পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে বাংলাদেশ এখনো অনেকাংশে সড়কপথনির্ভর। বন্দরগুলো থেকে ৯৬ শতাংশ পণ্য দেশের বিভিন্ন জেলায় যায় সড়কপথে। বাকি মাত্র ৪ শতাংশ পণ্য পরিবহন হয় রেল ও নৌপথে। এতে জীবাশ্ম জ্বালানি বা ফসিল ফুয়েলের ব্যবহার বাড়ার পাশাপাশি বাড়ছে পরিবেশ দূষণ।
Advertisement
পণ্য পরিবহনে সড়কপথে চাপ কমিয়ে পরিবেশ দূষণ রোধে ‘গ্রিন রেলওয়ের’ উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। যেভাবে পরিবেশ দূষণ রোগে কিছু রুটে বৈদ্যুতিক ট্রেন চালানো হবে। এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প সম্প্রতি একনেক (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
‘গ্রিন রেলওয়ে পরিবহন প্রস্তুতিমূলক কারিগরি সহায়তা প্রকল্পে’ মোট ব্যয় ধরা হচ্ছে ৯৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা। যার মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ২৮ কোটি ৩৭ লাখ এবং বিশ্বব্যাংকের প্রকল্প ঋণ ৬৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ জানুয়ারি ২০২৫ থেকে ডিসেম্বর ২০২৬ পর্যন্ত।
প্রকল্পের প্রস্তুতিমূলক ব্যয় ধরা হচ্ছে ৯৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা। যার মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ২৮ কোটি ৩৭ লাখ এবং বিশ্বব্যাংকের প্রকল্প ঋণ ৬৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ জানুয়ারি ২০২৫ থেকে ডিসেম্বর ২০২৬ পর্যন্ত
Advertisement
এ প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে রেলপথ ঢেলে সাজানোসহ কয়েকটি রেলস্টেশন অবকাঠামোও নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের মাধ্যমে কীভাবে ডিজেল থেকে বের হয়ে ইলেকট্রিক রেলপথ নির্মাণ করা যায়, সে বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে পরামর্শক নিয়োগ করা হবে। পরামর্শকেরা সাধারণত রেলপথের সমগ্র বিষয়ে ফিজিবিলিটি স্টাডি (সম্ভাব্যতা যাচাই) করবেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, গ্রিন রেলপথ নির্মাণে প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা মূলত সম্ভাব্যতা যাচাই (ফিজিবিলিটি স্টাডি) করবো। পরামর্শকেরা মূল কাজ বাস্তবায়ন করবেন। তাদের সুপারিশে ছোট ছোট প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।
আরও পড়ুন
পরিবেশবান্ধব হবে রেলপথ, চাপ কমবে সড়কে রেলের ১৫ কোটি টাকার কাজে ১৪ কোটিই পরামর্শক ব্যয় পাঁচ রেল প্রকল্পে ব্যয় কমছে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা রেলে এক টাকা আয় করতে আড়াই টাকা খরচ হয়তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী ক্লাইমেট চেঞ্জ বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশব্যাপী পরিবেশবান্ধব রেলপথ নির্মাণে বড় ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ মেগা উদ্যোগ বাস্তবায়নে অর্থায়ন করবে বিশ্বব্যাংক। তবে এর আগে আমাদের প্রকল্পগুলোর ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) চূড়ান্ত করতে হবে। আমরা দ্রুততম সময়ে এগুলো চূড়ান্ত করবো।
Advertisement
বর্তমানে রেলপথের ইঞ্জিনে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয় ডিজেল। এতে বাড়ছে পরিবেশদূষণ। এ দূষণ রোধে কিছু রুটে বৈদ্যুতিক ট্রেন চালানোর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে
সড়কে পণ্য পরিবহনের চাপ কমাতে দেশের রেলপথগুলো নতুনভাবে ঢেলে সাজানোর মহাপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ মহাপরিকল্পনায় বিনিয়োগ করবে বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী বিশ্বব্যাংক। বর্তমানে রেলপথের ইঞ্জিনে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয় ডিজেল। এতে বাড়ছে পরিবেশদূষণ। এ দূষণ রোধে কিছু রুটে বৈদ্যুতিক ট্রেন চালানোর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
রেলওয়ে জানায়, ‘গ্রিন রেলওয়ে’ বাস্তবায়নে কয়েকটি মেগা প্রকল্প নেওয়া হবে। এসব প্রকল্পের রুট নির্ণয় ও সম্পূর্ণ বাস্তবায়নে কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে, সেটা নির্ণয় করার জন্য টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রজেক্ট প্রোপোজাল (টিএপিপি) হাতে নিতে যাচ্ছে সরকার। গ্রিন রেলওয়ে রূপ দিতে প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয় কত হবে, ডিপিপি কবে নাগাদ সম্পন্ন করতে হবে, বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য কী এবং কী ধরনের কার্যক্রম থাকবে তা-ও বিশ্লেষণ করা হবে।
আপনারা জানেন দেশের বন্দরগুলো থেকে ৯৬ শতাংশ মালামাল সড়কপথে সারাদেশে সাপ্লাই করা হয়। এতে জীবাশ্ম জ্বালানি বা ফসিল ফুয়েলের ব্যবহার হয় অনেক বেশি।- আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান
গ্রিন রেলওয়ে বাস্তবায়নে কোন বিষয়ে বেশি জোর দেওয়া হবে, জানতে চাইলে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আপনারা জানেন দেশের বন্দরগুলো থেকে ৯৬ শতাংশ মালামাল সড়কপথে সারাদেশে সাপ্লাই করা হয়। এতে জীবাশ্ম জ্বালানি বা ফসিল ফুয়েলের ব্যবহার হয় অনেক বেশি।
‘আমরা যদি সড়কপথের ওপর চাপ কমিয়ে রেলওয়ের মাধ্যমে পণ্য পরিবহন করি তবে কম জ্বালানি পুড়িয়ে স্বল্প খরচে বন্দরগুলো থেকে মালামাল সারাদেশে সাপ্লাই দিতে পারবো’- যোগ করেন রেলওয়ের এ কর্মকর্তা।
এমওএস/এমকেআর/এমএস