দেশজুড়ে

পুরুষের বেতন ২০ হাজার, নারীর আড়াই!

পুরুষের বেতন ২০ হাজার, নারীর আড়াই!

একসময় ছিলেন দিনমজুর। ফলের ব্যবসা দিয়ে শুরু হয়েছিল তার পথচলা। পরে অন্যদের দেখে শুরু করেন কৃত্রিম চুলের ব্যবসা। সময়ের ব্যবধানে গড়ে তোলেন ১৫টি কারখানা, যেখানে প্রতিদিন কাজ করছেন প্রায় ২০০ নারী ও ৫০ পুরুষ। বলা হচ্ছিল মো. শাহজামালের কথা। তিনি এখন একজন উদ্যোক্তা। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গায় রয়েছে তার কারখানা।

Advertisement

কারখানায় পুরুষ শ্রমিকরা কাজ করেন ভোর ৫টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। নারীরা কাজ করেন ভোর ৫টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত, প্রায় ৬ ঘণ্টা। কাজের ধরনে বিশেষ পার্থক্য নেই, সবই হাতে করতে হয়। নারীরা চুল ছাড়ান, জট খোলেন আর সেগুলো গুছিয়ে রাখেন। পরে পুরুষরা সেই চুল ছেঁটে, ধুয়ে বান্ডিল তৈরি করেন। তবু বেতনে থেকে যায় বৈষম্য।

পুরুষ শ্রমিকরা মাসে পান ১৮-২০ হাজার টাকা। আর নারী শ্রমিকরা পান মাত্র আড়াই হাজার টাকা। অথচ সময়ের হিসেবে এবং কাজের তুলনায় নারীদের বেতন হওয়া উচিত কমপক্ষে ৮-১০ হাজার টাকা বলে মনে করছেন শ্রম বিশ্লেষকেরা।

শাহজামালের কারখানায় কাজ করেন রহিমা খাতুন। তিনি বলেন, সকালে উঠে চুল ছাড়াতে বসি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করি হাতে। ছেলেরা তো পরে কাজ করে, তার আগে আমরাই সব করি। এই আড়াই হাজার টাকায় সংসার চালানো খুব কষ্ট। তবুও চালিয়ে নিচ্ছি।

Advertisement

অপর নারী শ্রমিক শেফালী খাতুন বলেন, পুরুষরা বেশি টাকা পায়। আর আগে থেকেই আমরা কম পাই। কিন্তু এখন সবকিছুর দাম বাড়ছে। এই টাকায় চলা যায় না। আমরা চাই আমাদের মজুরি যেন একটু বাড়ানো হয়।

এ বিষয়ে মালিক মো. শাহজামালের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছেলেরা দিনভর কাজ করে, আর মেয়েরা অল্প সময় কাজ করে। তবে মেয়েদের কাজের ধরন সহজ না, এটা আমি জানি। ভবিষ্যতে তাদের মজুরি বাড়ানোর বিষয়টি চিন্তা-ভাবনা করছি।

মো. শাহজামালের মালিকানায় রয়েছে বিলাসবহুল দুটি দোতলা বাড়ি এবং প্রায় ১৪-১৫ বিঘা জমি। একসময় যিনি ছিলেন দিনমজুর, আজ তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা। তার হাতে তৈরি হয়েছে ২৫০ মানুষের কর্মসংস্থান। তার কারখানার কৃত্রিম চুল দেশের বাইরে চীনেও রপ্তানি হয়।

রেমি (প্রসেসিং) চুলের দৈর্ঘ্যের ওপর এর মূল্য নির্ভর করে। চুল যত লম্বা বাজার দরও তত বেশি। চুলের এই দৈর্ঘ্যের ওপর ভিত্তি করে এর বাজার মূল্য সর্বনিম্ন ৬ ইঞ্চি চুল ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২২-৩২ ইঞ্চি সাইজের চুল প্রতিকেজি ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।

Advertisement

কার্পাসডাঙ্গা চুল প্রসেসিং ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের এলাকার সব চুল ব্যবসায়ীরা বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে ঝামেলা ছাড়াই ব্যবসা করে যাচ্ছেন। নারীদের বেতনের বিষয়ে ভাবছি। সব ব্যবসায়ীরা তাদের বেতন বাড়াবেন।

তবে এই সাফল্যের গল্পের মাঝেই রয়ে গেছে একটি কঠিন প্রশ্ন- আজ ১ মে, আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। সারাবিশ্বে যেখানে ‘সমান কাজে সমান মজুরি’র দাবি উঠছে, সেখানে দামুড়হুদার নারী শ্রমিকরা এখনো টিকে আছেন কম বেতনের টাকায়।

‘শ্রম সমান, পরিশ্রম সমান-তবু কি শুধুমাত্র নারী বলেই কম পারিশ্রমিক?’ এই প্রশ্নই আজ শ্রমিক দিবসের।

হুসাইন মালিক/জেডএইচ/জিকেএস