দেশজুড়ে

শরিফুলের ইচ্ছাশক্তির কাছে হার মেনেছে বাধা

শরিফুলের ইচ্ছাশক্তির কাছে হার মেনেছে বাধা

কথায় আছে—ইচ্ছা থাকলে সবই সম্ভব। তারই যেন জ্বলন্ত উদাহরণ গাইবান্ধার দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শরিফুল ইসলাম। প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে পরিবেশবান্ধব কাগজের কলম তৈরি করে এলাকায় সুনাম কুড়িয়েছেন তিনি। তার তৈরি করা বিশেষ এই কলম স্থানীয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এতে তার আয়ও হচ্ছে বেশ।

Advertisement

গাইবান্ধা শহর থেকে সাড়ে চার কিলোমিটার দূরে বোয়ালী ইউনিয়নের উত্তর ফলিয়া গ্রামে শরিফুল ইসলামের বাড়ি।

সরেজমিন দেখা যায়, বাড়ির উঠানে বসে কাগজের কলম তৈরি করছেন শরিফুল। জন্ম থেকেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হলেও দুহাতের ছোঁয়ায় মুহূর্তের মধ্যেই তৈরি করে ফেলছেন একেকটি কলম। কলমের পাশাপাশি তৈরি করছেন খাতা।

কথা বলে জানা যায়, প্রতি মাসে গড়ে এক হাজার কলম ও ৫০০ খাতা পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করেন শরিফুল ইসলাম। খাতা বিক্রি করেন ২০ থেকে ৪০ টাকা। প্রতিটি কলমের দাম ১০ টাকা। উৎপাদন খরচ বাদে প্রতি মাসে যে টাকা আয় হচ্ছে তা দিয়ে তার পড়াশোনার খরচসহ চলছে সংসার।

Advertisement

শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেই গাইবান্ধা ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৫ সালে এসএসসি, ২০১৭ সালে গাইবান্ধা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ২০২১ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ বিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেন শরিফুল ইসলাম। পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু একটা করা দরকার ভাবনা থেকে লোকজনের পরামর্শে কাগজের কলম ও খাতা তৈরির পথ বেঁছে নেন তিনি।

কলম তৈরির প্রক্রিয়াটি বেশ সহজ। প্রথমে বিভিন্ন রঙের কাগজের মধ্যে কালির শীষ পেঁচিয়ে আঠা দিয়ে ভালোভাবে মুড়ে দেওয়া হয়। সবশেষে, কলমটিকে রোদে শুকিয়ে শক্ত করা হয়। এভাবেই তৈরি হয় পরিবেশবান্ধব কাগজের কলম। তার তৈরি করা পরিবেশবান্ধব কলম এখন এলাকায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

শরিফুল ইসলাম সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের উত্তর ফলিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে।

স্থানীয় আয়নাল হোসেন বলেন, ‘যারা চোখে দেখেন তারাও এ ধরনের ভালো কাজের উদ্যোগ নেন না। অথচ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়েও তিনি কাগজ দিয়ে কলম তৈরি করে প্রশংসা কুড়াচ্ছেন।’

Advertisement

ইমন শেখ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘শরিফুল ইসলামের কাগজের তৈরি কলম ও খাতার দাম কম। এজন্য স্কুলপড়ুয়া ছোট-বড় সব শিক্ষার্থী তার কাছে কলম খাতা কিনতে আসছেন।’

শরিফুলের বাবা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ছেলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। তারপরও নিজে নিজে ইনকাম করে পড়াশোনার খরচ চালিয়ে আসছে। আমি আমার ছেলের জন্য দোয়া চাই।’

এ বিষয়ে উদ্যোক্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, এ কাজে পর্যাপ্ত সহযোগিতা ও মূলধনের অভাব রয়েছে। ব্যক্তি অথবা সরকারিভাবে এককালীন আর্থিক সহায়তা পেলে নিজের তৈরি শিল্পকে আরও বড় পরিসরে উন্নতি করতে পারতাম।

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জেম আহমেদ বলেন, শরিফুল ইসলাম পরিবেশবান্ধব কাগজের কলম তৈরি করছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষে থেকে তার বিষয়ে খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। তার এই শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সার্বিকভাবে সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।

এ এইচ শামীম/এসআর/জেআইএম