সফরের ক্লান্তি ও কষ্ট বিবেচনা করে ইসলাম মুসাফিরদের শরিয়ত পালনে কিছু ছাড় দিয়েছে। যেমন রমজানের ফরজ রোজা মুসাফিররা চাইলে ভেঙে পরে কাজা করে নিতে পারেন, জুমার নামাজ ও কুরবানি মুসাফিরদের ওপর ওয়াজিব নয়। এ ছাড়া প্রতিদিনের চার রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজগুলো অর্থাৎ জোহর, আসর ও ইশার নামাজ মুসাফিরদের জন্য আল্লাহ সংক্ষীপ্ত করে দিয়েছেন। সফর অবস্থায় এ নামাজগুলো দুই রাকাত পড়তে হয়। আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়াতাআলা বলেন,
Advertisement
وَ اِذَا ضَرَبۡتُمۡ فِی الۡاَرۡضِ فَلَیۡسَ عَلَیۡکُمۡ جُنَاحٌ اَنۡ تَقۡصُرُوۡا مِنَ الصَّلٰوۃِ
যখন তোমরা দেশে-বিদেশে সফর কর, তখন নামাজ সংক্ষেপ করাতে দোষ নেই। (সুরা নিসা: ১০১)
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন,
Advertisement
فَرَضَ اللهُ الصَّلَاةَ عَلَى لِسَانِ نَبِيِّكُمْ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْحَضَرِ أَرْبَعًا، وَفِي السَّفَرِ رَكْعَتَيْنِ.আল্লাহ তাআলা তোমাদের নবির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জবানে মুকিম অবস্থায় চার রাকাত ও সফর অবস্থায় দুই রাকাত নামাজ ফরজ করেছেন। (সহিহ মুসলিম: ৬৮৭)
তবে মুসাফির যদি মসজিদে নামাজ পড়েন এবং সেখানে মসজিদের ইমাম নামাজ পড়ান যিনি মুসাফির নন, তাহলে মুসাফির ব্যক্তি তার সাথে চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজগুলো চার রাকাতই আদায় করবে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন,
إِذَا دَخَلَ الْمُسَافِرُ فِي صَلَاةِ الْمُقِيمِينَ صَلَّى بِصَلَاتِهِمْ.মুসাফির যদি মুকিমদের সাথে নামাযে শরিক হয় তবে সে তাদের মত চার রাকাত নামাজ পড়বে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা: ৩৮৪৯)
মসজিদের জামাতে বা মুকিমদের জামাতে অংশগ্রহণ করে মুসাফির ব্যক্তি মাসবুক হলে অর্থাৎ এক, দুই বা তিন রাকাত পেলে তাকে চার রাকাতই পড়তে হবে।
Advertisement
আবু মিজলায (রহ.) বলেন,
قُلتُ لِابْنِ عُمَرَ أَدْرَكْتُ رَكْعَةً مِنْ صَلَاةِ الْمُقِيمِينَ وَأَنَا مُسَافِرٌ؟ قَالَ صَلِّ بِصَلَاتِهِمْ.
আমি আবদুল্লাহ ইবনে ওমরকে (রা.) জিজ্ঞাসা করলাম, মুসাফির অবস্থায় যদি আমি মুকিমের পেছনে এক রাকাত পাই তাহলে করণীয় কী? জবাবে তিনি বললেন, মুকিমের মতো পূর্ণ নামাজ পড়বে। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক: ৪৩৮১)
মাগরিব ও ফজরে কসর নেই। এ দুই ওয়াক্তের ফরজ নামাজ যথাক্রমে তিন রাকাত ও দুই রাকাতই আদায় করতে হবে। ফরজ ছাড়া অন্য নামাজগুলো কসর হয় না। তাই সেগুলো আদায় করলে পরিপূর্ণভাবেই আদায় করতে হবে। বেতর তিন রাকাতই আদায় করতে হবে। তবে সুন্নাতে মুআক্কাদা নামাজ অর্থাৎ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ফরজের সাথে প্রতিদিন যে বারো রাকাত সুন্নাত নামাজ আমরা আদায় করে থাকি, এগুলো সফর অবস্থায় আবশ্যক থাকে না। ক্লান্তি বা ব্যস্ততা থাকলে এই নামাজগুলো ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে। তবে সময় সুযোগ থাকলে পড়ে নেওয়াই উত্তম।
ওএফএফ/এমএস