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখলেও মানসিক সমস্যাকে এখনও ঠাট্টা, বিদ্রুপ বা হালকা বিষয় হিসেবে দেখে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে ২০৩০ সাল নাগাদ পৃথিবীতে রোগের এক নম্বর কারণ হবে বিষণ্নতা। আমরা যতো বেশি একক জীবন, প্রতিযোগিতামূলক সমাজ ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও স্বার্থপরতার দিকে ঝুঁকছি, ততোই আমরা অস্থির হয়ে উঠছি।

এদিকে বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, ২০২৪ সালে দেশে ৩১০ জন আত্মহত্যা করেন। সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছে কিশোর-কিশোরী, যা মোট আত্মহত্যার ৬৫ দশমিক ৭ শতাংশ। জরিপ অনুযায়ী, মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার সংখ্যা ৪৬ শতাংশের বেশি। ৪৯ দশমিক ৪ শতাংশ স্কুলশিক্ষার্থী ২০২৪ সালে আত্মহত্যা করেছে। অনিয়ন্ত্রিত আবেগ বা অভিমান ও তুলনামূলক দুর্বল মানসিক স্থিতিশীলতার কারণে তারা সহজে হতাশায় ভোগে।

আমাদের শিশু-কিশোর ও তরুণদের দের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি হচ্ছে এদের বলার মতো কোনো কথা নেই, কোনো গল্প নেই। “পৃথিবীতে সকল অমঙ্গলের কারণ হল এটাই যে, মানুষ তাদের মনের কথা বলতে পারে না”, কথাটি বলেছেন মনোবিদ কার্ল গুস্তাভ জুং। আমরাও এখন এমন জাতিতে পরিণত হয়েছি যারা কথা বলার জন্য ভাষা জানে, গণিত শিখে, পদার্থ বিজ্ঞান শিখে, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শিখে, কিন্তু তাদের বলার মত কোন কথা নাই, বলার মত কোন গল্প নাই। আছে শুধু ইন্দ্রিয় উপভোগ, সম্পদ আহরণ বা অভাব অভিযোগ।

পরীক্ষায় ভাল ফল করতে না পেরে প্রতিবছর অনেক ছাত্রছাত্রী আত্মহত্যা করে। শিশু-কিশোরদের চলে যাওয়ার পেছনে প্রেম, ভালোবাসা, অভাব, যৌন হয়রানিসহ বিভিন্ন কারণ থাকলেও, মূল কারণ হচ্ছে চাপ, বিষণ্ণতা এবং হতাশা, যা তারা বহন করতে পারেনি। অনেক অভিভাবক মনে করেন সন্তানরা বেশি বেশি অভিমানী হয়ে উঠেছে। এরা শাসন করা একদম পছন্দ করে না। কেউ শাসন করলেই বেয়াদবি করে, উল্টাপাল্টা কথা বলে। এবং একপর্যায়ে আত্মহত্যা করে বসে।

অভিভাবকদের অনেকেই মনে করছেন সন্তানরা বাড়াবাড়ি করছে। কিন্তু অভিভাবকরা কি ভাবছেন, তারা শিশুর উপর কতটা চাপ দিচ্ছেন? সন্তানকে কীভাবে প্রতিযোগিতার বাজারে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন? সন্তানকে একক পরিবারে বড় করে স্বার্থপর ও একাকী করে তুলছেন। সন্তানদের পাশে যখন, যেভাবে থাকা দরকার, আমরা পারছি না সেভাবে থাকতে।

উনিশ শতকের খ্যাতিমান সমাজবিজ্ঞানী এমিল ড্যুরখেইমের তত্ত্ব অনুযায়ী আত্মহত্যা একটি সামাজিক ঘটনা। এর কারণ নিহিত থাকে সমাজের মধ্যেই। এক্ষেত্রে পরিবার ও পারিপার্শ্বিক সমাজের সঙ্গে সন্তানের বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়ছে। তাদের প্রতি যত্ন-ভালোবাসা কমে যাচ্ছে, শাস্তির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। মনোবিজ্ঞানের চিকিৎসক সায়্যেদুল ইসলাম বলেছেন, সফলতা উদ্যাপন করা হলেও ব্যর্থতাকে সামাল দেওয়ার বিষয়টি সমাজে শেখানো হয় না।

পাশের মানুষটির দিকে তাকানোর সময় নেই আমাদের, মতবিনিময়ের প্রয়োজনীয়তা নেই, সম্প্রীতির হাত বাড়ানোও হয় না। আমরা জানি না পরিবারের বা বন্ধুদের মধ্যে কেউ যদি মানসিক সমস্যায় ভোগেন, তাহলে কীভাবে তার পাশে দাঁড়াতে হবে? আমাদের কাছে মানসিক সমস্যা মানে পাগল হয়ে যাওয়া। অধিকাংশ মানুষ মনে করেন মানসিক চিকিৎসকের কাছে যাওয়া মানে পাগলের ডাক্তারের কাছে যাওয়া।

প্রিয়জনকে স্বেচ্ছামৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে হলে কারো বিষণ্ণ সময়ে তার পাশে গিয়ে দাঁড়াতে হবে, চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন,অনেক সময়েই আত্মহত্যা করতে যাওয়ার আগে ব্যক্তি একটা শেষ সুযোগ তৈরির চেষ্টা করেন। হয়তো একবার কারও সঙ্গে কথা বলার কথা ভাবেন। সেই সুযোগটা যদি পেয়ে যান, তাহলে হয়তো সেই ব্যক্তি বেঁচেও যেতে পারেন।

১৩ মে, ২০২৫

লেখক : যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও কলাম লেখক।

এইচআর/এএসএম