চলতি অর্থবছরে বোরো ধানের আশানুরূপ ফলন হয়েছে। তারপরও শেরপুরে হতাশার ছায়া কৃষকের মুখে। ধান পেকে যাওয়ায় সবাই কাটা শুরু করেছেন। এতে দেখা দিয়েছে তীব্র শ্রমিক সংকট। এক মণ ধানেও মিলছে না একজন শ্রমিক। ফলন ভালো হলেও মজুরির কারণে লোকসান গুনতে হতে পারে বলছেন কৃষকরা। টানা বৃষ্টি শুরু হলে ফসল ঘরে তুলতে ভোগান্তিতে পড়তে হবে, এমন আশঙ্কাও করছেন অনেকে।
Advertisement
কদিন আগেও শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ছিল ৬০০-৭০০ টাকা। বর্তমানে মজুরি বেড়ে হয়েছে ৯০০-১০০০ টাকা। এরসঙ্গে যুক্ত রয়েছে দুইবেলা খাবার, চা-নাশতা ও এককেজি চাল। আবার একটু বৃষ্টির দেখা দিলে মজুরি হাজার টাকাতেও মেলে না। অথচ তার বিপরীতে একমণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৮৫০-৯০০ টাকায়।
শেরপুর সদর উপজেলার কুমরী মুদিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সারোয়ার কবির। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবার ফলন ভালো হলেও শ্রমিক মজুরি বেশি হওয়ায় লোকসান হতে পারে। ধান চাষে আমাদের উদ্বুদ্ধ করতে একটা ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে হবে। তা নাহলে অনেকেই নিজের প্রয়োজনের বেশি ধান চাষ করবেন না।’
ঝিনাইগাতী উপজেলার মরিয়মনগরের বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘১০০ শতক জমিতে ধান চাষ করেছি। শ্রমিকের মজুরি এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। কিন্তু ধানের দাম মণ ৮০০-৯০০ টাকা।’
Advertisement
ঝিনাইগাতী উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন জানান, এবার ১৪ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষাবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তা অর্জন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। উপজেলার চারদিকে ধান পেকে আসছে। নিম্ন এলাকায় ধান কাটা শুরু হয়েছে।
শ্রমিক সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘একযোগে মাঠে ধান পেকে যাওয়ায় সংকট দেখা দিয়েছে। সব কৃষক ক্ষেত থেকে ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত থাকায় শ্রমিকদের কদর বেড়েছে। তারা নিজেদের ইচ্ছামতো দাম হাঁকাচ্ছেন। তবে এ সংকট দ্রুত কেটে যাবে।
শেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন জাগো নিউজকে জানান, জেলায় এবছর ৯১ হাজার ৯৪৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৭ হাজার ৪৫৭ মেট্রিক টন। এখন পর্যন্ত ৭০ শতাংশ ধান কর্তন করা হয়েছে।
দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ধানের দামের তুলনায় শ্রমিকের মজুরি কিছুটা বেশি। আমরা শিগগির কৃষকের কাছ থেকে বোরো ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু করবো। তখন কৃষক সরকারি রেট ১৪০০ টাকা মণ দাম পাবেন। উপপরিচালক মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, শেরপুরে কম্বাইন হারভেস্ট মেশিন পর্যাপ্ত নেই। যেসব এলাকায় এই মেশিন আছে, সেখানে মজুরি অনেকটা কম। কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে এক একর জমি কাটতে খরচ হয় সাত হাজার টাকা। কিন্তু শ্রমিকের মাধ্যমে এক একর জমি কাটতে খরচ হয় প্রায় ১৭ হাজার টাকা।
Advertisement
এসআর/জিকেএস