মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের আপিল শুনানি আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মুলতবি করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। সেদিন এ মামলার পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
Advertisement
মঙ্গলবার (৬ মে) দুপুরে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের বিচারপতির আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ শুনানি বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মুলতবি করেন। এর আগে এদিন সকাল ১০টার কয়েক মিনিট আগে মামলার শুনানি শুরু হয়েছিল।
এ টি এম আজহারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির সাংবাদিকদের এমন তথ্য জানিয়ে বলেন, আমরা আজ মামলায় ৯০ শতাংশ শুনানি করেছি। এরপর আগামী দিনে পরবর্তী ১০ শতাংশ শুনানি করবো।
আপিল বিভাগের এ টি এম আজহারুল ইসলামের মামলার শুনানি শুরু হয় সকাল ১০টার কিছু আগে। এরপর বেলা ১১টা পর্যন্ত শুনানি শেষে আদালত বিরতিতে যান। বিরতির পর দুপুর পৌনে ১২টায় আবার শুনানি শুরু হয়ে টানা দুপুর সোয়া ১টা পর্যন্ত শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। মামলার শুনানিতে সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেলসহ জামায়াতের কেন্দ্রীয় বেশ কয়েকজন নেতা ও বিপুল সংখ্যক আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এরপর দুপুর সোয়া ১টা পর্যন্ত শুনানি শেষে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
Advertisement
আদালত বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে আবারো শুনানি অনুষ্ঠিত হবে এবং ওইদিন আপিল বিভাগের কার্যতালিকার শীর্ষে থাকবে মামলাটি।
আদালতে আপিলের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শিশির মনির ও এসএম শাহজাহান। তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম। রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল, নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামীর আমির নুরুল ইসলাম বুলবুলসহ আরও অনেকে। আদালতে প্রথম সাতজন বিচারপতি শুনানি করেন। এ সময় এজলাস কক্ষ আইনজীবীতে পূর্ণ ছিল।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রংপুর অঞ্চলে গণহত্যা-হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, আটক, নির্যাতন ও গুরুতর জখম এবং বাড়িঘরে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের মতো ৯ ধরনের ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিল জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে।
Advertisement
২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়ে ২ নম্বর, ৩ নম্বর ও ৪ নম্বর অভিযোগে ফাঁসির দণ্ডাদেশ পান আজহারুল ইসলাম। এছাড়া ৫ নম্বর অভিযোগে অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অমানবিক অপরাধের দায়ে ২৫ বছর ও ৬ নম্বর অভিযোগে নির্যাতনের দায়ে ৫ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে শুনানির পর ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় ঘোষণা করেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। আপিল বিভাগের রায়ে ২, ৩, ৪ (সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে) ও ৬ নম্বর অভিযোগের দণ্ড বহাল রাখা হয়। আর ৫ নম্বর অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেওয়া হয়। ওইদিন আদালতে আসামিপক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী (প্রয়াত) খন্দকার মাহবুব হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন (প্রয়াত) অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
২০২০ সালের ১৫ মার্চ আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। ওই রায়ের রিভিউ চেয়ে ২০২০ সালের ১৯ জুলাই আপিল বিভাগে সংশ্লিষ্ট আবেদন করেছিলেন এটিএম আজহারুল ইসলাম। ২৩ পৃষ্ঠার পুনর্বিবেচনার এ আবেদনে মোট ১৪টি যুক্তি উপস্থাপন করা হয়।
পুনর্বিবেচনার আবেদনের শুনানি শেষে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে এটিএম আজহারুল ইসলামকে আপিলের অনুমতি দেন।
এফএইচ/এসএইচএস/এমএস/এএসএম