লাইফস্টাইল

সাফল্যের প্রস্তুতি শুরু হয় রাত থেকেই

সাফল্যের প্রস্তুতি শুরু হয় রাত থেকেই

আমরা প্রায়ই শুনি ‘সকালের শুরু যেমন, দিনটাও তেমন।’ কিন্তু এই সমীকরণের অপর অর্ধেক রাত কতটা গুরুত্ব পায়? বাস্তবতা হলো, দিন শুরু হয় আগের রাত থেকেই। ঘুমানোর আগের সময়টুকু শুধুই বিশ্রামের জন্য নয়, বরং সেটা হতে পারে সাফল্যের ভিত্তি। বিশ্বের শীর্ষ উদ্যোক্তাদের রাতের অভ্যাসে চোখ রাখলেই সেটা বোঝা যায়।

Advertisement

বিশ্বখ্যাত সেলফ ডেভেলপমেন্ট প্ল্যাটফর্ম ‘লাইফহ্যাক’র প্রতিষ্ঠাতা লিওন হো বলেন, ‘আপনি দিনের মতো রাতেও সচেতন হলে, আগামী সকালটা হবে আরও সজীব ও উৎপাদনশীল।’ তার মতে, রাতের রুটিন শুধুই ঘুমানোর প্রস্তুতি নয়, এটি হলো পরদিনের সাফল্যের ছক কষে রাখা।

নিচে এমনই একটি সুশৃঙ্খল ও কার্যকর রাতের রুটিন উপস্থাপন করা হলো, যা অনেক সফল ব্যক্তিত্বের নিত্যদিনের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আপনি যদি প্রতিদিন এই অভ্যাসগুলো একটু একটু করে নিজের জীবনে নিয়ে আসেন, তবে সাফল্যের পথে আরও একধাপ এগিয়ে যাবেন।

>> বিকেল ৪টার পর ক্যাফেইন নয়চা, কফি, কোমল পানীয় সব ধরনের ক্যাফেইনজাতীয় পানীয় বিকেল ৪টার পর এড়িয়ে চলুন। কারণ, ক্যাফেইনের প্রভাব শরীরে ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত থাকে, যা ঘুমে বিঘ্ন ঘটাতে পারে।

Advertisement

>> পানি পান করুন নিয়ম মেনেরাতে ঘন ঘন বাথরুমে যাওয়া এড়াতে হুট করে বেশি পানি পান করবেন না। বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যেই শরীরকে পর্যাপ্ত পানি দিন, যাতে রাতের ঘুম হয় স্বস্তিদায়ক।

>> কাজের সীমা টানুন সন্ধ্যার আগেইপ্রয়োজনীয় কাজগুলো বিকেল বা সন্ধ্যার মধ্যেই শেষ করার চেষ্টা করুন। রাতের সময়টা নিজের জন্য রাখুন, পরিবার কিংবা নিজস্ব সময় উপভোগ করতে শিখুন।

>> ধূমপান পরিহার করুনঘুমাতে যাওয়ার অন্তত দুই ঘণ্টা আগে ধূমপান বন্ধ করুন। এতে মস্তিষ্ক ও রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকবে, ঘুম হবে গভীর ও শান্ত।

>> যতটা পারেন, তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরুনরাতের রুটিন ঠিক রাখতে হলে ঘরে ফেরা বিলম্ব করা যাবে না। যত আগে ফিরবেন, তত বেশি সময় পাবেন নিজেকে প্রস্তুত করতে।

Advertisement

>> হাল্কা ও সহজপাচ্য রাতের খাবাররাতের খাবারে ভারী ও চর্বিযুক্ত খাবার না খেয়ে রুটি-সবজি বা হাল্কা প্রোটিনজাতীয় খাবার রাখুন। চেষ্টা করুন রাত ৮টার মধ্যে খেয়ে নিতে।

>> পরদিনের প্রস্তুতি আগেই সেরে ফেলুনকোন পোশাক পরবেন, ব্যাগে কি থাকবে, নাশতা কী হবে এসব রাতেই ঠিক করে রাখুন। সকালে ওঠেই এসব নিয়ে সিদ্ধান্ত না নিলে আপনার মানসিক শক্তি বাঁচবে।

>> বিনোদনের সময় নির্দিষ্ট রাখুনটিভি, সিরিজ, সিনেমা বা গেম খেলা সবই চলতে পারে, তবে রাত জেগে নয়। এক ঘণ্টার বেশি স্ক্রিনে সময় কাটাবেন না।

>> স্ক্রিন অফ, বই অনঘুমানোর অন্তত এক ঘণ্টা আগে ফোন বা ল্যাপটপ থেকে দূরে থাকুন। চোখের জন্য আরামদায়ক কাগজের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

>> ধ্যান বা প্রার্থনা করুনদিন শেষে সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো, কিংবা নিজের ভাবনার গভীরে ঢুকে ধ্যান করাও রাতের মানসিক প্রস্তুতিতে দারুণ কার্যকর। এতে মানসিক চাপ হ্রাস পায়।

>> পরদিনের তিনটি প্রধান কাজ লিখে রাখুনএই ছোট্ট অভ্যাস আপনার সকালটিকে করবে পরিকল্পিত ও চাপমুক্ত।

>> হাল্কা গরম পানিতে গোসল করুনরাতের গোসল শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক করে, যা গভীর ঘুমে সহায়ক। চাইলে শুধু মুখ ও পা ধোয়ার মাধ্যমেও ফ্রেশ অনুভব করা যায়।

>> নিঃশ্বাসের ব্যায়াম করুনবিছানায় শুয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস নিয়ে ছাড়ুন। এটি মস্তিষ্ক ও স্নায়ুকে শান্ত করে ঘুমের জন্য প্রস্তুত করে।

>> নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যানপ্রতিদিন এক সময় ঘুমাতে গেলে আপনার শরীর ‘বডি ক্লক’ গড়ে তুলবে, যা ঘুমের গুণমান ও সকালের এনার্জি বাড়াতে দারুণ কার্যকর।

সর্বোপরি, রাত মানেই শুধু বিশ্রাম নয়, রাত মানে নতুন দিনের প্রস্তুতি। সফল মানুষেরা দিনের মতো রাতকেও গুরুত্ব দেন, কারণ দিনের সাফল্য অনেকাংশেই নির্ভর করে রাতের আচরণ ও অভ্যাসের ওপর। এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলো আপনার জীবনকে গুছিয়ে আনতে পারে, বাড়িয়ে দিতে পারে পারফরম্যান্স এবং মানসিক প্রশান্তি। আপনার রাত কেমন কাটছে? সেটাই নির্ধারণ করবে আগামীকাল আপনি কতটা এগোতে পারবেন।

জেএস/জিকেএস