মানুষ মাত্রই দুর্বল। আল্লাহপাক তাঁর সৃষ্টির সেরা মানুষকে দুর্বল করে সৃষ্টি করেছেন। তাই মানুষ বারবার ভুল করেন আর আল্লাহ তাকে ক্ষমাও করেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেছেন, ‘আর মানুষ সৃষ্টিগত ভাবেই দুর্বল।’ (সুরা আন নিসা : আয়াত ২৮)
Advertisement
দিনের পর দিন মানুষ নানান পাপ কাজ করে কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে তিনি সবাইকে পাকড়াও করেন না বরং অবকাশ দিতে থাকেন। তিনি এজন্যই অবকাশ দেন যেন তাঁর বান্দা ভুল বুঝতে পেরে তওবা করে সঠিক পথে ফিরে আসে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যার হাতে আমার জীবন! যদি তুমি পাপ করতে না পারো তবে আল্লাহ তোমাকে অস্তিত্ব থেকে সরিয়ে নেবেন এবং তিনি এমন লোকদের দেবেন যারা পাপ করবে এবং আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা চাইবে এবং তিনি তাদের ক্ষমা করে দেবেন।’ (মুসলিম)অপর এক হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ বলেন- হে আদম সন্তান! যদি জমিন ভর্তি গোনাহ নিয়ে আমার সামনে সাক্ষাৎ করো, তবে আমি পৃথিবী পরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার সাক্ষাৎ করব এই শর্তে যে, তুমি কোনো কিছুকে আমার সঙ্গে অংশীদার স্থাপন করবে না।’ (মুসনাদ আহমেদ)
মানুষ যেহেতু দুর্বল তাই তারা পাপ করবে-এটাই স্বাভাবিক। যার কারণে আল্লাহ তার বান্দাকে শাস্তি প্রদানে অবকাশ দিতে থাকেন। কারণ যদি আল্লাহতায়ালা সর্বপ্রকার শাস্তি তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োগ করতেন তাহলে পৃথিবীর মানুষ অনেক আগেই শেষ হয়ে যেত। পাপের কারণে মানুষ অকালে শেষ হয়ে গেলে জীবজন্তু ও পশুপাখি বেঁচে থাকারও কোন প্রয়োজন থাকতো না। মানুষের প্রয়োজনেই এদের সৃষ্টি। তাই মানুষের বিলুপ্তির সাথে সাথে অন্যান্য জীবজন্তুও নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে। এক কথায় এ পৃথিবীই থাকতো না আল্লাহ হয়ত নতুন পৃথিবী এবং মানব সভ্যতাকে নতুন করে সৃষ্টি করতেন।
Advertisement
যেভাবে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন: ‘আল্লাহ যদি মানুষকে তার অন্যায় কাজের কারণে তাৎক্ষণিক শাস্তি দিতেন তাহলে কোন প্রাণীকেই তিনি এ পৃথিবীতে জীবিত ছাড়তেন না। কিন্তু তিনি এক নির্ধারিত সময় পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দিয়ে থাকেন। তবে তাদের শাস্তির নির্ধারিত মেয়াদ যখন এসে পড়ে তখন তারা এক মুহূর্ত পিছনেও থাকতে পারে না এবং সামনেও এগোতে পারে না।’ (সুরা নাহল: আয়াত ৬১)তবে কোন জাতির শাস্তির নির্ধারিত সময় যখন উপস্থিত হয় তখন তা প্রতিহত, বিলম্বিত বা স্থগিত করা যায় না। শাস্তি যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত হয়ে যায় তখন তাকে কেউ আর প্রতিহত করার শক্তি রাখে না। যেভাবে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন: ‘আর প্রত্যেক জাতির জন্য একটি সময় নির্ধারিত আছে। অতএব তাদের নির্ধারিত সময় যখন এসে যায় তখন তারা তা থেকে এক মুহূর্ত পিছিয়েও থাকতে পারে না বা এগুতেও পারে না।’ (সুরা আরাফ: আয়াত ৩৪)
এ বিষয়ে হাদিসে এসেছে, মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ জালিমকে অবকাশ দেন, তারপর যখন পাকড়াও করেন তখন আর কোনো ছাড় দেন না।’ (মুসলিম) আল্লাহ আমাদেরকে অবকাশ দিচ্ছেন বলে আমরা যা ইচ্ছে তা করে যাব তা মোটেও ঠিক নয়। আমাদের উচিত সময় থাকতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া।
জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষায় আমরা আল্লাহর কাছে সবিনয়ভাবে এই দোয়া পড়ব- ‘রাব্বানা আতিনা ফিদদুনইয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়া ক্বিনা আজাবান নার।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২০১) অর্থ : ‘হে পরওয়ারদেগার! আমাদেরকে দুনয়াতেও কল্যাণ দান কর এবং আখেরাতেও কল্যাণ দান কর এবং আমাদেরকে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা কর।’
হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (সা.) যে দোয়া সব সময় করতেন সেই দোয়াটিও আমরা প্রতিনিয়ত করব, যাতে আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে ক্ষমা করে তার কৃপার চাদরে আবৃত করে নেন। তিনি (সা.) এ দোয়া পড়তেন-‘আল্লাহুম্মা আফিনি ফি বাদানি, আল্লাহুম্মা আফিনি ফি সাময়ি, আল্লাহুম্মা আফিনি ফি বাসারি, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা, আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল কুফরি, ওয়াল ফাকরি, আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবিল কাবরি, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা।
Advertisement
অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি আমাকে শারীরিক সুস্থতা ও নিরাপত্তা দান কর। হে আল্লাহ! আমার শ্রবণে সুস্থতা ও নিরাপত্তা দান কর। আমার দৃষ্টিতে সুস্থতা ও নিরাপত্তা দান কর। তুমি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। হে আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় গ্রহণ করছি কুফুরি ও দারিদ্র্য থেকে। হে প্রভু-প্রতিপালক! আমি তোমার কাছে পানাহ চাই কবরের আজাব থেকে। তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই।’ (আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ)
আমরা যদি আমাদের পাপের জন্য আল্লাহতায়ালার কাছে বিশুদ্ধ হৃদয় তওবা করে তাহলে তিনি আমাদের পাপ ক্ষমা করে তাঁর সন্তুষ্টির চাদরে আবৃত করে নিবেন। যেভাবে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেছেন- ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা কর; বিশুদ্ধ তওবা। সম্ভবতঃ তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের মন্দ কর্মগুলোকে মোচন করে দেবেন এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার তলদেশে নদীমালা প্রবাহিত। সেই দিন আল্লাহ তাআলা নবি এবং তাঁর বিশ্বাসী বান্দাদেরকে অপদস্থ করবেন না। তাদের জ্যোতি তাদের সামনে ও ডানে আলোকিত হবে। তারা বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জ্যোতিকে পূর্ণতা দান কর। আর আমাদেরকে ক্ষমা কর। নিশ্চয়ই তুমি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান।’ (সুরা তাহরিম : আয়াত ৮)পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা আরো ইরশাদ করেছেন- ‘হে আমাদের রব! তুমি আমাদের পাপসমূহ ক্ষমা কর, আমাদের মন্দ কাজসমূহ গোপন কর এবং মৃত্যুর পর আমাদেরকে পুণ্যবানদের সাথে মিলিত কর।’ (সুরা আলে ইমরান : আয়াত ১৯৩)
আমাদের অন্তরের ব্যাকুলতা আর গভীর রাতের আহাজারির ফলেই আমরা ক্ষমা লাভে সক্ষম হবো। আল্লাহপাক আমাদের তওবা কবুল করুন আর আমাদেরকে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষার ওপর প্রতিষ্ঠিত থেকে জীবন পরিচালনার তৌফিক দিন, আমিন।
লেখক: প্রাবন্ধিক, ইসলামি চিন্তাবিদ।masumon83@yahoo.com
এইচআর/জিকেএস