ভ্রমণ

ব্রহ্মপুত্রের বুকে শান্ত বিকেল

ব্রহ্মপুত্রের বুকে শান্ত বিকেল

নদী শুধু জলধারা নয়; নদী এক অনুভব, এক জীবনধারা। ময়মনসিংহ শহরের বুক চিরে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদ যেন শহরবাসীর ফুসফুস হয়ে উঠেছে। বিকেলে নদীর পাড়ে গেলে বোঝা যায় এই নদী কীভাবে মানুষকে টেনে আনে। কেউ আসে ক্লান্তি ঝরাতে, কেউ ছবি তুলতে, কেউবা নিঃশব্দে বসে থাকতে।

Advertisement

এক বিকেলে আমিও নেমেছিলাম সেই জলে। নৌকায় উঠতেই চারপাশটা পাল্টে গেল। শহরের কোলাহল পেছনে ফেলে আমি এক জলের রাজ্যে ঢুকে পড়লাম। বৈঠার টান, পানির শব্দ আর বাতাসে ভেসে আসা সুর সব মিলিয়ে এক অন্যরকম প্রশান্তি।

নদীর বুকজুড়ে তখনো কিছু নৌকা ভেসে বেড়াচ্ছিল। কিছুতে পর্যটক, কিছু শুধু দাঁড়িয়ে ছিল অপেক্ষায়। ছোট্ট একটি নৌকায় পরিবার নিয়ে ঘুরছিল এক দল। বাচ্চারা হেসে উঠছিল প্রতিটি ঢেউয়ের ছোঁয়ায়। কেউ আবার প্রেমিক যুগল, নৌকার এক কোনায় বসে নিরিবিলি কাটাচ্ছিল সময়। নদী যেন তাদের আবেগের চাদরে জড়িয়ে রেখেছিল।

পানির ঢেউয়ে নৌকাগুলোর দোল খাওয়া, মাঝেমধ্যে বাতাসে ভেসে আসা গিটারের সুর, দূরে গোধূলির আভা সব মিলিয়ে মনে হচ্ছিল আমি যেন সময়ের বাইরে চলে এসেছি। এই নদী শহরের পাশে থেকেও যেন এক আলাদা জগত।

Advertisement

কিছু নৌকায় ছেলেরা গান ধরেছে, ‘ও নদীরে তুই যাস কোথায় রে...’। আশেপাশের নৌকা থেকে সেই সুরে সুর মেলাচ্ছে অন্যরাও। নদী যেন হয়ে উঠেছে এক চলমান মিলনমেলা।

আরও পড়ুন গরমে ভ্রমণের প্রস্তুতি ও সতর্কতা কেমন হবে?  রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতে যা দেখবেন 

নৌভ্রমণের পথে দেখা মিললো জেলে নৌকার। কথা হলো স্থানীয় জেলে রহিম মিয়ার সঙ্গে। বছর চল্লিশের এই মানুষটি জানালেন, ‘এই নদীই আমার বাঁচার উপায়। ভোরে জাল ফেলি, দুপুরে বা বিকেলে যা পাই; তা-ই নিয়ে ফিরে আসি।’

প্রায় এক ঘণ্টার নৌভ্রমণ শেষে যখন ফিরে আসছিলাম; তখন সূর্য ডুবছিল পশ্চিমে। আকাশের লালচে আভা পড়ে নদীর বুকে, সেই দৃশ্য ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। মনে হচ্ছিল, নদী যেন বিদায়ের মুহূর্তেও ভালোবাসা দিয়ে বিদায় জানাচ্ছে।

এই নৌভ্রমণ কেবল একটি ভ্রমণ নয়, ছিল এক আত্মিক সংযোগ। ব্রহ্মপুত্র নদ আমাকে শিখিয়েছে প্রকৃতির কাছাকাছি গেলে মানুষ মন খারাপের মাঝেও নিজেকেই নতুনভাবে চিনতে শেখে। শহরের যান্ত্রিক জীবন থেকে দূরে, এই নদীর বুকেই আমি খুঁজে পেয়েছি একটু নিঃশ্বাস নেওয়ার সুযোগ।

Advertisement

ঢাকার যারা এই নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান রাজধানীর মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে ময়মনসিংহগামী বাসে অথবা কমলাপুরে ট্রেনে উঠে ৩.৫ ঘণ্টায় চলে আসুন ময়মনসিংহ সদরে। এরপর রিকশা বা ইজিবাইকে ১৫ মিনিটে সহজেই চলে আসতে পারবেন এই নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে।

এসইউ/জিকেএস