বাংলাদেশের প্রতিবন্ধী নাগরিকদের অধিকার, সুরক্ষা, অবহেলা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে ৮ দফা সুপারিশ করেছে ডিস্যাবিলিটি রাইটস ওয়াচ (ডিআরডাব্লিউ)।
Advertisement
শনিবার (২৬ এপ্রিল) ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সহযোগিতায় আয়োজিত এক সম্মেলনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আইন ও নীতিমালার যথাযথ বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডিস্যাবিলিটি রাইটস ওয়াচের সভাপতি মনসুর আহমেদ চৌধুরী, সদস্য সচিব খন্দকার জহুরুল আলম, সদস্য মো. জাহাঙ্গীর আলম, প্রতিবন্ধী উন্নয়নবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ডা. নাফিসুর রহমান এবং টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, প্রতিবন্ধী নাগরিকদের প্রতি বৈষম্য ও মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধে এখনই কার্যকর ও সুস্পষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে ডিআরডাব্লিউর পক্ষ থেকে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় একটি সুনির্দিষ্ট সুপারিশমালা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে উপস্থাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
Advertisement
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জাতিসংঘের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সনদ (সিআরপিডি) ২০০৭ সালে বাংলাদেশ অনুসমর্থন করলেও এবং ২০১৩ সালে ‘বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ও সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন করা হলেও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অগ্রগতি অত্যন্ত সীমিত। ফলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা এখনো নানা রকম অবহেলা, বঞ্চনা ও অধিকার লঙ্ঘনের শিকার হচ্ছেন।
ডিআরডাব্লিউ জানায়, দেশের উন্নয়নে প্রতিবন্ধী নাগরিকদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা না হলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনও সম্ভব হবে না। তারা উল্লেখ করে, ২০১৯ সালে গৃহীত ‘প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনা’ যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়নি এবং জাতীয় পর্যায়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটিগুলোও প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
ডিআরডাব্লিউ তাদের সংবাদ সম্মেলনে সরকারের কাছে আট দফা সুপারিশ উপস্থাপন করেছে। সুপারিশগুলো হলো:
মন্ত্রণালয়ভিত্তিক দায়িত্ব পুনর্বিন্যাস: প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষাবিষয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনা এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সেবাগুলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় স্থানান্তর করা।
Advertisement
আইন বাস্তবায়নে কমিটি সচল করা: জাতীয় ও জেলা পর্যায়ের কমিটিগুলোকে কার্যকর করতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়া।
সিআরপিডি বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণ: জাতীয় পর্যায়ে প্যারিস প্রিন্সিপাল অনুযায়ী শক্তিশালী পরিবীক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়ন।
এসডিজি কার্যক্রমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তি: এসডিজি রিপোর্টিংয়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়ন সংক্রান্ত তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা এবং সবক্ষেত্রে প্রতিবন্ধিতাভিত্তিক পরিসংখ্যান সংগ্রহ করা।
জাতীয় বাজেটে প্রতিবন্ধিতাবিষয়ক বরাদ্দ বাড়ানো: শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দক্ষতা উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আলাদা বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করা।
সরকারি চাকরিতে প্রতিবন্ধী কোটা পুনর্বহাল: প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য এক শতাংশ কোটা নির্ধারণ করা এবং তা পূর্ণভাবে কার্যকর করা।
জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন পুনর্গঠন: প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অংশগ্রহণ ও দক্ষতা বাড়িয়ে ফাউন্ডেশনটিকে আরও শক্তিশালী করা।
ক্রীড়াক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি: প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অধীনে একটি আলাদা ক্রীড়া ফেডারেশন গঠন করা।
ডিআরডাব্লিউর পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত বছর ২ নভেম্বর সংগঠনটির প্রতিনিধিদল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসব সুপারিশ লিখিত আকারে পেশ করা হয়েছে।
এসএম/এমএএইচ/জেআইএম