দেশজুড়ে

দাবদাহে হাঁসফাঁস, তুঙ্গে শরবতের ব্যবসা

দাবদাহে হাঁসফাঁস, তুঙ্গে শরবতের ব্যবসা

টানা দাবদাহে চুয়াডাঙ্গা যেন আগুনে ঝলসে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে গরমে হাঁসফাঁস করা মানুষ তৃষ্ণা মেটাতে ভিড় করছেন ভ্রাম্যমাণ শরবতের দোকানে। এতে রমরমা হয়ে উঠেছে শরবতের ব্যবসা। তবে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে শরবত পানের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

Advertisement

জানা যায়, সোমবার (১২ মে) দুপুর ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৪১ শতাংশ। এর আগের দিন রোববার জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি মৌসুমে জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পৌঁছেছে ৪২ ডিগ্রিতে। এত উচ্চ তাপমাত্রায় জনজীবন প্রায় থমকে গেছে। খেটে খাওয়া মানুষ বিশেষ করে রিকশাচালক, দিনমজুর, ভ্যানচালকেরা পড়েছেন সবচেয়ে বেশি বিপাকে।

এই পরিস্থিতিতে সামান্য স্বস্তি পেতে মানুষ ভিড় করছেন লেবুর শরবত, মাঠা, আখের রস ও ফলের জুসের দোকানে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় শহরের প্রতিটি মোড়েই গড়ে উঠেছে ভ্রাম্যমাণ শরবতের দোকান। সকাল থেকে রাত অবধি চলছে শরবত বিক্রি।

 

চুয়াডাঙ্গা শহরের বড়বাজার, কোর্ট মোড়, অ্যাকাডেমি মোড়, সরকারি কলেজ গেট, শহীদ হাসান চত্বর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, শরবতের দোকানে ভিড় লেগেই আছে। দোকানিরা বলছেন, সাধারণ দিনে যেখানে দিনে ২০০-৩০০ গ্লাস শরবত বিক্রি হতো, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০০ থেকে ৮০০ গ্লাসে।

Advertisement

ভ্রাম্যমাণ শরবত বিক্রেতা লাল্টু বলেন, আগে দিনে দেড়-দুইশ গ্লাস বিক্রি করতাম। এখন ৮০০ গ্লাসেও চাহিদা মেটে না। লেবু, ট্যাং, বিট লবণ মিশিয়ে একেকটা শরবত বিক্রি করছি ১০ থেকে ২০ টাকায়। জিরানোর সময়ও পাচ্ছি না।

বিভিন্ন আইটেমের শরবত বিক্রেতা ইমরান শেখ বলেন, প্রতিদিন শুধু শরবতই বিক্রি করছি ৮-১০ হাজার টাকার। ১০ টাকা থেকে শুরু করে ৬০ টাকা প্রতি গ্লাস শরবত বিক্রি করছি।

শহরের মাঠা বিক্রেতা রায়হান মোল্লা জানান, গত সপ্তাহেও যেখানে দিনে ৩০ লিটার মাঠা বিক্রি করতাম, এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ লিটার। আয়ও বেড়ে গেছে তিনগুণ।

আখের রস বিক্রেতারাও একই অভিজ্ঞতা জানাচ্ছেন। বিভিন্ন ধরনের ফলের রসও বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে।

Advertisement

আরও পড়ুন:যে কারণে বাড়ছে দাবদাহ, করণীয় কী? য়াডাঙ্গায় ভ্যাপসা গরমে হাসপাতালে বেড়েছে রোগীর চাপ তীব্র দাবদাহে শঙ্কায় জনজীবন

এদিকে শরবতের ক্রেতারা জানাচ্ছেন, গরমে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ছে, রাস্তায় বের হলেই ঘাম ঝরছে। তাই তৃষ্ণা মেটাতে শরবতই ভরসা।

সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী তাহসিন আহমেদ বলেন, কলেজ শেষে শরীর একেবারে শুকিয়ে যায়। লেবুর শরবত শরীরে এক ধরনের প্রশান্তি এনে দেয়।

ভ্যানচালক লিয়াকত আলী বলেন, এই গরমে ভ্যান চালানো কঠিন। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়। ঠান্ডা শরবত খেলে প্রাণ ফিরে পাই।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস সূত্র জানিয়েছে, চলমান তাপপ্রবাহ আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। তবে আজ ১৩ মের পর থেকে যেকোনো দিন বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

চুচুয়াডাঙ্গার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. আওয়ালিয়ার রহমান বলেন, তাপপ্রবাহে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। বেশি করে পানি ও ফলমূল খাওয়ার পাশাপাশি ছায়াযুক্ত স্থানে থাকা, ঢিলেঢালা সুতির পোশাক পরা এবং বাইরে বের হলে ছাতা বা টুপি ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ঠান্ডা শরবত খাওয়ার সময় নিয়ম মেনে খাওয়া উচিত। না হলে হঠাৎ ঠান্ডা পানীয়তে আরও শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

তিনি আরও বলেন, গ্রীষ্মকালে রাস্তাঘাটে বিক্রি হওয়া নানা ধরনের শরবত তৃষ্ণা মেটালেও এসব শরবতের মান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। খোলা পরিবেশে তৈরি ও সংরক্ষিত হওয়ায় এতে সহজেই ধুলাবালি, ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য রোগজীবাণু মিশে যেতে পারে। অনেক সময় ব্যবহৃত পানি বিশুদ্ধ না হওয়ায় টাইফয়েড, হেপাটাইটিস-এ, আমাশয়সহ পেটের নানা রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই এই শরবত পানে সতর্কতা অবলম্বন প্রয়োজন। পরিষ্কার ও বিশুদ্ধ পানি দিয়ে শরবত পান করা সবচেয়ে নিরাপদ।

জেলা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মামুনুল হাসান বলেন, শরবতের দোকানগুলো আমাদের নিয়মিত তদারকির আওতায় রয়েছে। ভোক্তার স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমাদের অভিযান চলছে। কোথাও অনিয়ম পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এমএন/জেআইএম