দেশের মৌলিক সংস্কারের লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে রূপরেখা জমা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটি বলছে, মৌলিক সংস্কার স্রেফ নির্বাচনী সংস্কার নয়। মৌলিক সংস্কার আসন-ভিত্তিক সংসদীয় দুই-তৃতীয়াংশের জোরে করা সংবিধান সংশোধনীও নয়। মৌলিক সংস্কারের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সাংবিধানিক ব্যবস্থায় ক্ষমতার ভারসাম্য, জবাবদিহি ও বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত হবে।
Advertisement
মঙ্গলবার (৬ মে) সকাল সাড়ে ১০টার পর জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে এই রূপরেখা জমা দিয়েছে দলটি। এদিন সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দলটির সদস্যসচিব আখতার হোসেনের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল বৈঠকে অংশ নেয়।
এনসিপি জানিয়েছে, গণতান্ত্রিক রীতি ও প্রক্রিয়া পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা, যেখানে জনগণের ভোট, মতামত ও অংশগ্রহণই হবে নীতিনির্ধারণের মূল ভিত্তি। ক্ষমতার ভারসাম্য ও বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করা, যেন কোনো এক ব্যক্তি দল বা প্রতিষ্ঠান বা শাসনব্যবস্থার ওপর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে না পারে। স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকর রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান গঠন করা, বিশেষ করে নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন সংস্থা, মহা হিসাব নিরীক্ষক প্রভৃতি। সাংবিধানিক সুরক্ষা ও সংশোধন প্রক্রিয়ায় জন-অংশগ্রহণ সংযুক্ত করা, যেন নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার শাসন ব্যবস্থা রক্ষিত থাকে এবং জনগণের অনুমতি ছাড়া তা পরিবর্তন করা না যায়।
মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবে যেসব বিষয় এনেছে দলটি সাংবিধানিক ব্যবস্থা, নির্বাহী ক্ষমতার ভারসাম্য, স্বাধীন ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন, সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের বিধান, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, সাংবিধানিক পদে নিয়োগ, নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার, দুদক সংস্কার, স্থানীয় নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার এবং জনপ্রশাসন সংস্কার।
Advertisement
এনসিপি বলছে, বাংলাদেশের সংবিধান এবং রাষ্ট্রকাঠামোর মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন যার মাধ্যমে ক্ষমতার ভারসাম্য, জবাবদিহি ও নাগরিক অধিকারের নিশ্চয়তা তথা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা যায়।
আরও পড়ুন ঐকমত্য কমিশনকে রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারের ‘রূপরেখা’ দিলো এনসিপি সংস্কার কমিশন নিয়ে দলগুলোর মধ্যে নানা মতানৈক্য দেখা দিচ্ছে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ পদ্ধতির সমর্থন এনসিপিরসংস্কারের লক্ষ্য সম্পর্কে এনসিপি বলছে, শাসনব্যবস্থাকে স্বচ্ছ, বিকেন্দ্রীকরণ এবং অংশগ্রহণমূলক করা; দলীয় আধিপত্য হ্রাস করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা নিশ্চিত করা; বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা ও নৈতিক শুদ্ধতা বজায় রাখা; জনগণের প্রত্যক্ষ মতামতের ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধনের বিধান চালু করা এবং তরুণ ও নারীদের রাজনীতিতে সম্পৃক্তির সুযোগ বাড়ানো।
মৌলিক সংস্কারের বিষয় ও আওতা১. জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠন: রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগকে জবাবদিহির মধ্যে রাখার উদ্দেশ্যে একটি জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠন করা প্রয়োজন। এই কাউন্সিল সাংবিধানিক পদগুলোতে নিয়োগদান করবে।
২. দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা: ‘ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট’ তথা আসনভিত্তিক নিম্নকক্ষ এবং ভোটের আনুপাতিক হারে উচ্চকক্ষ গঠিত হবে।
Advertisement
উচ্চকক্ষের প্রধান প্রধান কাজ হবে-
• সংবিধান সংশোধনে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে পাস হতে হবে।
• নিম্নকক্ষে উত্থাপিত বিল পর্যালোচনা ও সুপারিশ প্রস্তাব।
• আন্তর্জাতিক চুক্তির ক্ষেত্রে উচ্চকক্ষের অনুমোদন।
• সরকারি সংস্থাগুলোর কার্যক্রম মনিটরিং।
৩. সংসদ সদস্যরা পার্লামেন্টে স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ করতে পারবেন। পাশাপাশি সরকারের স্থিতিশীলতাও যেন রক্ষিত হয় সে ধরনের সাংবিধানিক ব্যবস্থা থাকতে হবে।
৪. ভোটার বয়স ১৬; প্রার্থীর বয়স ২৩।
৫. তথ্য প্রাপ্তির অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান।
৬. নারীর ক্ষমতায়ন ও প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি: সরাসরি ১০০ আসনে নারী সংসদ সদস্য।
৭. সংবিধান সংশোধনে গণভোট: মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ ভোটে সংশোধনী ঠেকানোর লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনীর ক্ষেত্রে গণভোটের প্রয়োজন হবে।
৮. মৌলিক অধিকারবিরোধী দমনমূলক আইন ও সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৩(৩) এর সংস্কার; ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল; সংবিধানের ৩৩(৩) অনুচ্ছেদের প্রতিরোধমূলক আটকের ধারা সংস্কার; আটকের কারণ জানাতে হবে এবং আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে দিতে হবে; ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে হবে।
গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনীতে এনসিপির প্রস্তাবনির্বাহী ক্ষমতার ভারসাম্য-
১. প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ও ক্ষমতার সীমা: ক. জীবনে সর্বোচ্চ দুইবার প্রধানমন্ত্রী হওয়া যাবে; খ. দলনেতা, প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা একই ব্যক্তি হতে পারবেন না।
২. ছায়া কেবিনেট: পার্লামেন্টের বিরোধীদল ছায়া কেবিনেট গঠন করতে পারবে। বিরোধীদলীয় সাংসদের সমন্বয়ে ছায়া কেবিনেটের কাজ হবে—
• সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ।
• সরকারের নীতিনির্ধারণ ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের সমালোচনা ও বিকল্প প্রস্তাব উপস্থাপন।
• সংসদে বিশেষজ্ঞ মতামত দিয়ে আলোচনার মান উন্নত করা।
• জনমত গঠনে সরকারবিরোধী অবস্থানকে তথ্যভিত্তিক ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া।
৩. সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রধান বিরোধীদল থেকে হতে হবে: আইন দ্বারা নির্ধারিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি থাকবে। এসব কমিটির মধ্যে প্যাক (পিএসি), পরিকল্পনা, জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র ইত্যাদি মন্ত্রণালয়ের প্রধান অবশ্যই বিরোধীদল থেকে হওয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৪. প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট দেওয়া যাবে। স্বাধীন ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন নিয়ে দলটির অবস্থান
• জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের (এনসিসি) মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ।
• নিজস্ব প্রশাসনিক কাঠামো ও বাজেট প্রণয়নের ক্ষমতা।
• কমিশনারদের জবাবদিহি ও জুডিশিয়াল রিভিউ: গুরুতর অনিয়ম, পক্ষপাতিত্ব, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার বা সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠলে তা ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল’ কর্তৃক তদন্তযোগ্য হবে।
• নির্বাচনী সীমানা পুনর্নির্ধারণ নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নয়; একটি স্বাধীন, অরাজনৈতিক ও সাংবিধানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত নির্বাচনী সীমানা কমিশন গঠন করতে হবে।
• টাকা দিয়ে ভোট কেনার প্রচেষ্টাকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা।
• গেজেট প্রকাশের পরও জালিয়াতির প্রমাণ মিললে ফলাফল বাতিল।
• প্রবাসীদের ভোটাধিকার: পোস্টাল ব্যালট, দূতাবাসভিত্তিক ভোটের বিধান এবং নিরাপদ অনলাইন ভোটিং ব্যবস্থা।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে যে প্রস্তাব দিয়েছে দলটিবিচার বিভাগের নিজস্ব প্রশাসনিক সচিবালয় গঠন; সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন; প্রধান বিচারপতির জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নিয়োগ; বিচারপতি নিয়োগে জুডিশিয়াল কমিশন ও মেধাভিত্তিক পরীক্ষা; আপিল বিভাগে বিচারপতি পদোন্নতিতে নিরপেক্ষ মূল্যায়ন পদ্ধতি এবং বিভাগীয় শহরগুলোতে হাইকোর্ট স্থায়ী আসন স্থাপন।
সাংবিধানিক পদে নিয়োগে এনসিপির সুপারিশ সাংবিধানিক পদগুলোতে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের মাধ্যমে নিয়োগের কথা বলছে দলটি। সেক্ষেত্রে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) হবে একমাত্র সংস্থা যার সুপারিশের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি সাংবিধানিক পদগুলোতে নিয়োগ দেবেন।
পদগুলো হলো— প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও সব নির্বাচন কমিশনার, মহা-হিসাব নিরীক্ষক, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, তথ্য কমিশন, স্থানীয় সরকার কমিশন, শ্রম কমিশন, পুলিশ কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন ও আইন দ্বারা নির্ধারিত অন্যান্য সংস্থার প্রধান।
আরও পড়ুন এনসিপিতে পদ পেলে সরকারি ‘চাকরি ছাড়বেন’ প্রাথমিকের কিছু শিক্ষক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রধান বিরোধী দল থেকে নেওয়ার পক্ষে এনসিপি নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে অবস্থান জানালো এনসিপিতবে দলটি বলছে, ব্যতিক্রম হিসেবে প্রতিরক্ষা বাহিনী ও অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যতীত সব সাংবিধানিক পদে নিয়োগের দায়িত্ব থাকবে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের হাতে।
দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার নিয়ে যা আছে রূপরেখায় জাতীয় নাগরিক পার্টি বলছে, দুদককে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে। সরকারি ও বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ক্ষমতায় স্বাধীনতা দিতে হবে।
দলটি বলছে, বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইনের ৩২(ক) ধারায় বলা হয়েছে, সরকারি কর্মকর্তা বা বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা দায়ের করার জন্য সরকারের পূর্বানুমতি নিতে হয়। এই বিধানটি অনেক সময় দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। বর্তমান আইনে থাকা ৩২(ক) ধারাটি বাতিলের প্রস্তাব দিয়েছে এনসিপি।
এজন্য দুদককে সরকারি ও বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি মামলা দায়ের, তদন্ত এবং গ্রেফতারের পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদানের দাবি জানিয়েছে দলটি।
স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা সংস্কারে দলটি বলছে, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন ব্যবস্থা বাতিল করতে হবে। স্থানীয় শাসন নয়, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে। ‘রাইট টু রিকল ব্যবস্থা’ প্রবর্তন করতে হবে।
এনসিপি জানিয়েছে, নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় জনপ্রশাসন সংস্কার করতে হবে। সেক্ষেত্রে নাগরিক সেবা নিশ্চিতকরণ আইন প্রণয়ন, বিদ্যমান সিটিজেন চার্টারসমূহের শক্তিশালী আইনি ভিত্তি তৈরি, নাগরিক সেবা প্রদান ও অভিযোগ প্রতিকার নিশ্চিত করতে প্রশাসনিক ন্যায়পাল হিসেবে স্বাধীন সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান ‘নাগরিক সেবা ও অভিযোগ প্রতিকার কমিশন’গঠন করতে হবে।
এছাড়া সেবা প্রদানের সঙ্গে সেবা প্রদানকারী কর্মচারীর পারফরম্যান্স মূল্যায়নের সরাসরি সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কোনো কর্মচারী ইচ্ছাকৃতভাবে সেবা প্রদান না করলে বা তার হয়রানির অভিযোগ প্রমাণিত হলে আপিল কর্তৃপক্ষ বা উল্লিখিত প্রস্তাবিত কমিশন দায়ী কর্মচারীর বিরুদ্ধে তার এসিআর হতে ‘ডিমেরিট পয়েন্ট’ হিসেবে নম্বর কর্তনের আদেশ প্রদান করতে পারবে মর্মে বিধান করতে হবে।
সেবা প্রদান নিশ্চিতকরণ, সেবা সহজীকরণ, ই-গভর্ন্যান্স, সর্বোপরি সুশাসন নিয়ে কাজ করার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার ইউনিট, গভর্ন্যান্স ইনোভেশন ইউনিট এবং এটুআই-কে একত্রিত করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে নতুন ‘প্রশাসনিক উন্নয়ন এবং সংস্কার বিভাগ’ সৃজন করা যেতে পারে।
আইনকানুন এবং বিধি-বিধানকে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও আধুনিক করার উদ্দেশ্যে একটি টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে। এই টাস্কফোর্স স্টেকহোল্ডারদের মতামত গ্রহণপূর্বক প্রতিনিয়ত আইনকানুন এবং বিধি-বিধান হালনাগাদ করবে।
সেবা প্রদান পদ্ধতি সহজতর করা, ধাপগুলো যথাসম্ভব কমিয়ে ফেলা, অনলাইনভিত্তিক সহজ আবেদন ও নিষ্পত্তি পদ্ধতি বিনির্মাণ করা, সেবার গতিপ্রকৃতির অনলাইন ট্র্যাকিং প্রতিষ্ঠা করা, শুধু যেসব কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট সেবাটির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সেগুলোই চাওয়া, সরকারি এক অফিসের তথ্য/কাগজপত্র/রেকর্ড অন্য অফিস কর্তৃক অনলাইনে যাচাই করা। যেসব সেবায় একাধিক দপ্তরের সংশ্লিষ্টতা আছে সেসব ক্ষেত্রে ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’চালু করা।
দলটি বলছে, সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের ওপর রাজনৈতিক চাপ এড়ানোর লক্ষ্যে পর্যাপ্ত আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। সেবা প্রক্রিয়াকরণে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রত্যেক সরকারি কর্মচারীর জন্য সেবা প্রক্রিয়াকরণের সময়সীমা নির্ধারণ করতে হবে। এর ওপর ভিত্তি করে একজন কর্মচারীকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কতটুকু কাজ করতে হবে সেটি যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে। এই নির্ধারিত কাজের বিপরীতে সম্পাদিত কাজের পার্থক্য বিবেচনায় রেখে তার পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করতে হবে। সেই সঙ্গে দপ্তরের মোট কাজের সঙ্গে একজন কর্মচারীর জন্য নির্ধারিত কাজ বিবেচনায় নিয়ে উপযুক্ত সংখ্যক কর্মচারীর পদায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
মৌলিক সংস্কার রূপরেখার বিষয়ে চানতে চাইলে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার জাগো নিউজকে বলেন, আমরা প্রথম ধাপের আলোচনা শোষ করেছি। আজ প্রথম ধাপের দ্বিতীয় দিনের আলোচনা ছিল। এরপর দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরু হবে। আমরা আশা করছি দেশের সব রাজনৈতিক দল এই সংস্কার প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হবে। এই সংস্কার তো জনগণেরই চাওয়া। রাজনৈতিক দলগুলোকে তো শেষ পর্যন্ত জনগণের কাছে ফিরে যেতে হবে।
সংস্কারের জন্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে নির্দিষ্ট কোনো সময়ের কথা উল্লেখ করেছেন কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংস্কারের জন্য কোনো টাইমফ্রেম নিয়ে আলোচনা হয়নি। এসব দ্বিতীয় ধাপের আলোচনায় তোলা হবে।
এনএস/ইএ/এএসএম