দেশজুড়ে

মসজিদ-মাদরাসায় বরাদ্দের চালও হরিলুট!

মসজিদ-মাদরাসায় বরাদ্দের চালও হরিলুট!

পাবনার চাটমোহর উপজেলায় মসজিদ ও মাদরাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ১৪৪ মেট্রিক টন জিআর চাল বরাদ্দে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ভুয়া প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে বরাদ্দ নেওয়া ও উত্তোলনসহ এসব চাল কালোবাজারে বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ হয়েছে। সম্প্রতি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দ আত্মসাতের বিচার দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এলাকাবাসী। এ লুটপাটের প্রতিবাদে উপজেলার কয়েকটি জায়গায় মানববন্ধনও করেছেন তারা।

Advertisement

সূত্র বলছে, গত রমজানে রোজাদার, মিলাদ মাহফিল, মাদরাসার ছাত্র ও এতিমখানার এতিমদের জন্য মসজিদ ও মাদরাসাসহ উপজেলার ১২৪টি প্রতিষ্ঠানে ১৪৪ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয় জেলা প্রশাসন। কিন্তু একটি চক্র এসব বরাদ্দে লুটপাট চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগপত্র ও নথি বলছে, ফৈলজানা ইউনিয়নের অন্তত ১৯টি মসজিদ, মাদরাসা ও এতিমখানার নামে এই বরাদ্দ দেওয়া হয়।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কয়েকটির অস্তিত্বই নেই। পবাখালী দক্ষিণপাড়া মহিলা হাফিজিয়া মাদরাসা, পবাখালী রোকেয়া নুরুল মাদরাসা ও দেলোয়ার সামাদ নুরানী কিন্ডারগার্টেনের নামে চাল বরাদ্দ নেওয়া হলেও বাস্তবে এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

Advertisement

অভিযোগ রয়েছে, এই তিন প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে আব্দুস সামাদ এবং তার ছেলে তৌফিক ইমাম ভুয়া কমিটির মাধ্যমে মোট সাড়ে ১০ মেট্রিক টন চাল উত্তোলন করেছেন। এছাড়া দিঘুলিয়া হাসান হোসেন রহমাতুল্লাহ আলাইহি জামে মসজিদ এবং দিঘুলিয়া পুরাতন জামে মসজিদের নামে সাড়ে ৪ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে অস্তিত্ব নেই এ প্রতিষ্ঠানেরও।

একইভাবে মিনহাজ মোড় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, পবাখালী বাইতুল আমান জামে মসজিদ, পবাখালী দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদ, ফরিদা শামসুল মহিলা হাফিজিয়া মাদরাসা এবং পবাখালী লালন একাডেমি- নামে ভুয়া প্রতিষ্ঠানেও চাল বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে। শুধু কয়েকটি ইউনিয়নে নয়, পুরো উপজেলাজুড়েই এমন অনিয়মে চাল হরিলুট করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, মসজিদ, মাদরাসা ও মাজারসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দ হলেও জানেন না প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কেউই। অথচ চাল উত্তোলন করে অর্থ আত্মসাৎ করেছে একটি চক্র। আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের আসল কমিটির সদস্যদের অন্ধকারে রেখে ভুয়া কমিটি তৈরি করে বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে কমিটির সদস্যদের মুখ বন্ধ রাখতে ৬ হাজার করে টাকা দিয়ে ম্যানেজের চেষ্টা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এমন সব অনিয়মের মাধ্যমে চাল উত্তোলনের পর কালোবাজারে বিক্রি করে অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি জানলে ক্ষোভে ফেটে পড়ে উপজেলাবাসী। মানববন্ধন করে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তারা। এ নিয়ে গত ২৩ এপ্রিল বিকেলে উপজেলার পার্শ্বডাঙ্গা ইউনিয়নের মহেলা বাজারে একটি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

Advertisement

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, এই ইউনিয়নের বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে জিআর চাল বরাদ্দ দেয় জেলা প্রশাসন। এর মধ্যে ৭টি প্রতিষ্ঠানে সাড়ে ১১ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দের ব্যাপারে এসব প্রতিষ্ঠানের কমিটিকে না জানিয়ে ভুয়া কমিটি করে চাল উত্তোলন করেছে একটি চক্র।

এছাড়া গত শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) উপজেলায় এ নিয়ে আরেকটি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন পাবনা ৩ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে দোয়াপ্রার্থী বিএনপি নেতা হাসানুল ইসলাম রাজাসহ অনেকেই। এ মানববন্ধনেও ‘চাল চোরের’ বিচার দাবি করা হয়।

পরে কথা বলবেন জানিয়ে অভিযুক্তদের একজন অভিযোগের বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও অন্য অভিযুক্ত মনিরুল ইসলাম বলেন, ভুলে একই মসজিদের দুটি নাম দেওয়া হয়েছে। তবে সেসব টাকা মসজিদের ফান্ডেই জমা দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুসা নাসের চৌধুরী জানান, বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। তবে তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে এ সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। জবাব সন্তোষজনক না হলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি বলেন, শুধু কয়েকটি প্রতিষ্ঠান নয়, অভিযোগ ওঠা উপজেলার সবগুলো প্রতিষ্ঠানে বরাদ্দে অনিয়মের বিষয়ে আমরা আন্তরিক হয়ে কাজ করছি। প্রয়োজনে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আলমগীর হোসাইন নাবিল/এফএ/জেআইএম