প্রথম ইনিংসে দুইশর নিচে (১৯১ রানে) অলআউট, তারপরও ৮১ রানে পিছিয়ে থেকেও সিলেট টেস্ট জিততে পারে বাংলাদেশ; সোমবার এমন লেখা দেখে যারা ভ্রুকুটি করেছিলেন, তারাও আজ নড়েচড়ে বসেছেন। বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আগামীকাল বুধবার টেস্টের চতুর্থ দিনই বোঝা যাবে, কোন দিকে যাচ্ছে ফল। আজ মঙ্গলবার তৃতীয় দিন শেষে টাইগাররা যে রান ৪ উইকেটে করেছে, তা ২ বা ৩ উইকেটে করলেই হয়তো ভক্ত ও সমর্থকরা আরও একটু আশাবাদী হতেন। তারপরও এখন ম্যাচের যে অবস্থা, তাতে বাংলাদেশের জয়ের আশা মোটেই আকাশ-কুসুম কল্পনা মনে হচ্ছে না।
Advertisement
তৃতীয় দিন শেষে স্বাগতিকদের স্কোর ৪ উইকেটে ১৯৪ রান। ৮১ রানের ঘাটতি পুুষিয়ে লিড মিলেছে ১১২ রানের। বাকি ৬ উইকেটে আরও শ’দেড়েক রান করতে পারলে লিড আড়াইশ পেরিয়ে যাবে। তখন ম্যাচ জয়ের ভালো সুযোগ থাকবে। এখন প্রশ্ন হলো, টাইগাররা কি আরও ১৫০+ রান করতে পারবে কিনা? সাদমান ইসলাম, মাহমুদুল হাসান জয়, মুমিনুল হক আর মুশফিকুর রহিম আউট হয়ে গেছেন। স্বীকৃত ব্যাটার আছেন কেবল মাত্র আর ৩ জন। যার মধ্যে দুইজন নাজমুল হোসেন শান্ত (৬০) আর জাকের আলী অনিক (২১) আবার ক্রিজে। এর পর ব্যাটিং জানা পারফরমার আছেন শুধু মেহেদী হাসান মিরাজ। কাজেই আরও ১৫০+ রান করা সহজ কাজ নয়।
তারপরও ইতিহাস আশার আলো দেখাচ্ছে। পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, মাস চারে আগে (৩০ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর ২০২৪) বাংলাদেশ যে শেষ টেস্ট খেলেছিল, সেটাও ছিল লো স্কোরিং গেম। জ্যামাইকার কিংস্টনের সাবিনা পার্কে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৬৪ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই ম্যাচ টাইগাররা জেতে ১০১ রানের বড় ব্যবধানে।
এই জয়ের পেছনে ছিল পুরো টিম পারফরম্যান্স। তবে বাংলাদেশকে জয়ের পথ দেখান আসলে উইকেটরক্ষক ব্যাটার জাকের আলী অনিক। সে ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে দলকে টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন এই তরুণ। তার ব্যাট থেকে আসা ৯১ রানের (১০৬ বলে ৫ ছক্কা ও ৮ বাউন্ডারি) সাহসী ইনিংসের ওপর ভর করেই বাংলাদেশ পায় ২৮৬ রানের লিড। সেই জাকের আলী অনিক কিন্তু সিলেটেও উইকেটে আছেন। তবে এবার মারমুখী মেজাজে নয়। পরিবেশ-পরিস্থিতি ঠাউরে, ঠান্ডা মাথায় ধৈর্য ধরে ব্যাটং করছেন। খেলেছেন বলের মেধা ও গুন বিচার করে, ৬০ বলে অপরাজিত আছেন ২১ রানে। বুধবার সিলেটেও যদি জাকের আলী অমন এক সাহসী ও লম্বা ইনিংস খেলতে পারেন, তাহলে অবশ্যই বাংলাদেশ আড়াইশ রানের বেশি লিড নিতে পারবে। এবং জিম্বাবুইয়ানদের একটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারবে।
Advertisement
জাকের আলী কি ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারবেন? সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপারে সাহসী নাবিক হয়ে দল বাঁচানোর পাশাপাশি জয়ের বন্দরে ভেড়ানোর মিশনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়া জাকের এবার নিজ শহর সিলেটে। ঘরের মাঠে অমন রাজ্যজয়ী বীরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারবেন?
জাকের যদি পারেন আর তারপর মেহেদী হাসান মিরাজও যদি ব্যাট হাতে দলকে একটু সাপোর্ট দেন। যেমন দিয়েছিলেন চার মাস আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয়ে। দ্বিতীয় ইনিংসে করেছিলেন ৩৯ বলে গুরুত্বপূর্ণ ৪২।
যদি তারা তা পারেন, আর বাংলাদেশ যদি ২৫০-২৬০ রানের লিড পায়। তাহলে নাহিদ রানা, হাসান মাহমুদ, তাইজুল ইসলাম আর মেহেদী মিরাজরা হয়তো সেটাকে জয়সূচক পুঁজিতে পরিণত করতে পারবেন। দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত কী হয়!
এআরবি/এমএমআর/এমএস
Advertisement