হজ ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি। তাই সামর্থ্য থাকলে অযথা অবহেলা বা দেরি না করে দ্রুত হজ করে ফেলা উচিত। আল্লাহ বলেছেন, নিশ্চয় প্রথম ঘর, যা মানুষের জন্য স্থাপন করা হয়েছে, তা মক্কায়। যা বরকতময় ও হিদায়াত বিশ্ববাসীর জন্য। তাতে রয়েছে স্পষ্ট নির্দশনসমূহ, মাকামে ইবরাহিম। আর যে তাতে প্রবেশ করবে, সে নিরাপদ হয়ে যাবে এবং সামর্থ্যবান মানুষের উপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ করা ফরজ। আর যে কুফরি করে, তবে আল্লাহ তো নিশ্চয় সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী। (সুরা আলে ইমরান: ৯৬, ৯৭)
Advertisement
সামর্থ্য থাকলে জীবনে একবার হজ করা প্রতিটি মুসলমানের ওপর ফরজ। হজের মৌসুমে হজে যাওয়া-আসার খরচসহ সফরে থাকাকালীন দিনগুলোতে তার ও পরিবারের লোকদের স্বাভাবিক খরচের ব্যবস্থা থাকলে এবং দৈহিকভাবে হজ করার সক্ষমতা থাকলে হজের সামর্থ্য প্রমাণিত হয় ও হজ ফরজ হয়।
কারো যদি কাবায় পৌঁছার সামর্থ্য থাকে কিন্তু তার হজের সফরের সময় পরিবার-পরিজনের দেখাশোনা ও ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা না থাকে, তার ওপর হজ ফরজ হবে না। একইভাবে কারো যদি হাত, পা, চোখ ইত্যাদি অঙ্গের কোনোটি বিকল হয় বা কেউ যদি একা চলাফেরা কতে সক্ষম না হয়, তার ওপরও হজ ফরজ হবে না।
নারীদের ওপর হজ ফরজ হওয়ার জন্য হজের সফরে তার সাথে যাওয়ার মতো মাহরাম ব্যক্তি থাকাও জরুরি। মাহরাম না থাকলে সম্পদশালী নারীর জন্য নিজে গিয়ে হজ করার আবশ্যকতা থাকে না। কোনো নারীর কাছে যদি শুধু নিজের হজে যাওয়ার মতো সম্পদ থাকে, কোনো মাহরামকে নিয়ে যাওয়ার মতো সম্পদ বা সুযোগ না থাকে, তাহলে তার ওপরও হজ ফরজ নয়।
Advertisement
হিজরি ক্যালেন্ডারের তিনটি মাস শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ হজের মাস। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ‘হজের নির্দিষ্ট কয়েকটি মাস’ বলে এ তিনটি মাস বুঝিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, হজের নির্দিষ্ট কয়েকটি মাস রয়েছে। এ মাসগুলোতে যে কেউ হজ করার মনস্থ করবে, তার জন্য হাজের মধ্যে স্ত্রী সম্ভোগ, অন্যায় আচরণ ও ঝগড়া-বিবাদ বৈধ নয় এবং তোমরা যে কোন সৎ কাজই কর, আল্লাহ তা জানেন এবং তোমরা পাথেয়ের ব্যবস্থা করবে আর তাক্বওয়াই শ্রেষ্ঠ পাথেয়। হে জ্ঞানী ও বিবেকবানরা! আমাকেই ভয় করতে থাক। (সুরা বাকারা: ১৯৭)
এ মাসগুলো হজের মাস হওয়ার অর্থ এই নয় যে এই মাসগুলোর যে কোনো দিন হজের যে কোনো কাজ করা যাবে। বরং এর অর্থ হলো, এই মাসগুলোতেই হজের ইহরাম বাঁধা ও হজের আমলগুলো সম্পন্ন করতে হয়। শাওয়াল মাসের আগে হজের ইহরাম বাঁধা যায় না। শাওয়ালের শুরু থেকে হজের ইহরাম বাঁধা যায়। শাওয়ালের প্রথমেই কেউ যদি হজের নিয়তে ইহরাম বাঁধে এবং তাওয়াফ ও সাঈ করে, তবে তা হজের জন্যই হবে। কিন্তু আরাফায় অবস্থান এবং এর পরবর্তী আমলগুলোর জন্য তো নির্ধারিত দিন আছে সেগুলো নির্ধারিত দিনেই করতে হবে।
হজের মাসসমূহের মধ্যে শুধু হজের পাঁচদিন অর্থাৎ জিলহজ মাসের ৯, ১০, ১১, ১২ ও ১৩ তারিখে ওমরাহ করা মাকরুহ তাহরিমি। এ দিনগুলোতে ওমরাহ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এ ছাড়া হজের মাস শাওয়াল ও জিলকদে ওমরাহ করা যায়। জিলহজ মাসের প্রথম আট দিনও ওমরাহ করা যায়।
হজের মাসসমূহ ওমরাহ করতে গেলে বা কাবা দেখলে হজ ফরজ হয়ে যায় এ ধারণা সঠিক নয়। কাবা দেখা বা ওমরাহ করার সাথে হজ ফরজ হওয়ার সম্পর্ক নেই। বরং হজ ফরজ হওয়ার সম্পর্ক হজ করার সামর্থ্য থাকার সাথে।
Advertisement
যে যুগে ভিসা নিয়ে মক্কায় যেতে হতো না, ওই যুগে হজের মাসসমূহ অর্থাৎ শাওয়াল ও জিলকদ মাসে কেউ মক্কায় পৌঁছলে বাকি দিনগুলো মক্কায় অবস্থান করতে পারতো এবং হজও করতে পারতো। তাই হজের মাসসমূহে কেউ মক্কায় পৌঁছতে পারলে তার হজ করার সামর্থ্য থাকতো। বর্তমানে যেহেতু ওমরাহ করার জন্য ভিসা নিয়ে যেতে হয় এবং ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার মক্কায় অবস্থানের সুযোগ থাকে না। ওমরাহর খরচ আর হজের খরচ এক রকমও নয়। তাই হজের মাসসমূহে ওমরাহর সফরে গেলেই হজ করার সামর্থ্য প্রমাণিত হয় না।
ওএফএফ/এমএস