জাতীয়

খাস কালেকশনের নামে রাজস্বের টাকা ভাগাভাগি

খাস কালেকশনের নামে রাজস্বের টাকা ভাগাভাগি

• পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েও বিক্রি করেনি টেন্ডার ফরম• অর্ধেকের কম টাকায় খাস কালেকশনের দায়িত্বে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা

Advertisement

কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ের কর্ণফুলী ও আনোয়ারা উপজেলার বড় অংশের মানুষ চট্টগ্রাম নগরী থেকে যাতায়াত করেন নৌকায়। নদীর ঘাটগুলো ইজারা দিয়ে রাজস্ব আদায় করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। কর্ণফুলীর তেমনি একটি ঘাট সল্টগোলা।

নগরীর বন্দর ৫ নম্বর গেট সংলগ্ন সল্টগোলা ঘাট থেকে কর্ণফুলী উপজেলার ডাঙ্গারচর যাতায়াত করা হয়। ঘাটটি গত এক বছরের বেশি সময় ধরে ইজারা না দিয়ে খাস কালেকশনের নামে সরকারি রাজস্বের লাখ লাখ টাকা ভাগাভাগির অভিযোগ উঠেছে।

হিসাব মতে, খাস কালেকশনের কারণে শুধু সল্টগোলা ঘাটে বছরে প্রায় ২৫ লাখ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। অভিযোগ রয়েছে, সল্টগোলা ঘাট ইজারা দেওয়ার জন্য দ্বিতীয়বার পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েও বিক্রি করা হয়নি টেন্ডার ফরম। ইজারা না দিয়ে নামমাত্র মূল্যে দৈনিকভিত্তিতে খাস কালেকশনের দায়িত্ব দেওয়া হয় নগরীর লালখান বাজার এলাকার মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সম্পাদক আবদুল আহাদ রিপনকে। খাস কালেকশনের নামে সরকারি রাজস্বের টাকা ভাগাভাগিতে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারাও জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সল্টগোলা ঘাটটি ১৪৩১ বাংলা সনেও (২০২৪ সালের ১৪ এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের ১৩ এপ্রিল) খাস আদায় করা হয়। এর মধ্যে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ঘাটটিতে আওয়ামী লীগের লোকজন খাস আদায় করে চসিকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে রাজস্ব ভাগাভাগি করতেন। পরে ঘাটের দখল নেয় স্থানীয় বিএনপি নেতার লোকজন। কয়েকজন নেতা ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত খাস সংগ্রহ করে।

আমরা দীর্ঘদিন ধরে সল্টগোলা ঘাটের পাটনিজীবী হিসেবে রয়েছি। এখন ঘাটটি ইজারা দেওয়ার কথা থাকলেও মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) থেকে তিনদিন সিটি করপোরেশনে গিয়ে ফরম কিনতে পারিনি। এস্টেট শাখায় ফরম কিনতে গেলে কেউ কোনো কথা বলে না।- মো. ওসমান

তবে চলতি ১৪৩২ বাংলা সনেও (১৪ এপ্রিল ২০২৫ থেকে ১৩ এপ্রিল ২০২৬) ঘাটটি ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সিটি করপোরেশন। প্রথমবার টেন্ডার আহ্বান করলেও স্থানীয় বিএনপি নেতাদের দাপটে অভিজ্ঞ অনেক পাটনিজীবী (সাম্পান মাঝি) এবং ঠিকাদার ওই টেন্ডারে অংশ নিতে পারেননি। কাঙ্ক্ষিত দর না পাওয়ায় গত ১৬ এপ্রিল দ্বিতীয়বারের মতো ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সিটি করপোরেশন।

জানা যায়, ১৬ এপ্রিল প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত টেন্ডার ফরম সংগ্রহ এবং ৩০ এপ্রিল জমাদানের সূচি উল্লেখ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর আগ্রহী লোকজন সিটি করপোরেশনে সল্টগোলা ঘাটের ফরম কিনতে গেলে কোনো কারণ ছাড়াই ফরম বিক্রি করা হয়নি।

Advertisement

২২ এপ্রিল থেকে ২৪ এপ্রিল টেন্ডার শিডিউল কিনতে না পেরে ফেরত আসা ডাঙ্গারচর এলাকার মো. ওসমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে সল্টগোলা ঘাটের পাটনিজীবী হিসেবে রয়েছি। এখন ঘাটটি ইজারা দেওয়ার কথা থাকলেও মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) থেকে তিনদিন সিটি করপোরেশনে গিয়ে ফরম কিনতে পারিনি। এস্টেট শাখায় ফরম কিনতে গেলে কেউ কোনো কথা বলে না।’

আরও পড়ুন ২০ বছরে অর্ধেকে নেমেছে সেন্টমার্টিনের নারিকেল গাছ ঋণগ্রস্ত পেট্রোবাংলাকে দুই হাজার কোটি টাকা ‘নিরাপদ ঋণ’ বিপিসির রাজনৈতিক নেতাদের দখলে ‘জুলাই আন্দোলনের গ্রাফিতি’

মো. মামুন নামের আরেক ইজারাদার বলেন, ‘আমি সিটি করপোরেশনে গত কয়েকদিন গিয়ে সল্টগোলা ঘাটের শিডিউল কিনতে পারিনি।’

এ বিষয়ে চসিকের এস্টেট অফিসার কামরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘যেহেতু ঘাটটি সংস্কারের বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত অপেক্ষমাণ ছিল, তাই যারা শিডিউল কিনতে এসেছিল তাদের অনুরোধ করে ফরম বিক্রি করিনি। সোমবার সল্টগোলা ঘাটের ইজারা কার্যক্রম প্রত্যাহার করা হয়।’

এখন হিসাব করে কালেকশনগুলো (খাস) জমা দিলে কত টাকা জানা যাবে। মাত্র দায়িত্বটা পেয়েছি। কালেকশনগুলো এক জায়গায় জোগাড় করে আমাদের সাহেবরা (চসিকের কর্মকর্তা) আছে না, আরও অফিসার আছে না, তারা যত টাকা জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেয়, তত টাকা জমা দেওয়া হবে।- চসিকের এস্টেট শাখার চেইনম্যান মো. সিরাজ উদ্দিন

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রথম টেন্ডারে কাঙ্ক্ষিত ইজারাদার না পাওয়ায় ইতোমধ্যে ওই ঘাটে আবারও খাস কালেকশন শুরু করেছে চসিক।

শিডিউল ফরম কেনাবেচার শেষ দিনের একদিন আগে ২৮ এপ্রিল সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগ একটি নোটিশ জারি করে। ওই নোটিশে উল্লেখ করা হয়- ‘সল্টগোলা ঘাটের সংস্কার কার্যক্রম চলমান রাখার বিষয়ে চসিক কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ায় ইজারা বিজ্ঞপ্তি থেকে সল্টগোলা ঘাটের নাম প্রত্যাহার করা হলো।’

জানা যায়, প্রচলিত রীতি অনুযায়ী বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ থেকে এক বাংলা সালের জন্য খেয়াঘাট ইজারা দেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী পহেলা বৈশাখের আগেই যাবতীয় টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে ১৪ এপ্রিল (১ বৈশাখ) থেকে ঘাটে নতুন ইজারাদার আসার কথা।

আগ্রহী ইজারাদার ও সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী সল্টগোলা ঘাটে সম্ভাব্য ইজারামূল্য নির্ধারণ করা হয় ৩৭ লাখ ৩৯ হাজার ৪৪৬ টাকা। এর সঙ্গে ৫ শতাংশ আয়কর এবং ১৫ শতাংশ ভ্যাট মিলে পুরো বছরের জন্য ইজারামূল্য দাঁড়ায় ৪৪ লাখ ৩৭ হাজার ৩৩৫ টাকা, যা দৈনিক গড়ে ১২ হাজার ২৯৪ টাকা পড়ে।

সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ২৮ এপ্রিল একদিনের জন্য খাস আদায়ের ভ্যাট-ট্যাক্স মিলে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা চসিকে জমা পড়েছে। ওই হিসাব অনুযায়ী, শুধু সল্টগোলা ঘাটে পুরো বছরে সরকার রাজস্ব হারাবে ২৪ লাখ ৭৯ হাজার ৮১০ টাকা। এই টাকা যাচ্ছে খাস আদায়কারী বিএনপি নেতা ও সিটি করপোরেশনের সিন্ডিকেটভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পকেটে।

ওখানে তো আমরা খাস কালেকশন করছি। সরকারের রেভিনিউ আসছে। হয়তো বেশি আর কম। আমরা সংস্কার করে আবার টেন্ডার আহ্বান করবো।- চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম

জানা যায়, বর্তমানে সল্টগোলা ঘাটে খাস আদায় করছেন মো. ফয়সাল নামে কর্ণফুলীর এক যুবদল নেতা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট এক পাটনি বলেন, ‘ঘাট দিয়ে প্রতিদিন একপথে দুই হাজার থেকে ২২শ যাত্রী যাতায়াত করে। এতে জনপ্রতি ১৫ টাকা করে ৩০ হাজার টাকার বেশি খাস কালেকশন হয়। যাত্রী পারাপারে দুটি নৌকা ব্যবহার করা হয়। নৌকাগুলোর দিনপ্রতি ভাড়া ৮শ টাকা। একেক নৌকায় সাড়ে তিন হাজার টাকার জ্বালানি খরচ হয়। খরচ বাদ দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১৫-২০ হাজার টাকা সাশ্রয় হয়।’

জাগো নিউজের হাতে আসা ১০০ টাকার স্ট্যাম্পের একটি চুক্তিপত্রে দেখা যায়- ঘাটটির খাস কালেকশনের জন্য সিটি করপোরেশনের এস্টেট শাখার চেইনম্যান মো. সিরাজ উদ্দিনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। লোকবল যাত্রী পারাপারে নৌকা/সাম্পান ব্যবস্থাপনাসহ অন্য সহযোগিতার জন্য নগরীর লালখান বাজার এলাকার আবদুল মালেকের ছেলে মো. আবদুল আহাদকে সাময়িক দায়িত্ব দেওয়া হয়।

চুক্তিতে দেখা যায়, আবদুল আহাদের পক্ষে পাঠানটুলি এলাকার আক্তার হোসেন বাবুল নামে আরেক বিএনপি নেতা ডাঙ্গারচর এলাকার আনোয়ারুল আজিমের ছেলে আল ফয়সালকে ঘাট পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা হয় আল ফয়সালের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঘাটটি আবদুল আহাদ নিয়েছেন। আমি ওনার কর্মচারী। ওনার হয়ে কাজ করি। আমি যা ইনকাম হয়, সব ওনাকে দিয়ে দিই।’

দৈনিক কত টাকা আয় (খাস) হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আয়টা যাত্রীর ওপর নির্ভর করে। কোনোদিন ২০ হাজার, কোনোদিন ৩০ হাজার টাকা আয় হয়। দৈনিক ২৩-২৪ হাজার টাকার একটি খরচ থাকে। তেল (জ্বালানি), নৌকা ভাড়াসহ সবমিলিয়ে।’

দৈনিকভিত্তিতে খাস সংগ্রহের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সম্পাদক আবদুল আহাদ রিপন জাগো নিউজকে বলেন, ‘সাড়ে চার হাজার, সাড়ে পাঁচ হাজার বিষয় নয়। এখানে যে খাস কালেকশনটা হচ্ছে, আমাদের একটা কথা ছিল- এখন বর্ষাকাল, যাত্রীদের সমস্যা হতে পারে, যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘আমি সচেতন নাগরিক হিসেবে সিটি করপোরেশনকে বলেছি ঘাটটি সংস্কার প্রয়োজন। মানুষকে দুর্ভোগে ফেলা যাবে না, সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত খাস কালেকশন চলুক। যেভাবে চলছে, সেভাবে চলুক। এখন মেরামতের জন্য ইজারা দেওয়া হয়নি। দ্রুত মেরামত করে শিগগির ঘাটটি ইজারা দেবে সিটি করপোরেশন।’

তার প্রতিনিধি হয়ে স্থানীয় ডাঙ্গারচর এলাকার ফয়সাল খাস কালেকশন করছেন- এ তথ্যটির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টি সম্পর্কে আমি টোটালি জানি না।’

দিনে কত টাকা খাস কালেকশন হয় জানতে চাইলে সরাসরি জবাব না দিয়ে তিনি বলেন, ‘খাস কালেকশন করপোরেশনের চেইনম্যান সিরাজ সাহেবের নামে। তিনিই খাস কালেকশনের দায়িত্বে রয়েছেন। কত টাকা খাস কালেকশন করছেন তিনি বলতে পারবেন।’

চসিকের এস্টেট শাখার চেইনম্যান মো. সিরাজ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘সল্টগোলা ঘাটে আগে অন্যজন খাস আদায়ে দায়িত্ব পালন করতো। আমাকে কয়েকদিন আগে এবছর (বাংলা সন) খাস কালেকশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আপনি অফিসে আসেন।’

গত এক-দুদিনে কত টাকা খাস জমা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন হিসাব করে কালেকশনগুলো (খাস) জমা দিলে কত টাকা জানা যাবে। মাত্র দায়িত্বটা পেয়েছি। কালেকশনগুলো এক জায়গায় জোগাড় করে আমাদের সাহেবেরা (চসিকের কর্মকর্তা) আছে না, আরও অফিসার আছে না, তারা যত টাকা জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেয়, তত টাকা জমা দেওয়া হবে।’

কোন সাহেব (কর্মকর্তা) সিদ্ধান্ত দেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আছেন না, তিনি সবগুলো দেখবেন। সোমবার (২৮ এপ্রিল) একদিনের খাস কালেকশন হিসেবে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা জমা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ভ্যাট-ট্যাক্সসহ।’

এ বিষয়ে জানতে গত কয়েকদিন ধরে চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা এস এম সরওয়ার কামালের দাপ্তরিক মোবাইল ফোন নম্বরে বেশ কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য চেয়ে মোবাইল ও হোয়াটসঅ্যাপে দেওয়া খুদেবার্তা তিনি সিন করলেও কোনো সাড়া দেননি।

চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘ওখানে তো আমরা খাস কালেকশন করছি। সরকারের রেভিনিউ আসছে। হয়তো বেশি আর কম। আমরা ঘাটগুলো এবার টেন্ডার দেওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছি। প্রথমবার টেন্ডারে কাঙ্ক্ষিত রেট পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয়বার টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছিল। কিন্তু সংস্কারের কারণে টেন্ডারটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। আমরা সংস্কার করে আবার টেন্ডার আহ্বান করবো।’

তবে খাস ভাগাভাগির বিষয়ে প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তার জড়িত থাকার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে পারবো না। তবে আমার জানা মতে এমনটি নয়।’

এমডিআইএইচ/এএসএ/এমএফএ/এএসএম