আইন-আদালত

শিশু নাইমকে ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে শুনানি ৮ মে

শিশু নাইমকে ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে শুনানি ৮ মে

কিশোরগঞ্জের ভৈরবের একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতে গিয়ে হাত হারানো শিশু নাইম হাসানকে ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ না দেওয়া সংক্রান্ত আদালত অবমাননার মামলাটি ৮ মে পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেছেন আদালত। শিশুটিকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৩০ লাখ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট রিসিপ্ট হিসাব (এফডিআর) করে দেওয়ার রায় পালন না করায় তলবে আপিল বিভাগে হাজির হন কারখানা মালিক। আদালতের নির্দেশে সোমবার কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী তাকে হাজির করান।

Advertisement

এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি নিয়ে সোমবার (২১ এপ্রিল) প্রধানবিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে শিশুর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার ওমর ফারুক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক। মালিকের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। এ সময় হাত হারানো শিশু নাইম ও তার বাবাও উপস্থিত ছিলেন।

২০২০ সালের ১ নভেম্বর ‘ভৈরবে শিশুশ্রমের করুণ পরিণতি’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রকাশিত প্রতিবেদনটি যুক্ত করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শিশুটির বাবা হাইকোর্টে রিট করেন।

Advertisement

রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে একই বছরের ২৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল জারি করেন। রুলে শিশুটিকে দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

২০২০ সালের ১ নভেম্বর সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, নাইম হাসানের বয়স ১০ বছর। পড়ছে চতুর্থ শ্রেণিতে। বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার আড়াইসিধা গ্রামে। তার বাবা আনোয়ার হোসেনের পেশা জুতা ব্যবসা। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর সময়ে আনোয়ার হোসেন কর্মহীন হয়ে পড়েন। এ সময় সংসারের চাপ সামলাতে নাইমকে তার মা–বাবা কিশোরগঞ্জের ভৈরবের একটি ওয়ার্কশপে কাজে দেন। এই ওয়ার্কশপের কাজ করতে গিয়েই মাসখানেক আগে তার ডান হাতটি মেশিনে ঢুকে যায়। শেষে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কনুই থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয় ডান হাতটি।

একই সঙ্গে ২০২০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বরের ওই ঘটনা নিজ কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা দিয়ে অনুসন্ধান করতে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই রুলের ওপর গত বছরের ৫ ডিসেম্বর শুনানি শেষ হয়। এরপর একই বছরের ৩১ জানুয়ারি রায় দেন হাইকোর্ট।

হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে ১৫ লাখ টাকা এপ্রিল ও বাকি অর্থ ডিসেম্বরের মধ্যে ১০ বছর মেয়াদি এফডিআর করে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। আর শিশুটির এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়া পর্যন্ত প্রতিমাসে ৭ হাজার টাকা করে দিতে নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। ওয়ার্কশপের মালিককে এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছিল।

Advertisement

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে মালিকপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। সেই আবেদন গত বছরের ১৯ নভেম্বর খারিজ করে দেন। এরপরও রায় বাস্তবায়ন না করায় শিশুর বাবা আদালত অবমাননার মামলা করেন।

ওই শিশুর বাবার করা আদালত অবমাননার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১০ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ তলবের আদেশ দেন।

আদেশে কারখানা মালিককে আদালত অবমাননার দায়ে নোটিশ ইস্যু করে কিশোরগঞ্জের এসপিকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে মালিককে ২১ এপ্রিল আপিল বিভাগে হাজির করা হয়। সে অনুসারে আজ তাকে হাজির করা হয়।

আদালতে রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, আমরা মামলা লড়তে আসিনি। দু’পক্ষের মধ্যে স্থানীয়ভাবে আলাপ আলোচনাও চলতেছে। আমরা একটা রিভিউ করেছি। আদালতের একটা আদেশ প্রয়োজন। এরপর আদালত ৮ মে পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন।

পরে আইনজীবী ওমর ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, আদালত সব কিছু দেখেছেন। কারখানা মালিকপক্ষের আইনজীবী বলেছেন-রিভিউ ফাইল করেছেন এবং রেডি টু পে। এই কথার আলোকে কোর্ট আজকে ৮ মে পর্যন্ত মুলতবি করেছেন। কারখানার মালিককে হাজির থাকতে বলেছেন। একইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকেও উপস্থিত থাকতে বলেছেন। আমরা মনে করি ৮ তারিখে তারা টাকা নিয়ে আসবে, আদেশ পালন করে কোর্টের সামনে আসবে-এটুকু প্রত্যাশা।

এফএইচ/জেএইচ/জেআইএম