গত কয়েক দিন রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি’। বিষয়টি নিয়ে শুরু থেকে একাট্টা ছাত্রদের নবগঠিত দল এনসিপি, জামায়াতসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। বিএনপি বিষয়টি নিয়ে স্পষ্ট অবস্থান এখন পর্যন্ত জানায়নি। দলটির এক সময়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র জামায়াত বলছে, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা জনগণের দাবি, সে দাবিতে তারা একাত্মতা জানিয়েছে।
Advertisement
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শুরু থেকেই বেশ সক্রিয় জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। গত বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাতে দলটির ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা সিবগাতুল্লাহ সিবগার নেতৃত্বে দলটির নেতাকর্মীরা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নিয়ে সমর্থন জানান। পরদিন সকালেই জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের নেতৃত্বে জামায়াতের প্রতিনিধিদল যমুনার সামনে আন্দোলনে সংহতি জানায়।
জামায়াত-শিবির ছাড়াও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ ইসলামী দলগুলো, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), আপ বাংলাদেশ, ইনকিলাব মঞ্চ, লেবার পার্টি, এবি পার্টিসহ ছোট-বড় অনেক দল সংহতি জানিয়ে মাঠে আছে।
জামায়াত ছাত্র-জনতার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। জনগণের একটি অংশ হচ্ছে জামায়াত। তাদের প্রত্যাশার সঙ্গে জামায়াতের একাত্মতা।–জামায়াতের প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ
Advertisement
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে চলা আন্দোলনে জামায়াত অন্য দলগুলোর চেয়ে বেশি সক্রিয় কেন জানতে চাইলে দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ জাগো নিউজকে বলেন, ‘দেশের জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়েছে। টিকে থাকার জন্য প্রায় দুই হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। ৪০ হাজার মানুষকে আহত করেছে। এ ধরনের ধিকৃত ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে জনগণ দাঁড়ানোর কারণেই শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।’
আরও পড়ুনআওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে বিএনপির অবস্থান কী?আইসিটি অ্যাক্টে আ’লীগ নিষিদ্ধের প্রস্তাবনা নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছেযারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চায় না তারা ফ্যাসিবাদী: হাসনাত আবদুল্লাহআমরা কোনো দলকে নিষিদ্ধের পক্ষে না: জি এম কাদের‘শেখ হাসিনা নিজেই নিজেকে নিষিদ্ধ করেছেন এবং অঘোষিতভাবে নিজের দলকেও নিষিদ্ধ করাচ্ছেন। আবার দেশের বাইরে থেকে উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। ফলে দেশের ছাত্র-জনতা তাদের নিষিদ্ধের দাবিতে মাঠে নেমেছে।’
তিনি বলেন, ‘জামায়াত ছাত্র-জনতার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। জনগণের একটি অংশ হচ্ছে জামায়াত। তাদের প্রত্যাশার সঙ্গে জামায়াতের একাত্মতা।’
বিএনপি এই আন্দোলনে সরাসরি অংশ নিচ্ছে না। এক্ষেত্রে জামায়াতের রাজনীতির চ্যালেঞ্জ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ আন্দোলনে জামায়াত একাত্মতা জানাচ্ছে। জনমানুষের দাবিতে কে কীভাবে অংশ নেবে সেটা তাদের বিষয়। এ বিষয়ে কারও অবস্থান না থাকলে সেটা তারা এবং জনগণ বুঝবে।’
Advertisement
সরকার জনগণের দাবি মানবে কি না জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের জাগো নিউজকে বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকার যে গণহত্যা চালিয়েছে, তাতে তারা গণহত্যাকারী দল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী তারা ১৪শর বেশি লোককে হত্যা করেছে। কোনো সরকার বা দল তার দেশের মানুষের ওপর এমন নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালানোর ইতিহাস নেই।’
জনদাবি হচ্ছে তাদের বিচার হবে, গণহত্যার বিচার হবে, যে লুটপাট করেছে তাদের বিচার হওয়া উচিত। এখন সরকার ভালো মনে করলে তারা এটি করবে। আমরা মনে করি এই জনদাবির ওপর সমর্থন জানানো উচিত সরকারের।-জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের
তিনি বলেন, ‘গত ১৫ বছর তারা হাজার হাজার মানুষকে খুন করেছে, গুম করেছে, নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। তিনটি নির্বাচন করেছে বিনা ভোটের, আরেকটা ডামি নির্বাচন। এই দল গণতন্ত্রের পক্ষে কখনো কাজ করেনি। তারা এমনিতেই জনগণের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।’
‘জনদাবি হচ্ছে তাদের বিচার হবে, গণহত্যার বিচার হবে, যে লুটপাট করেছে তাদের বিচার হওয়া উচিত। এখন সরকার ভালো মনে করলে তারা এটি করবে। আমরা মনে করি এই জনদাবির ওপর সমর্থন জানানো উচিত সরকারের। তারা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে সে আশা করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যারা ছিল তাদের সবার ফ্যাসিবাদ ও তাদের দোসরদের বিচারের বিষয়ে দ্বিমত নেই। এদেশে যাতে ফ্যাসিবাদ আর ফিরে না আসে তার নীতিগত অবস্থান সব দলের মধ্যে রয়েছে। দলীয়ভাবে বিভিন্ন দলের মত ভিন্ন হতে পারে।’
আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করায় সেই ধারায় সমস্যা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে কারা রাজনীতি করবে কি করবে না তা এদেশের মানুষই ঠিক করবে। বিশেষ করে জাতিসংঘ যে রিপোর্ট দিয়েছে তাতে সব বিষয় স্পষ্ট আছে। আমরা মনে করি না দেশবাসীর বিরুদ্ধে কেউ যাবে।’
নিষিদ্ধ করলে আওয়ামী লীগের অবস্থা কী হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাদের পরিণাম কী হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তারা জনধিকৃত। তাদের দেশের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে।’
এএএম/এএসএ/এমএফএ/জেআইএম