এক ফোঁটা রক্তের ভেতর কত কথা লুকিয়ে থাকে, তা থ্যালাসেমিয়া রোগীরা প্রতিদিন প্রমাণ করে দেন। জন্মের পর থেকেই শুরু হয় লড়াই; নিজের শরীরের সঙ্গে, সমাজের ভুল ধারণার সঙ্গে, আর সবচেয়ে বেশি সময় আর সম্ভাবনার সঙ্গে। ৮ মে আন্তর্জাতিক থ্যালাসেমিয়া দিবস শুধু একটি দিন নয়, এটি স্মরণ করিয়ে দেয় এমন একটি বাস্তবতাকে, যেখানে প্রতিটি শিরায় শিরায় বইছে প্রতীক্ষা; একটু সচেতনতা, ভালোবাসা এবং রক্তদানের।
Advertisement
থ্যালাসেমিয়া কী?থ্যালাসেমিয়া হলো একটি বংশগত রক্তের রোগ, যেখানে শরীর প্রয়োজনীয় পরিমাণে হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে ব্যর্থ হয়। এর ফলে শরীরে স্বাভাবিক অক্সিজেন পরিবহন বাধাগ্রস্ত হয় এবং ঘন ঘন রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজন হয়। শিশুরা সাধারণত বাবা-মা উভয়ের কাছ থেকে থ্যালাসেমিয়ার জিন পেলে এ রোগে আক্রান্ত হয়।
বাংলাদেশে থ্যালাসেমিয়ার বাস্তবতাবাংলাদেশে প্রতি বছর বহু শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্ম নেয়, অথচ সমাজে এর সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান ও সচেতনতা এখনো সীমিত। গ্রামে তো বটেই, শহরেও অনেকে জানেন না থ্যালাসেমিয়া কীভাবে ছড়ায় কিংবা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এখনো অনেক দম্পতি বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া ক্যারিয়ার টেস্ট করান না, ফলে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে নতুন একটি জীবন বাধা পড়ে রক্তের বন্দিদশায়।
আরও পড়ুন: হজমশক্তি বাড়াতে চাইলে মেনে চলুন এই ৫ সহজ অভ্যাস সকালে ডাবের পানি পানের চমকপ্রদ সব উপকারিতাএকজন থ্যালাসেমিয়া রোগীর দিনযাপনপ্রতিমাসে একাধিকবার রক্ত নিতে হয়। স্কুলে বা কর্মস্থলে অনেকে বোঝে না তার ক্লান্ত চোখের পেছনের ইতিহাস। সমাজে কিছুটা সহানুভূতি থাকলেও, এখনো রয়ে গেছে সামাজিক অবহেলা, আত্মীয়স্বজনের সন্দেহ, আর বিয়ের মতো বিষয়ে বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি।
Advertisement
এই রোগ ঠেকানো সম্ভব, যদি…থ্যালাসেমিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো-সচেতনতা ও প্রতিরোধ। বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা (প্রী-ম্যারিটাল ক্যারিয়ার স্ক্রিনিং) করলেই জানা যায়, কেউ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত কি না। যদি দুজনেই আক্রান্ত হন, তাহলে সন্তানের থ্যালাসেমিয়া মেজর হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই পরিকল্পিতভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং পরামর্শ নেওয়া হতে পারে ভবিষ্যতের নিরাপত্তা।
থ্যালাসেমিয়া দিবসে আমাদের করণীয়>> নিয়মিত রক্তদান করুন। কারণ একজন থ্যালাসেমিয়া রোগীর জীবন রক্তের ওপর নির্ভর করে।>> সচেতনতা ছড়ান পরিবার ও সমাজে, বিশেষ করে বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা নিয়ে।>> ভয় নয়, সহমর্মিতা ছড়ান, থ্যালাসেমিয়া রোগীরা যেন সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে পারেন সেই পরিবেশ গড়ে তুলুন।>> সরকারি সহযোগিতা বাড়ানো হোক, জেলা পর্যায়ে ফ্রি রক্ত স্ক্রিনিং ও চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হোক।
সর্বোপরি থ্যালাসেমিয়া শুধু একটি রোগ নয়; এ এক আজীবনের দায়বদ্ধতা, সহনশীলতার পরীক্ষা, আর মানবতার ডাক। আন্তর্জাতিক থ্যালাসেমিয়া দিবসে আসুন আমরা প্রতিজ্ঞা করি এ রোগের বিরুদ্ধে লড়াইটা শুধু রোগীর নয়, বরং আমাদের সবার। প্রতিটি রক্তবিন্দুতে জেগে উঠুক নতুন আশার আলো।
জেএস/এএসএম
Advertisement