হজ-ওমরাহর সময় হওয়া কিছু ভুলত্রুটির কারণে দম ওয়াজিব হয়। কিছু ভুল-ত্রুটির সদকা ওয়াজিব হয়। দম মানে একটা পূর্ণ ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা অথবা গরু, মহিষ ও উটের এক-সপ্তমাংশ জবাই ও দান করা। আর সদকা মানে এক ফিতরা পরিমাণ (সর্বনিম্ন এক কেজি ৬৫০ গ্রাম গম বা এর সমমূল্য) দান করা। দমের প্রাণী কোরবানির উপযুক্ত হওয়া এবং হারামের সীমার ভেতরে জবাই হওয়া জরুরি।
Advertisement
যেসব কারণে দম ওয়াজিব হয়, তার একটি হলো ইহরাম অবস্থায় সুগন্ধি ব্যবহার। হজ ও ওমরাহর গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ ইহরাম। নির্দিষ্ট স্থান থেকে হজ ও ওমরাহর নিয়তে নির্ধারিত নিয়মে ইহরাম বাঁধতে হয়। ইহরাম পরিধানের পর বৈধ অনেক কিছু হারাম হয়ে যায়। এর মধ্যে সুগন্ধি ব্যবহার অন্যতম।
ইহরাম অবস্থায় মাথা, চেহারা, দাড়ি, হাত, হাতের তালু, পায়ের গোছা, রান ইত্যাদি বড় অঙ্গের সব জায়গায় সুগন্ধি লাগালে দম ওয়াজিব হবে। অর্থাৎ হারামের সীমার ভেতরে (মিনা বা মক্কায়) কোরবানির উপযুক্ত একটি ছাগল বা দুম্বা জবাই করে তার মাংস দরিদ্রদের মধ্যে বণ্টন করে দিতে হবে।
শরীরের বিভিন্ন স্থানে সুগন্ধি লাগালে যদি তা একত্র করলে বড় অঙ্গের সমপরিমাণ হবে বলে মনে হয়, তাহলেও দম ওয়াজিব হবে।
Advertisement
ইহরাম অবস্থায় কেউ যদি কাপড়ে সগন্ধি লাগায় বা সুগন্ধি লাগানো কাপড় পরিধান করে, তাহলে সুগন্ধির পরিমাণ এক বর্গবিঘত বা তার বেশি হলে এবং পূর্ণ এক রাত বা পূর্ণ এক দিন পরিধান করলে দম ওয়াজিব হবে। আর সুগন্ধির পরিমাণ তার চেয়ে কম হলে বা পূর্ণ এক রাত বা পূর্ণ এক দিনের কম সময় পরিধান করলে সদকা ওয়াজিব হবে। অর্থাৎ সর্বনিম্ন এক কেজি ৬৫০ গ্রাম গম বা এর সমমূল্য দান করে দিতে হবে।
মক্কায় পৌঁছার সামর্থ্য যার আছে, তার জন্য জীবনে একবার ওমরাহ করা সুন্নতে মুআক্কাদাহ এবং সামর্থ্য অনুযায়ী অধিক ওমরাহ করা মুস্তাহাব ও অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন,
الْعُمْرَةُ إِلَى الْعُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُمَا وَالْحَجُّ الْمَبْرُورُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ إِلَّا الْجَنَّةَ
এক ওমরাহর পর অন্য ওমরাহ উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের গোনাহের জন্য কাফফারাস্বরূপ। আর কবুল হজের প্রতিদান হলো জান্নাত। (সহিহ বুখারি: ১৭৭৩)
Advertisement
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, تَابِعُوا بَيْنَ الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ فَإِنَّهُمَا يَنْفِيَانِ الْفَقْرَ وَالذُّنُوبَ كَمَا يَنْفِي الْكِيرُ خَبَثَ الْحَدِيدِ وَالذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَلَيْسَ لِلْحَجَّةِ الْمَبْرُورَةِ ثَوَابٌ إِلَّا الْجَنَّةَ
ধারাবাহিকভাবে হজ ও ওমরার করতে থাক। কারণ এ দুটি দারিদ্র্য ও গুনাহ এমনভাবে দূর করে, যেমনভাবে হাঁপর লোহা ও সোনা-রুপার ময়লা দূর করে। মাবরুর হজের (সব রকম গুনাহ ও অশ্লীলতা থেকে পবিত্র) সাওয়াব জান্নাত ব্যতীত আর কিছু নয়। (সুনানে নাসাঈ: ২৬৩১, সুনানে তিরমিজি: ৮১০)
বছরে পাঁচটি দিন ব্যতীত সারা বছর ওমরাহ পালন করা যায়। ওই পাঁচটি দিন হলো হিজরি ক্যালেন্ডারের জিলহজ মাসের ৯, ১০, ১১, ১২ ও ১৩ তারিখ। এ দিনগুলোতে ওমরাহ করা মাকরুহ তাহরিমি। এ ছাড়া সারা বছরই ওমরাহ করা জায়েজ ও সওয়াবের কাজ।
ওএফএফ/জিকেএস