প্রচণ্ড গরমে একটু তৃপ্তি পেতে ডাবের পানি পানে জুড়ি নেই। তাই তো গ্রীষ্মের শুরুতেই বেড়েছে ডাবের চাহিদা। সারাদেশের মতো পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলায়ও জমে উঠেছে ডাবের বাজার। পানি মিষ্টি, স্বাদে উৎকৃষ্ট ও আকর্ষণীয় চেহারার কারণে এখানকার ডাবের কদর দেশজুড়ে। তবে ডাব ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, এ অঞ্চলের ডাব ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে উচ্চ দামে বিক্রি হলেও সঠিক দাম পাচ্ছেন না তারা।নেছারাবাদ উপজেলায় প্রতিদিন গড়ে ৫-৭ লাখ টাকার ডাব বেচাকেনা হয়। স্থানীয় গাছিরা গ্রামাঞ্চলে ঘুরে ডাব সংগ্রহ করেন। সাধারণ মানের ডাব ৪০-৪৫ টাকায় কেনা হয়, আর ভালো মানের ডাবের দাম পড়ে ৬০-৭০ টাকা পর্যন্ত। এই ডাব পাইকারদের কাছে ৫-১০ টাকা লাভে বিক্রি করেন গাছিরা।পাইকাররা ডাব ট্রাকে করে ঢাকাসহ অন্যান্য শহরে পাঠান। ঢাকায় গিয়ে একেকটি ডাবের দাম দাঁড়ায় ১৫০-২০০ টাকা। অর্থাৎ গ্রামে যে ডাব বিক্রি হয় ৫০ টাকায়, সেটি শহরে বিক্রি হচ্ছে তিনগুণ দামে।
Advertisement
আরও পড়ুন:
ফল চাষে ভাগ্য ফিরেছে সিরাজুলের গুরুদাসপুরে বাঙ্গি চাষে বিপাকে কৃষকেরা ফলের নাম খইয়া নাকি জিলাপি?কৃষি বিভাগ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডাব উৎপাদন থেকে ভোক্তার হাতে পৌঁছানো পর্যন্ত একাধিক ধাপে মধ্যস্বত্বভোগী যুক্ত থাকে। গাছি, পাইকার, পরিবহনকারী, শহরের খুচরা বিক্রেতা প্রত্যেকেই লাভের অংশ রেখে দেন। সেইসঙ্গে শহরে দোকান ভাড়া, শ্রমিক খরচ, পরিবহন ব্যয় এবং গরমে চাহিদা বৃদ্ধির কারণেও দাম বাড়ে।
নেছারাবাদের ডাব চাষি জসিম শেখ বলেন, ‘যে ডাব আমরা পরিশ্রম করে ফলাই, সেটা শহরে গিয়ে ২০০-৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। অথচ আমরা পাইকারের হাতে তুলে দিই মাত্র ৫০-৬০ টাকায়।’পেশায় একজন গাছি মো. মোস্তফা। তিনি বলেন, খুব সকালে গ্রামে গিয়ে ডাব কিনি। নারিকেল গাছের মালিকের সঙ্গে যে দাম ঠিক হয় সেই দামে আমরা ডাব কিনি। ডাব কেনা শেষ হলে দুপুরের পরে পাইকারদের কাছে নিয়ে আসা হয়।
Advertisement
আরও পড়ুন:
৮৫ জাতের আঙুর চাষে সফল কামরুজ্জামান ছাদ বাগানে আয়েশার সাফল্য, চারা যাচ্ছে বিভিন্ন জেলায় গারো পাহাড়ে আনারস চাষে নতুন সম্ভাবনাস্বরূপকাঠি উপজেলার মাহমুদকাঠি কুনিয়ারি, অলংকারকাঠি বানারীপাড়া, রায়ারহাটসহ উপজেলার আশপাশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ডাব কেনেন বলে জানান এই গাছি।
কথা হয় উপজেলার অলংকারকাঠি গ্রামের ডাব ব্যবসায়ী নুরুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি জানান, পাইকাররা গ্রামে গ্রামে গিয়ে কেউ দেড়শ, কেউ দুইশ পিস করে ডাব কিনে পাইকার বাজারে নিয়ে আসেন। পরে এসব ডাক ট্রাকে ভরে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয়।
ডাবের চাহিদা মেটাতে নেছারাবাদ উপজেলা বিশেষ ভূমিকা রাখছে জানিয়ে নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাগো নিউজকে বলেন, বসতঘরের আঙিনায় যেন বেশি করে নারিকেল গাছ লাগানো যায়, সেজন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এটি যেমন নিজেদের চাহিদা মেটাবে, তেমনি তারা আর্থিকভাবেও স্বাবলম্বী হবেন।
Advertisement
ইউএনও আরও বলেন, যদি কোনো ব্যক্তি নারিকেল গাছের বাগান করার উদ্যোগ নেন, তাহলে নেছারাবাদ উপজেলা প্রশাসন সার্বিক সহযোগিতা করবে।পিরোজপুর জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক দেবাশিস রায় বলেন, আমরা এর আগেও ডাবের বিষয়ে অভিযান পরিচালনা করেছি, আবারও করবো। অভিযান পরিচালনার সময় গুরুত্ব দেওয়া হবে কত টাকায় ডাব কেনা হচ্ছে আর কত টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে তার ওপর।
এসআর/এমএস