আন্তর্জাতিক

ট্রাম্পের শুল্ক হুমকিতে বিপাকে বলিউড, বিদেশি বাজার হারানোর শঙ্কা

ট্রাম্পের শুল্ক হুমকিতে বিপাকে বলিউড, বিদেশি বাজার হারানোর শঙ্কা

ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্প বর্তমানে একাধিক সংকটের সম্মুখীন। দেশীয় বাজারে ফ্লপের পর ফ্লপ, প্রেক্ষাগৃহে দর্শকশূন্যতা, আর এবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিদেশি সিনেমার উপর প্রস্তাবিত ১০০ শতাংশ শুল্ক- সব মিলিয়ে বলিউডের দুশ্চিন্তা আরও বেড়েছে।

Advertisement

সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত ভারতীয় সিনেমাগুলি আন্তর্জাতিক বাজার, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রে ভালো আয় করেছে। যেমন, ‘কাল্কি ২৮৯৮ এ.ডি’ আয় করেছে ১৮ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলার, ‘জওয়ান’ তুলেছে ১৫ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার। ভারতীয় সিনেমার এমন আন্তর্জাতিক সাফল্য এখন বিপদের মুখে, যদি ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক পরিকল্পনা কার্যকর হয়।

বিশ্ব অডিও ভিজ্যুয়াল এন্টারটেইনমেন্ট সামিটের শেষ দিনে এই শুল্ক হুমকির ঘোষণা সিনেমা জগতে আতঙ্ক ছড়ায়। চলচ্চিত্র নির্মাতা বিবেক অগ্নিহোত্রি এক্সে (পূর্বে টুইটার) লিখেছেন, এই উদ্ভট সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ভারতের ‘দুর্বল’ চলচ্চিত্র শিল্প পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে।

পরিবেশক অনিল ক্ষেত্রপাল ভারতীয় প্রযোজক ও পরিবেশকদের ভয়, মার্কিন বাজারের উপর নির্ভরতা কমে যাবে। বেশি শুল্ক মানে সিনেমা আমদানিতে খরচ বাড়বে, ফলে টিকিটের দামও বাড়বে। এতে দর্শক সংখ্যা কমে যাবে। তাছাড়া ইন্দো-মার্কিন চলচ্চিত্র সহযোগিতাও হুমকির মুখে পড়বে।

Advertisement

বলা হচ্ছে, বলিউড এখন এমনিতেই সংকটে। বড় বাজেট, বড় তারকা ও ঝাঁ-চকচকে প্রচারেও আগের মতো দর্শক টানছে না তারা। একটি প্রেক্ষাগৃহ মালিক বলেন, আক্ষরিক অর্থেই দর্শক আসছে না। অক্ষয় কুমারের মতো জনপ্রিয় তারকার টানা আটটি ছবি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়েছে।

এছাড়া স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম যেমন নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম ও ইরোস নাও-তে দর্শক ঝুঁকে পড়ছে, যা প্রেক্ষাগৃহ ব্যবসার ক্ষতি করছে। করোনা পরবর্তী সময়ে এই প্রবণতা আরও বেড়েছে।

এদিকে, ভারতের চলচ্চিত্র শিল্প দেশের অর্থনীতিতেও বড় ভূমিকা রাখে। এমপিএ ও ডেলয়েটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই খাতের আয় ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন রুপি ছাড়িয়েছে ও ২ দশমিক ৭ লাখ মানুষকে সরাসরি ও প্রায় ৭ লাখ মানুষকে পরোক্ষভাবে এই শিল্পে কাজ করছেন।

তবে সিনেমা হলে দর্শক ফেরানোই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। জনপ্রিয় অভিনেতা ও নির্মাতা আমির খান বলেন, ভারতে ১৪০ কোটি মানুষের জন্য মাত্র ৯ হাজার প্রেক্ষাগৃহ রয়েছে। অথচ যুক্তরাষ্ট্রে ৪০ হাজার ও ৯০ হাজার স্ক্রিন রয়েছে।

Advertisement

চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ইন্দ্রনীল লাহিড়ী বলেন, দর্শকরা এখন আন্তর্জাতিক মানের গল্প ও নির্মাণমান চান। আমাদের সিনেমা অতীতের মান হারিয়ে ফেলেছে। এখন সময় গল্প ও নির্মাণ নতুন করে ভাবার।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি বলিউড ঘুরে দাঁড়াতে চায়, তবে বিদেশি বাজারের উপর নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় দর্শককেই ফেরানো হবে সবচেয়ে বড় চাবিকাঠি।

সূত্র: নিক্কেই এশিয়া

এসএএইচ