জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানকে কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করার অনুমোদন দিয়েছেন হাইকোর্ট।
Advertisement
জুবাইদা রহমানের পক্ষে করা আপিল আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি মো.খসরুজ্জামানের একক বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে আজ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। তাদের সঙ্গে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন ভূইয়া ও অ্যাডভোকেট মো. মাকসুদ উল্লাহ্। আর দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আসিফ হাসান।
দুর্নীতির মামলায় ডা. জোবাইদা রহমানের ৫৮৭ দিনের বিলম্ব মওকুফ করে আপিল করার অনুমতি দিয়েছেন বলে তার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল জাগো নিউজকে জানিয়েছেন।
Advertisement
তিনি বলেন, ৩ বছরের কারাদণ্ডের আপিলের জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা.জুবাইদা রহমানকে ৫৮৭ দিনের বিলম্ব মার্জনা করেছেন হাইকোর্ট। এই আদেশের মাধ্যমে এখন জুবাইদা রহমান দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়ে গেছে। এখন নিয়ম অনুযায়ী, আপিল আবেদনটি কার্যতালিকায় (কজলিস্টে) আসলে বিষয়টি শুনানি হবে। এ ছাড়াও এই মামলা স্থগিত চাওয়া ও জামিন আবেদনও শুনানি হতে পারে বলেও জানান তিনি।
সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান, জুবাইদা রহমান ও তার মা সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলা করে দুদক।
এ মামলার বিচার শেষে ২০২৩ সালের ২ আগস্ট জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় তারেক রহমানকে দুটি অভিযোগে নয় ৯ বছর ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের তৎকালীন বিচারক মো. আছাদুজ্জামান। রায়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইন ২০০৪- এর ২৬(২) ধারায় তারেক রহমানকে তিন বছর ও ২৭(১) ধারায় ছয় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া তাকে তিন কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জুবাইদা রহমানকে ২৭(১) ধারায় তিন বছর কারাদণ্ড দেন । তাকেও জরিমানা করা হয়েছে ৩৫ লাখ টাকা।
এদিকে, গত বছরের শেষের দিকে এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জুবাইদা রহমানের সাজা এক বছরের জন্য স্থগিত করে সরকার। সেই গেজেটে বলা বলা হয়, ডা. জুবাইদা রহমানের সাজা স্থগিতের বিষয়ে দাখিলকৃত আবেদন এবং আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আইন ও বিচার বিভাগ এর মতামতের আলোকে ২২ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপন (১০ অক্টোবর, ২০২৪ ইং তারিখের বাংলাদেশ গেজেটে প্রকাশিত) সংশোধনপূর্বক আইনের ক্ষমতাবলে মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত, ঢাকা এর মেট্রো বিশেষ মামলা নং-৩৪১/২০২২ [কাফরুল থানার মামলা নং-৫২, তারিখ-২৬-০৯-২০০৭] -এ তার বিরুদ্ধে প্রদত্ত দন্ডাদেশ আদালতে আপিল দায়েরের নিমিত্ত বিনাশর্তে ০১ (এক) বছরের জন্য স্থগিত করা হলো। এরপর চলতি বছরের ৬ মে দেশে ফেরেন জুবাইদা রহমান।
Advertisement
এর আগে ২০২৩ সালের ২ আগস্ট ঘোষিত আয়ের বাইরে সম্পদের মালিক হওয়ার মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দুই ধারায় ৯ বছরের কারাদণ্ড এবং তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। ওই দিন ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. আছাদুজ্জামান এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। আইনের দৃষ্টিতে পলাতক দুই আসামিকে গ্রেফতারে পরোয়ানা না জারিরও আদেশ দেন তিনি।
একই সঙ্গে আদালত তারেকের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ২ কোটি ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭ টাকার সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া তারেককে তিন কোটি টাকা ও জুবাইদাকে ৩৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে।ওইদিন দুদকের পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মোশাররফ হোসেন কাজল।
দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় তারেক রহমান ও জুবাইদার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। ২৬(২) ধারার অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি ৩ বছর এবং ২৭(১) ধারায় অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছর।এ মামলায় গত ২৭ জুলাই দুদকের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। এরপর রায়ের দিন ধার্য করা হয়।
রায়ের পর বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদ কায়সার কামাল বলেছিলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তারেক রহমান ও জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল। মাত্র ১৬ কার্যদিবসে ৪২ জনের সাক্ষ্য নিয়ে রায় ঘোষণার বিষয়টি প্রমাণ করে এই মামলা কতটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান, জুবাইদা রহমানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পরের বছর তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
এফএইচ/এসএনআর/জিকেএস