আইন-আদালত

বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্কে শাস্তির বিধান নিয়ে হাইকোর্টের রুল

বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্কে শাস্তির বিধান নিয়ে হাইকোর্টের রুল

বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্কে শাস্তির বিধান কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবকে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

Advertisement

এ সংক্রান্ত বিষয়ে দায়ের করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রোববার (৪ মে) হাইকোর্টের বিচারপতি হাবিবুল গণি ও বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তজরুল হোসাইনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।

রিটকারী আইনজীবী ইশরাত হাসান জানান, নতুন নারী শিশু আইনে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের শাস্তি ৭ বছর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড বিধান রাখা হয়েছে। এই আইনে পুরুষের শাস্তির কথা বলা হয়েছে কিন্তু নারীর বিষয়ে বলা হয়নি।

দুজনের সম্মতিতে শারীরিক সম্পর্ক থাকার পর কোনো নারী যদি বলে যে পুরুষটি প্রতিশ্রুতি রাখেনি এবং মামলা করে তবে সেটা এই আইনে শাস্তির আওতায় পড়বে। এমনকি বিবাহিত বা অবিবাহিত নারী-পুরুষ কিনা আইনে তাও উল্লেখ করা হয়নি। শুধু মাত্র একজনকে দায়ী করে আইন করা অসাংবিধানিক। তাই আইন বাতিল চেয়ে রিট করেন তিনি।এর আগে, বিয়ের প্রলোভনের মাধ্যমে যৌনকর্মের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি দণ্ডনীয় হবেন—নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে যুক্ত করা এমন বিধানের বৈধতা নিয়ে রিট হয়। এ–সংক্রান্ত বিধানটি সংবিধানের সঙ্গে কেন সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, এ বিষয়ে রুল চাওয়া হয়েছিল রিটে। ‘এইড ফর ম্যান ফাউন্ডেশনের’ পক্ষে সংগঠনের সেক্রেটারি এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. রাশিদুল হাসান আবেদনকারী হিসেবে রিটটি করেছেন। তাদের পক্ষে আইনজীবী ইশরাত হাসান সোমবার (২৮ এপ্রিল) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি দায়ের করেন।

Advertisement

আইনজীবী ইশরাত হাসান ওই দিন বলেন, ২০০৮ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন প্রণয়ন করা হয়। আইনটি সময়োপযোগী করার লক্ষ্যে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে আইনে সংশোধনী আনা হয়। চলতি বছরের ২৫ মার্চ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করা হয়।

অধ্যাদেশের ৫ ধারায় বলা হয়, ওই আইনের ধারা ৯ (ক) এর পর নতুন ধারা ৯ (খ) সন্নিবেশিত হবে। আর ৯ (খ) ধারায় বিয়ের প্রলোভনের মাধ্যমে যৌনকর্ম করলে দণ্ডের বিষয়ে বলা আছে। এর ভাষ্য, যদি কোনো ব্যক্তি দৈহিক বলপ্রয়োগ ছাড়া বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ১৬ বছরের বেশি বয়সের কোন নারীর সঙ্গে যৌনকর্ম করেন এবং যদি ওই ঘটনার সময় ওই ব্যক্তির সঙ্গে ওই নারীর আস্থাভাজন সম্পর্ক থাকে, তাহলে ওই ব্যক্তি অনধিক সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডে ও দণ্ডনীয় হবেন।

২০২৫ সালের অধ্যাদেশের ৫ ধারার মাধ্যমে সন্নিবেশিত ৯ (খ) ধারার বৈধতা নিয়ে মূলত রিটটি করা হয়েছে বলে জানান রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্ক অপরাধ হিসেবে ৯ (খ) ধারায় বলা হয়েছে, যা মূল আইনে ছিল না। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করার পর, তা না রাখলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সাত বছরের দণ্ড হবে বলা হয়েছে।

শুধু ‘বিয়ের প্রতিশ্রুতি’ না রাখার কারণে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হলে তা ব্যক্তিস্বাধীনতা ও নারীর সম্মতির অধিকার লঙ্ঘন করে। প্রতিশ্রুতি না রাখার কারণে শুধু লিঙ্গের ভিত্তিতে একজনকে অপরাধী এবং অপরজনকে অপরাধী হিসেবে গণ্য না করার সুযোগ নেই। সংবিধান অনুসারে আইনের চোখে সবাই সমান। যখন ঘটনা ঘটছে, তখন তা অপরাধ নয়, পরবর্তী সময়ে প্রতিশ্রুতি না রাখলে তা অপরাধ হিসেবে দেখা হয়েছে বিধানটিতে। এমন অনুমান বা ধারণার ভিত্তিতে অপরাধকে সংজ্ঞায়িত করা যায় না।

Advertisement

রিটের আবেদনে, ২০২৫ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশের ৫ ধারার মাধ্যমে সন্নিবেশিত ৯খ ধারা কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, এ বিষয়ে রুল চাওয়া হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবকে বিবাদী করা হয়েছে রিটে।

এফএইচ/জেএইচ/এমএস