অর্থনীতি

আতঙ্কে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে ধস

আতঙ্কে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে ধস

প্রতিবেশী দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তান রক্তক্ষয়ী সংঘাতে জড়ানোর প্রভাবে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে রীতিমতো ধস নেমেছে। আতঙ্কে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা মাত্রাতিরিক্ত বিক্রির চাপ বাড়ানোর কারণে প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠানের স্থান হয়েছে দাম কমার তালিকায়। সেই সঙ্গে মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। পাশাপাশি কমেছে লেনদেনের গতিও।

Advertisement

বুধবার (৭ মে) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া ৯৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। এতে প্রধান মূল্যসূচক কমেছে ৩ শতাংশ। আর ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১০ হাজার কোটি টাকা। অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) বড় দরপতন হয়েছে।

শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারত ও পাকিস্তানের সংঘাতের কারণে উপমহাদেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। যার প্রভাব পড়েছে দেশের শেয়ারবাজারে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেওয়ায় শেয়ার বিক্রির চাপ বেড়ে বড় দরপতন হয়েছে।

তারা বলছেন, ভারত-পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে আতঙ্ক ছড়াবে এটাই স্বাভাবিক। তবে আগে থেকেই পতনের ধারায় থাকা দেশের শেয়ারবাজার এখন তলানিতে রয়েছে। বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে না পড়লে এখন থেকে শেয়ারবাজারে বড় দরপতন না হওয়াটাই স্বাভাবিক। সুতরাং বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত না হয়ে স্বাভাবিক আচরণ করা উচিত। তাহলে শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াবে।

Advertisement

দুই সপ্তাহ আগে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার গভীর রাতে পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়েছে ভারত। এতে ৭০ জনের মতো প্রাণ হারিয়েছে। ভারতের এই হামলার পর পাকিস্তানও পাল্টা হামলা চালিয়েছে। এ হামলায় ভারতে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন।

আরও পড়ুনপুঁজিবাজার নিয়ে বৈঠকে বসছেন প্রধান উপদেষ্টাআতঙ্কে শুরুতেই ঢালাও দরপতন শেয়ারবাজারে

প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে বিরাজমান এই পরিস্থিতিতে বুধবার দেশের শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হতেই অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমে যায়। ফলে লেনদেনের শুরুতেই শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়। লেনদেনের শুরুতে দেখা দেওয়া এই পতনের ধারা লেনদেনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এমনকি লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পতনের মাত্রাও বাড়ে।

এতে দিনের লেনদেন শেষে সব খাত মিলে ডিএসইতে মাত্র ৯টি কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে পেরেছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৮৫টির। আর ৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ভালো কোম্পানি বা ১০ শতাংশ অথবা তার বেশি লভ্যাংশ দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মাত্র ১টির শেয়ার দাম বেড়েছে এবং ২১৫টির দাম কমেছে। আর ৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

মাঝারি মানের বা ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেওয়া ৪টি কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে ৭৯টির দাম কমেছে। বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেওয়ার কারণে পঁচা ‘জেড’ গ্রুপে স্থান হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৪টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৯১টির এবং ১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আর তালিকাভুক্ত ৩৬টি মিউচুয়াল ফান্ডেরই দাম কমেছে।

Advertisement

এভাবে ঢালাও দরপতন হওয়ায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৪৯ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৮০২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৪১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৪৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৪০ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৭৯৩ পয়েন্টে নেমে গেছে।

সবকটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। অবশ্য লেনদেন ৫০০ কোটি টকার বেশি হয়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৫১৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫৪৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ৩৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা।

এ লেনদেনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে এনআরবি ব্যাংকের শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির ৩৭ কোটি ১২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিচ হ্যাচারির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৩ কোটি ৯১ টাকার। ৩১ কোটি ৯৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে মিডল্যান্ড ব্যাংক।

এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার, ব্র্যাক ব্যাংক, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, ফাইন ফুডস, বারাকা পাওয়ার, বেক্সিমকো ফার্মা এবং শাইনপুকুর সিরামিকস।

অন্য শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ২৭০ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২১৭ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২০টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৮৭টির এবং ১০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।

শেয়ারবাজারে এমন ঢালাও দরপতনের কারণ হিসেবে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি এবং ডিএসইর পরিচালক রিচার্ড ডি রোজারিও জাগো নিউজকে বলেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া পরিস্থিতির কারণে শেয়ারবাজারে এমন দরপতন দেখা দিয়েছে।

তিনি বলেন, ভারত-পাকিস্তান পরিস্থিতির কারণে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনা এই উপমহাদেশে আতঙ্ক ছড়াবে এটাই স্বাভাবিক। তবে আমি মনে করি আমাদের শেয়ারবাজার এমনিতেই এখন বটম লাইনে রয়েছে। এখান থেকে বাজার খুব নিচে নামার সম্ভাবনা কম। আশা করছি বাজার ঘুরে দাঁড়াবে।

এমএএস/এমআইএইচএস/জেআইএম