ওষুধ তৈরিতে ৪০০ ধরনের অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট (এপিআই) বা কাঁচামাল প্রয়োজন হয়। আর দেশে ৪১ ধরনের কাঁচামাল উৎপাদন হয়। এই কাজে ২১টি কোম্পানি কাজ করে। এখনো ৯০ শতাংশ এপিআই আমদানিনির্ভর হওয়ায় দেশে ওষুধের দাম কমানো এবং রপ্তানির বাজার ধরা চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠছে বলে জানিয়েছে ওষুধ শিল্প সমিতি।
Advertisement
সোমবার (২১ এপ্রিল) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির কার্যালয়ে আয়োজিত এক কর্মশালায় এসব তথ্য জানানো হয়।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলেন, ওষুধের কাঁচামাল তৈরি করে চীন ও ভারত। এসব দেশে থেকেই আমরা কাঁচামাল তৈরির উপকরণ আমদানি করছি। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে বেশি দামে এসব উপকরণ বিক্রি করছে। তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে আমরা পারবো না।
বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সঙ্গে আয়োজিত কর্মশালায় বক্তব্য দেন ডেল্টা ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মো. জাকির হোসেন, হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মুহাম্মদ হালিমুজ্জামান, এসিআই হেলথকেয়ারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এম মহিবুজ্জামান, হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল।
Advertisement
কর্মশালায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডা. মো. জাকির হোসেন বলেন, ওষুধের কাঁচামাল তৈরির জন্য ৪৯ সংস্থার কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হয়। এসব সংস্থার অনুমোদন নিতে ছয় মাসের বেশি সময় চলে যায়। এরপর কাঁচামাল উৎপাদনের জন্য ৫০০ টন উপকরণ প্রয়োজন হলেও আমদানির অনুমোদন মেলে ১০০ টনের মতো। এছাড়া ওষুধের কাঁচামাল তৈরিতে আলাদা আলাদা মেশিন প্রয়োজন হয়। এই যন্ত্রের দাম অনেক। এসব সমস্যা যতদিন আমরা সমাধান না করতে পারবো ততক্ষণ ওষুধের কাঁচামাল শিল্প হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে এক ছাতার মধ্যে সব সেবা আনার প্রস্তাব থাকলেও সরকার এটা করতে পারেনি।
আরও পড়ুন ওষুধ শিল্পে পরনির্ভরতা কমাতে গুরুত্ব দিচ্ছে সংস্কার কমিশন সব হাসপাতালে হচ্ছে সরকারি ফার্মেসি, কম দামে মিলবে ২৫০ রকম ওষুধডা. মো. জাকির হোসেন বলেন, ১৮ বছর আগে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় এ শিল্প প্রতিষ্ঠার জন্য ২০০ একর জমি বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার। চীনের একটি বিশেষজ্ঞ টিম পরিদর্শন করে জানায়, এত ছোট জায়গায় এখানে কীভাবে ওষুধের কাঁচামাল তৈরি হবে। চীনের একটি করখানার ৫৫০ একর আয়তন। এজন্য এই পার্কে কারখানা স্থাপন ও এপিআই তৈরিতে কোম্পানিগুলোর আগ্রহ কম। মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় ওষুধ শিল্প পার্কে ৪২টি প্লট ২৭টি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি কোম্পানি সেখানে উৎপাদনে যাবে, বাকিরা হয়তো এ প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে একীভূত (মার্জ) হবে।
সমিতির মহাসচিব ড. মুহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, বাংলাদেশ এলডিসি গ্রাজুয়েশন (উত্তরণ) হলে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে, বাংলাদেশের ওষুধকে বিশ্বের বিশ্বের বড় কোম্পানির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় যেতে হবে। তখন বাংলাদেশকে নতুন নতুন সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে। এখন থেকেই ভবিষ্যৎ সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে না পারলে অনেক ওষুধ কোম্পানি বিপদে পড়বে।
বক্তারা বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ মার্কে ৩০০ কোটি ডলারের ওষুধ বাজারজাত করা হচ্ছে। আগামী ২০২৯ সালের মধ্যে তা ৬০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের ওষুধের বাজারেও ওষুধ বিক্রি করছে। কারণ বাংলাদেশের ওষুধ মানসম্মত। বাংলাদেশের কমপক্ষে ১৫টি ওষুধ কোম্পানি আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, ব্রাজিলের ওষুধ পরিচালনা প্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেট পেয়েছে।
Advertisement
এম মহিবুজ্জামান বলেন, এলডিসির কারণে আমাদের ওষুধ শিল্পে বেশকিছু বিষয় মওকুফ করা হয়েছে। কিন্তু মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছালে এই ছাড়গুলো আর থাকবে না। তখন মূল (মাদার) কোম্পানি থেকে তাদের চাহিদামতো দামে এপিআই কিনতে হবে। এর প্রভাব পড়বে ওষুধের বাজারে, বেড়ে যাবে ওষুধের দাম। তাই আমদানি নির্ভরতা কমাতে দেশে এপিআই উৎপাদনে নজর দিতে হবে।
মুহাম্মদ হালিমুজ্জামান বলেন, দেশে এপিআই উৎপাদন না হওয়ায় বিদেশের মার্কেটে অন্য দেশের কোম্পানির সঙ্গে প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হচ্ছে।
এএএম/ইএ/এএসএম