করোনাকালীন সময়ে ২০২০ সালের ২ মে রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবি পার্টি। দলটির পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার (২ মে) দিনব্যাপী আলোচনা সভা, স্মৃতিচারণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
Advertisement
শুক্রবার রাজধানীর প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সারাদিন চলে এই আয়োজন। দলের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার যোবায়ের আহমদ ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহামুদুর রহমান মান্না, ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক ও অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলনের আহ্বায়ক জোনায়েদ সাকি, এবি পার্টির প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল কাইয়ুম, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মামুনুল হক, দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন, এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. দিলারা চৌধুরী, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের আহ্বায়ক ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বাংলাদেশ এলডিপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন সেলিম, আম-জনতা দলের সভাপতি কর্ণেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শাহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি সাউদ বিন ইউসুফ প্রমুখ।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহামুদুর রহমান মান্না বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি বর্তমানে একটি ধোঁয়াশার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে । অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এদিক সেদিক সময় পার করছে, আবার নতুন নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের ভেতরে মানবিক করিডোর নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আমরা কোনো বৃহৎ শক্তির বিরোধের মধ্যে পড়তে চাই না। বর্তমানে যা দেখা যাচ্ছে তা শুভ লক্ষণ নয়। তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, অনেক ছোট ছোট বিষয়ে আপনারা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছেন, কিন্তু মানবিক করিডোরের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আপানার কারো মতামত নিলেন না। এটা কোনোভাবেই ভালো ফল বয়ে আনবে না।
Advertisement
জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে এবি পার্টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন শুরু করি তখন যে কয়েকটি রাজনৈতিক দল আমাদের আন্দোলনে সার্বিক সহোযোগিতার হাত বাড়িয়েছে, এবি পার্টি তাদের মধ্যে অন্যতম। সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন কোনো বিরোধপূর্ণ বিষয় নয়। তা একে অপরের সম্পূরক। আমরা শুধু বলতে চাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে তার বাংলাদেশে রাজনীতি করার আর কোনো অধিকার নাই। জনগণ রক্ত দিয়ে তার ফায়সালা করে দিয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, যেসব রাজনৈতিক দলের নেতারা আজ এসেছেন সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। বেশিরভাগ দলই খুব ইতিবাচক চিন্তা পোষণ করেছে।
কঠিনতম সময়েও গণমাধ্যম কর্মী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ও শুভানুধ্যায়ীদের এবি পার্টির পাশে থাকার জন্য তিনি কৃতজ্ঞতা জানান।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান জোনায়েদ সাকি বলেন, রাজনীতিতে আমরা একটি ঐতিহাসিক সময় পার করছি। আমাদের সামনে সংস্কার ও নির্বাচন। এই জায়গাগুলোতে মিনিমাম একটা ঐক্যে পৌঁছাতে হবে। সেই ঐক্যের জায়গা ঠিক রেখে দ্বিমতের জায়গায় আমরা লড়াই করতে পারি ও দ্বিমত নিয়ে জনগণের কাছে যেতে পারি।
Advertisement
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, অত্যন্ত প্রতিকূল সময়ে রাজনীতিতে এবি পার্টি যাত্রা শুরু করেছিল। ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে দলমতের বাইরে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করার পেছনে এবি পার্টি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, বিচারের কাজ যে শুরু হয়েছে কোন পর্যায়ে ক্লোজ করবেন প্রধান উপদেষ্টাকে পরিস্কার করে এ ব্যাপারে কথা বলতে হবে। সংস্কার কোন পর্যায়ে শেষ করবেন তা ক্লিয়ার করুন এবং নির্বাচন নিয়ে সুনির্দিষ্ট কথা বলুন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অহেতুক দূরত্ব তৈরি করবেন না।
এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদ আমাদেরকে কোনো কাজ করতে দেয়নি। আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে দায় ও দরদের রাজনীতির কথা আমরাই ৫ বছর ধরে বলছি। ২য় রিপাবলিকের প্রসঙ্গটি আমরাই রাস্তায় নিয়ে আসছি। পরিবারতন্ত্রের বাহিরে রাজনীতির বয়ান আমরাই হাজির করেছি। অতীত থেকে আমরা শিক্ষা নিব, ২৫ এর সমস্যা ২৫-এই সমাধান করতে হবে। এখানে অতীতকে নিয়ে আসা যাবে না। ইস্যু বেইজড রাজনীতিকে আমরা প্রতিষ্ঠিত করেছি। সবার আগে বাংলাদেশ- এই স্লোগান আমরাই প্রথম নিয়ে এসেছি। সমস্যা সমাধানের রাজনীতি আমরাই আলোচনায় নিয়ে এসেছি। বিকল্প রাজনীতি কী হবে তা আমরা এরইমধ্যে জনগণের কাছে তুলে ধরেছি। এখন সময় নতুন রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করার।
এর আগে সকাল শুক্রবার ১০টায় এবি পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কার্যালয় সংলগ্ন বিজয় একাত্তর চত্বর থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালির আয়োজন করা হয়। যা কাকরাইল, নাইটিঙ্গেল, বিজয়নগর, পল্টনসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রেস ক্লাব চত্বরে এসে শেষ হয়।
অনুষ্ঠানে এবি পার্টির নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পার্টির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার, জাহাঙ্গীর কাসেম, বি এম নাজমুল হক, লে. কর্ণেল (অব.) দিদারুল আলম, লে. কর্ণেল (অব.) হেলাল উদ্দিন, অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা, আনোয়ার সাদাত টুটুল, এ বি এম খালিদ হাসান, আমিনুল ইসলাম এফ সি এ, ব্যারিস্টার নাসরীন সুলতানা মিলি, ব্যারিস্টার সানী আব্দুল হক, আলতাফ হোসাইন, শাহাদাতুল্লাহ টুটুল, হাদিউজ্জামান খোকন, ছাত্রপক্ষের আহ্বায়ক মোহাম্মদ প্রিন্সসহ এবি পার্টির জাতীয় নির্বাহী পরিষদের সব সদস্যরা।
এএএম/এএমএ/এএসএম