ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমান্ত সংঘর্ষ নতুন কিছু নয়। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ায় ধনী দেশের বিনিয়োগ ও কৌশলগত আগ্রহ বাড়ার কারণে পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দুই দেশের সংঘাত এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
Advertisement
মঙ্গলবার (৬ মে) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যুক্তরাজ্যের সঙ্গে একটি ঐতিহাসিক বাণিজ্যচুক্তি ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নয়টি তথাকথিত ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামো’ লক্ষ্য করে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে হামলার দাবি করে দিল্লি।
একদিকে ভারতের বৈশ্বিক বাণিজ্য কেন্দ্র হয়ে ওঠার কথা বলা হচ্ছে, অন্যদিকে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার এই চিত্র এক অস্বস্তিকর দ্বৈততা তৈরি করেছে।
গত মাসে কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর দিল্লির পক্ষ থেকে এমন প্রতিক্রিয়া প্রত্যাশিত ছিল। ফলে বুধবার সকালে ভারতীয় শেয়ার, বন্ড ও মুদ্রাবাজার তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। তবে পাকিস্তানের করাচিতে উত্তেজনার প্রভাব বেশি পড়েছে।
Advertisement
যদিও ভারত বহির্বিশ্বে দীর্ঘদিন ধরেই ভূরাজনৈতিক ঝুঁকির সঙ্গে বসবাস করে। তবে এবার একটি আশঙ্কা সামনে এসেছে—চলমান প্রতিক্রিয়াগুলো কাঙ্ক্ষিত প্রতিরোধমূলক প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ হতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পাল্টা জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারিও অবাক করার মতো কিছু নয়।
বিশ্ব সরবরাহ ব্যবস্থায় চীনের অংশ কমিয়ে এনে ভারতকে বিকল্প হিসেবে দাঁড় করানোর যে পরিকল্পনা, সেটিকে এ ধরনের উত্তেজনা বাধাগ্রস্ত করতে পারে। সম্প্রতি অ্যাপল ২০২৬ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির জন্য অধিকাংশ আইফোন ভারতে তৈরির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো, যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে কার্যকর বিশ্বনিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করতে পারছে না এবং সেখানে প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা থাকায় ভারত-পাকিস্তান সংঘাত আরও সহজে বেড়ে যেতে পারে।
Advertisement
এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে ভারতই। যদিও দেশটি আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করতে কিছু অগ্রগতি করেছে, তবুও এটি এখনো অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত, জটিল ও অকার্যকর বাজার হিসেবে রয়ে গেছে, যেখানে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ জিডিপির তুলনায় হ্রাস পাচ্ছে।
চলতি বছর ভারতের পুঁজিবাজার থেকে বৈশ্বিক প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ প্রত্যাহারও তা প্রমাণ করে।
এই প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনা, ভারতের সম্ভাব্য ‘নিরাপদ বিনিয়োগ গন্তব্য’ ভাবনার পথে আরেকটি বাধা তৈরি করলো।
সূত্র: রয়টার্সকেএএ/