মতামত

ঢাকার আবাসন সংকট এবং উত্তরণের পথ

ঢাকার আবাসন সংকট এবং উত্তরণের পথ

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা, বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল এবং সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহর হিসেবে পরিচিত। বিগত কয়েক দশক ধরে, এই মেগাসিটি অভূতপূর্ব নগরায়ণের সাক্ষী হয়েছে। অর্থনৈতিক সুযোগের হাতছানি এবং উন্নত জীবনের সন্ধানে গ্রাম ও মফস্বল থেকে আসা লাখ লাখ মানুষের ঢল ঢাকার জনসংখ্যাকে স্ফীত করে তুলেছে। এই ব্যাপক জনসংখ্যা বৃদ্ধি শহরের অবকাঠামো এবং সীমিত সম্পদের উপর তীব্র চাপ সৃষ্টি করেছে, যার ফলশ্রুতিতে আবাসন সংকট বর্তমানে ঢাকার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে অন্যতম।

Advertisement

বিশেষ করে নিম্ন আয়ের পরিবারের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসনের অভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে। এই সংকট কেবল মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের অভাব নয়, বরং উপলব্ধ আবাসনের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ার এক জটিল পরিস্থিতি। সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসনের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ব্যবধান শহরের অনেক বাসিন্দার সামাজিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জকে আরও বাড়িয়ে তুলছে এবং জীবনযাত্রার মানকে ক্রমাগত নিম্নগামী করছে।

ঢাকার আবাসন সংকটের মূলে রয়েছে বেশ কিছু পরস্পর সম্পর্কযুক্ত কারণ। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি। কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং জীবিকার অন্বেষণে প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক মানুষ ঢাকায় আসছে। এই অভিবাসীদের অধিকাংশই গ্রামের অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া অঞ্চল থেকে আসে, যেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত এবং জীবনযাত্রার মান অনুন্নত। ফলে ঢাকার ওপর জনসংখ্যার চাপ দিন দিন বাড়ছে। শহরের বর্তমান আবাসন ব্যবস্থা এই বিপুল সংখ্যক মানুষের চাহিদা মেটাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই, নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাদের অনেকেই ঘনবসতিপূর্ণ বস্তি বা ঝুপড়িতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে, যেখানে মৌলিক নাগরিক সুবিধা প্রায় অনুপস্থিত। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ঢাকার জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ (বিভিন্ন গবেষণা অনুযায়ী প্রায় ২০-৩০%) বস্তি বা অনানুষ্ঠানিক বসতিতে বসবাস করে, যা এই সংকটের ভয়াবহতা নির্দেশ করে।

একটি টেকসই এবং সমৃদ্ধ ঢাকা গড়ার পূর্বশর্ত হলো এর সকল নাগরিকের, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য একটি নিরাপদ ও সাশ্রয়ী আবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। এটাই কেবল উন্নত জীবনের হাতছানি দিতে পারে এবং নগরীর সামগ্রিক উন্নয়নের পথ খুলে দিতে পারে। এই সংকট উত্তরণে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, স্বচ্ছতা এবং কার্যকর সমন্বয় সবচেয়ে বেশি জরুরি।

Advertisement

আবাসন সংকটকে আরও জটিল করে তুলেছে ঢাকার জমির আকাশচুম্বী দাম। শহর যত সম্প্রসারিত হচ্ছে, কেন্দ্র এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোতে জমির মূল্য ততই অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়ছে। উচ্চ অভিবাসন হার, সীমিত ভূমি সরবরাহ এবং ফটকাবাজি – এই সবকিছু মিলে জমির দামকে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে নিয়ে গেছে।

ডেভেলপাররা মূলত উচ্চ ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কথা মাথায় রেখে বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স তৈরি করছে। এই প্রকল্পগুলো মুনাফা-ভিত্তিক হওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষের আবাসন চাহিদা পূরণে এদের আগ্রহ খুব কম। প্রায়শই এই নতুন উন্নয়ন প্রকল্পগুলো গড়ে তোলার সময় বিদ্যমান বস্তি বা অনানুষ্ঠানিক বসতি উচ্ছেদ করা হয়, যা নিম্ন আয়ের বাসিন্দাদের আরও প্রান্তিক করে তোলে এবং তাদের নতুন করে আশ্রয় খুঁজতে বাধ্য করে। জমির দুষ্প্রাপ্যতা এবং উচ্চমূল্যের কারণে সরকারি উদ্যোগেও সাশ্রয়ী আবাসন প্রকল্প হাতে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।

অনানুষ্ঠানিক বসতি বা বস্তিগুলো ঢাকার নিম্ন আয়ের জনসংখ্যার একটি বড় অংশের আবাসস্থল। এই বসতিগুলো নিম্নমানের জীবনযাত্রার সমার্থক হয়ে উঠেছে। এখানকার বৈশিষ্ট্য হলো অপর্যাপ্ত এবং ঝুঁকিপূর্ণ অবকাঠামো। সরু ও নোংরা পথ, প্রায়শই পানি জমে থাকা রাস্তা, বিদ্যুতের অনিয়মিত ও ঝুঁকিপূর্ণ সংযোগ, বিশুদ্ধ পানীয়জলের অভাব এবং অস্বাস্থ্যকর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এখানকার নিত্যনৈমিত্তিক চিত্র। বাসিন্দারা গাদাগাদি করে ছোট ছোট ঘরে বসবাস করে, যেখানে আলো-বাতাসের ব্যবস্থা অপ্রতুল। জনাকীর্ণতা, নিরাপত্তার অভাব এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে তারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্মুখীন হয়।

পানিবাহিত রোগ, শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ, চর্মরোগ এবং অন্যান্য সংক্রামক ব্যাধি বস্তি এলাকায় ব্যাপক আকার ধারণ করে। অনেকের কাছে, বস্তিগুলো কেবল একটি অস্থায়ী সমাধান নয়, বরং শহরের অন্যান্য অংশে সাশ্রয়ী আবাসনের বিকল্প না থাকায় এটিই তাদের স্থায়ী ঠিকানা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বস্তি উচ্ছেদ অভিযান চলাকালীন এসব সম্প্রদায়ের মানুষ যখন বাস্তুচ্যুত হয়, তখন তারা আরও বেশি অনিশ্চয়তা এবং দারিদ্র্যের মুখে পড়ে। পুনর্বাসন প্রক্রিয়া প্রায়শই ত্রুটিপূর্ণ হয়, যা তাদের নতুন স্থানে মানিয়ে নিতে আরও কঠিন করে তোলে।

Advertisement

অন্যদিকে, ঢাকার রিয়েল এস্টেট খাত প্রধানত ধনী ব্যক্তি এবং প্রবাসীদের চাহিদা পূরণে ব্যস্ত। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে অসংখ্য বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং এবং বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স গড়ে উঠছে। এই উচ্চমানের উন্নয়নগুলো নিঃসন্দেহে অর্থনীতির একটি অংশে অবদান রাখে, কিন্তু এটি ঢাকার আবাসন সংকটের মূল সমস্যা, অর্থাৎ নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য আবাসনের অভাব মোকাবেলায় কার্যত কোনো ভূমিকা রাখে না। বরং, এটি ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্যের ব্যবধানকে আরও বাড়িয়ে তোলে। আবাসন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এই ক্রমবর্ধমান বৈষম্য সমাজে স্পষ্টতই অসন্তোষ এবং চাপা ক্ষোভের জন্ম দিচ্ছে, যা সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ। বাজারের এই ধারা ইঙ্গিত দেয় যে কেবল মুনাফা-চালিত বেসরকারি উদ্যোগ আবাসন সংকট সমাধানে যথেষ্ট নয়; এখানে সুনির্দিষ্ট নীতিগত হস্তক্ষেপ এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা প্রয়োজন।

ঢাকার আবাসন সংকট মোকাবেলায় নিম্ন আয়ের পরিবারের চাহিদাকে অগ্রাধিকার দিয়ে উদ্ভাবনী এবং বহুমুখী সমাধানের প্রয়োজন। একটি সম্ভাব্য কার্যকর সমাধান হতে পারে সরকারি উদ্যোগে বৃহৎ আকারের সাশ্রয়ী আবাসন প্রকল্প নির্মাণ। এক্ষেত্রে বেসরকারি ডেভেলপার এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর সাথে অংশীদারিত্ব (PPP মডেল) অত্যন্ত ফলপ্রসূ হতে পারে। এই মডেল বিশ্বের অনেক শহরে সাশ্রয়ী আবাসন উন্নয়নে সফল প্রমাণিত হয়েছে। ঢাকায়, সরকার শহর এবং পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে উপলব্ধ জমি ব্যবহার করে পরিকল্পিত জনপদ গড়ে তুলতে পারে, যেখানে নিম্ন আয়ের পরিবারের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন ইউনিট নির্মাণ করা যায়। এই প্রকল্পগুলোতে পর্যাপ্ত অবকাঠামো, যেমন রাস্তা, পানি, বিদ্যুৎ, স্যানিটেশন, স্কুল এবং স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র অন্তর্ভুক্ত করা অপরিহার্য।

বৃহৎ আকারের নির্মাণ প্রকল্পের পাশাপাশি, আবাসনকে আরও সাশ্রয়ী করে তোলার জন্য নীতিগত সংস্কার অত্যন্ত জরুরি। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে এমন নিয়ম বাস্তবায়ন করা যার জন্য ডেভেলপারদের তাদের মোট প্রকল্পের একটি নির্দিষ্ট শতাংশ সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসনের জন্য বরাদ্দ করতে হবে (ইনক্লুশনারি জোনিং)। এর পাশাপাশি, সরকার কম খরচের আবাসন নির্মাণে আগ্রহী ডেভেলপারদের জন্য প্রণোদনা প্রদান করতে পারে, যেমন কর ছাড়, সহজ শর্তে ঋণ বা জমি বরাদ্দ। এই ধরনের প্রণোদনা বেসরকারি খাতকে সাশ্রয়ী আবাসন খাতে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করবে, যার ফলে বাজারে সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে এবং দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রিত হবে। দীর্ঘমেয়াদি নীতি এবং এর ধারাবাহিক প্রয়োগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

আবাসন সংকটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সমাধানের দিক হলো নিম্ন আয়ের পরিবারের জন্য সহজ শর্তে ক্ষুদ্রঋণ এবং স্বল্প-মূল্যের গৃহঋণের ব্যবস্থা করা। বর্তমানে, অনেক নিম্ন আয়ের পরিবার পর্যাপ্ত ঋণ এবং অর্থায়নের বিকল্পের অভাবে আবাসন কিনতে বা তৈরি করতে পারে না। সরকারি ব্যাংক, বিশেষায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ক্ষুদ্রঋণ সংস্থাগুলো এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তারা জামানতবিহীন বা সহজ জামানতে দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্প সুদের গৃহঋণ প্রকল্প চালু করতে পারে, যা অনেক পরিবারকে নিজস্ব ঘর তৈরির সুযোগ করে দেবে। ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো, যারা ইতিমধ্যে গ্রামীণ ও শহর অঞ্চলের দরিদ্রদের আর্থিক পরিষেবা প্রদানে সফলতার পরিচয় দিয়েছে, তারা তাদের কার্যক্রমের আওতায় আবাসন ঋণকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে, যা স্বল্প খরচের বাড়ি নির্মাণ সহজতর করবে। উদ্ভাবনী অর্থায়ন মডেল, যেমন কো-অপারেটিভ হাউজিং বা কমিউনিটি ল্যান্ড ট্রাস্ট, নিম্ন আয়ের মানুষেরা সম্মিলিতভাবে আবাসনের ব্যবস্থা করতে সহায়ক হতে পারে।

নগর পরিকল্পনা এবং নীতির ভূমিকাও আবাসন সংকটের সমাধান খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনানুষ্ঠানিক বসতিগুলোর অনিয়ন্ত্রিত সম্প্রসারণ প্রায়শই অপর্যাপ্ত নগর পরিকল্পনার ফল, যেখানে নিম্ন আয়ের বাসিন্দাদের চাহিদা পূরণে পর্যাপ্ত মনোযোগ দেওয়া হয় না। আবাসন সংকট মোকাবেলার জন্য প্রয়োজন একটি সামগ্রিক নগর উন্নয়ন পরিকল্পনা যা সাশ্রয়ী আবাসন, উন্নত অবকাঠামো, জনসেবা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগকে সমন্বিত করে। এর জন্য অপরিকল্পিত এবং বিশৃঙ্খল বৃদ্ধি থেকে বেরিয়ে এসে আরও কাঠামোগত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নগর উন্নয়ন কৌশল গ্রহণ করতে হবে। শহর এবং এর উপকণ্ঠে মিশ্র-আয়ের আবাসন প্রকল্প প্রচার করা যেতে পারে, যেখানে বিভিন্ন আয়ের মানুষ পাশাপাশি বসবাস করবে। এটি সামাজিক সংহতি বৃদ্ধি করতে এবং নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোকে শহরের মূলধারার সাথে একীভূত করতে সাহায্য করবে।

নগর পরিকল্পনার পাশাপাশি, সরকার বিদ্যমান অনানুষ্ঠানিক বসতিগুলিতে জীবনযাত্রার অবস্থার উন্নতির দিকে মনোযোগ দিতে পারে। বাসিন্দাদের উচ্ছেদ না করে বা তাদের আরও প্রান্তিক এলাকায় ঠেলে না দিয়ে, কর্তৃপক্ষ বস্তি উন্নীতকরণ কর্মসূচির মাধ্যমে মৌলিক পরিষেবা, যেমন বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশন, বিদ্যুৎ, আবর্জনা ব্যবস্থাপনা এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদান নিশ্চিত করতে কাজ করতে পারে। বিশ্বের অনেক শহরে বস্তি উন্নীতকরণ কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে এবং ঢাকায় একই ধরনের পদ্ধতি লক্ষ লক্ষ নিম্ন আয়ের পরিবারের জীবনযাত্রার মান উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করতে পারে। এক্ষেত্রে বস্তিবাসীদের অংশগ্রহণ এবং তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া অত্যাবশ্যক, যাতে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো তাদের প্রকৃত চাহিদা পূরণ করে।

সম্প্রদায়-চালিত সমাধানগুলিও আবাসন সংকট মোকাবেলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আবাসন প্রকল্পের পরিকল্পনা এবং উন্নয়নে স্থানীয় সম্প্রদায়কে সরাসরি জড়িত করার মাধ্যমে বাসিন্দাদের চাহিদা এবং পছন্দ অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব। এই পদ্ধতি বাসিন্দাদের মধ্যে নিজেদের আবাসনের প্রতি মালিকানা এবং দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করে, যা সাশ্রয়ী আবাসন প্রকল্পের দীর্ঘমেয়াদি টেকসইতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় জ্ঞান এবং দক্ষতা ব্যবহার করে কম খরচে টেকসই নির্মাণ পদ্ধতি উদ্ভাবন করা যেতে পারে।

ঢাকার আবাসন সংকট একটি জটিল এবং বহুস্তরীয় সমস্যা যার জন্য তাৎক্ষণিক মনোযোগ এবং দীর্ঘমেয়াদি, সমন্বিত সমাধান প্রয়োজন। এই সংকট মোকাবেলায় সরকার, বেসরকারি খাত, এনজিও এবং নাগরিক সমাজের সকলেরই সম্মিলিত ভূমিকা পালন করতে হবে। এককভাবে কোনো একটি পক্ষ এই বিশাল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারবে না। সাশ্রয়ী আবাসনের জন্য নীতিগত সংস্কার, উদ্ভাবনী অর্থায়ন ব্যবস্থার প্রবর্তন, উন্নত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নগর পরিকল্পনা এবং বিদ্যমান অনানুষ্ঠানিক বসতিগুলির উন্নীতকরণের উপর জোর দেওয়ার মাধ্যমে ঢাকা তার নিম্ন আয়ের বাসিন্দাদের জন্য আরও ন্যায়সংগত এবং মানবিক আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে।

একটি টেকসই এবং সমৃদ্ধ ঢাকা গড়ার পূর্বশর্ত হলো এর সকল নাগরিকের, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য একটি নিরাপদ ও সাশ্রয়ী আবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। এটাই কেবল উন্নত জীবনের হাতছানি দিতে পারে এবং নগরীর সামগ্রিক উন্নয়নের পথ খুলে দিতে পারে। এই সংকট উত্তরণে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, স্বচ্ছতা এবং কার্যকর সমন্বয় সবচেয়ে বেশি জরুরি।

লেখক: গবেষক ও উন্নয়নকর্মী।

এইচআর/এএসএম