চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আইন অনুষদ আয়োজিত সপ্তম একে খান স্মারক আইন বক্তৃতা অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতির পাশে বিতর্কিত একজন শিক্ষকের উপস্থিতি নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে একাধিক ছাত্রকে ‘শিবির’ ট্যাগ দিয়ে নির্যাতন, জুলাইয়ে সরাসরি ছাত্র হত্যার উস্কানির অভিযোগ রয়েছে।
Advertisement
ওই শিক্ষকের নাম হাসান মুহাম্মদ রোমান শুভ। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুষদের সহকারী অধ্যাপক।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সহকারী অধ্যাপক রোমান শুভ অতীতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমন, প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার, রাজনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি এবং ছাত্রসংগঠনের নির্যাতনে মদদ দেওয়ার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০২৪ সালের ২০ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ‘ছাত্র হত্যা সমর্থনের’ অভিযোগ এনে শিক্ষার্থীরা তার অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। পরদিন শিক্ষার্থীরা পাঁচ দফা দাবিতে লিখিতভাবে তার অপসারণ দাবি করেন। একইসঙ্গে তার বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলন, মতাদর্শগত পক্ষপাত ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ তোলেন তারা। তবে এত অভিযোগ থাকলেও রোমানের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।
সহকারী অধ্যাপক রোমানের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রধান হিসেবে রয়েছেন অধ্যাপক ড. মো. নেছারুল করিম। তিনি বলেন, ‘তদন্ত এখনো শুরুই হয়নি। অভিযুক্তের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। প্রতিবেদন কবে জমা হবে, তা বলা যাচ্ছে না।’
Advertisement
অভিযুক্ত শিক্ষকের ফ্যাসিবাদী আচরণের ভুক্তভোগী ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জুবায়ের হোসেন সোহাগ বলেন, ‘শিবির’ সন্দেহে শিক্ষক রোমান শুভ আমাকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন, ফোন চেক করেন এবং মানসিকভাবে চাপ প্রয়োগ করে মুচলেকা লিখিয়ে নেন। পরে আমাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আমাকে ‘দেশদ্রোহী’ হিসেবে চিহ্নিত করার অপচেষ্টা চালানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাদী হয়ে আমার নামে তখন মামলা করে। সেই মামলায় আমাকে তিন মাস জেল খাটতে হয়।
চবি ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক তামজিদ উদ্দিন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ছাত্রলীগ যখন আমাকে প্রক্টর অফিসের সিসি ক্যামেরা অফ করে মারছিল, তখন এই সহকারী প্রক্টর রোমান ছাত্রলীগকে সহায়তা করেছিলেন। এই সহকারী প্রক্টর ও সম্ভবত শহীদুল ইসলাম নামের আরেক সহকারী প্রক্টর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কর্মচারী ছাত্রলীগকে উৎসাহিত করেছিলেন। উনি এখন কেমনে সভা-সেমিনার করেন? শিগগির বর্তমান প্রশাসনের কাছে ওনার বিচার ও পদত্যাগ চাই। অন্যথায় পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হবে।’
আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মু. জাফর উল্লাহ তালুকদার বলেন, ‘তিনি অনুষ্ঠানে আসবেন কি না, সেটা আমার এখতিয়ার নয়। বিষয়টি প্রশাসনের।’
জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘(অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে) তদন্ত কমিটির কাজ চলমান। প্রতিবেদন জমার সময়সীমা পার হয়ে গেলেও আরও সময় চাওয়া হয়েছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদন এখনো আসেনি।’
Advertisement
আহমেদ জুনাইদ/এসআর/এমএস