গ্রাহকদের বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাতের মামলায় ইসলামী ব্যাংকের জয়পুরহাটের আক্কেলপুর এজেন্ট শাখার ব্যবস্থাপক রিওয়ানা ফারজানাকে (৩৫) গ্রেফতার করেছ পুলিশ।
Advertisement
রোববার (২০ এপ্রিল) রাতে বগুড়ার দুঁপচাচিয়ার তালোড়া বোন বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
সোমবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ রানা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আক্কেলপুর এজেন্ট শাখার কার্যক্রম শুরু থেকে এই শাখায় কর্মরত আছেন রিওয়ানা ফারজানা। তিনি আক্কেলপুর পৌরশহরের হাজিপাড়া মহল্লার বাসিন্দা। গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের ঘটনায় এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা হয়েছে। প্রতারিত আরও অন্তত ১০-১২ জন গ্রাহক মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। এখন পর্যন্ত তিন কোটির বেশি টাকা আত্মসাতের হিসাব পাওয়া গেছে বলে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা জানিয়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ মার্চ ইসলামী ব্যাংকের আক্কেলপুর এজেন্ট শাখায় গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের ঘটনা ধরা পড়ে। ওইদিন ক্যাশিয়ার মাসুদ রানা অকপটে গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি আত্মসাৎ করা টাকায় গ্রামে জমিজমা কেনা, বিপুল পরিমাণ আবাদদি জমি বন্ধক ও পুকুর খনন করার কথা জানান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তার স্বীকারোক্তির ভিড়িও ছড়িয়ে পড়ে।
Advertisement
ওইদিন রাতেই পুলিশ এজেন্ট ব্যাংকের কার্যালয় থেকে ক্যাশিয়ার মাসুদ রানা, ব্যবস্থাপক রিওয়ানা ফারজানা ও এজেন্টের মালিক জাহিদুল ইসলামকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। এক গ্রাহক তাদের তিনজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। একদিন পর তারা সবাই জামিনে ছাড়া পান। এদিকে ঈদের ছুটির পর টাকা আত্মসাতের ঘটনা তদন্তে আসে বাংলাদেশ ব্যাংকের দুজন উপপরিচালক মাহমুদুল হাসান চৌধুরী ও গোলাম রাব্বী। তারা তদন্ত করে গেছেন। জানা গেছে, ওই এজেন্ট শাখায় সবমিলিয়ে প্রায় আড়াই হাজার হিসাবধারী আছেন। সার্ভারের সমস্যার কথা বলে তাদের কাছে একাধিকবার ফিঙ্গার, জমা ভাউচার ও ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টের চেক দিয়ে স্থায়ী আমানতের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
অন্যদিকে টাকা ফেরত ও জড়িতদের শাস্তির দাবিতে গত ৯ এপ্রিল আক্কেলপুর পৌরশহরে ও ১৩ এপ্রিল একই দাবিতে জয়পুরহাট শহরে ইসলামী ব্যাংকের সামনে মানববন্ধন করেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।
প্রতারিত গ্রাহকদের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন আক্কেলপুর এফ ইউ পাইলট সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুস ছালাম মন্ডল। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত তিন কোটির বেশি টাকা আত্মসাতের হিসাব পেয়েছি। এখনো অনেকেই তাদের ব্যাংক হিসাবের খোঁজ নিতে পারেননি। প্রতিদিনই আত্মসাতকৃত টাকার পরিমাণ বাড়ছে।
আব্দুস ছালাম আরও বলেন, এজেন্ট মালিকের জামানতের টাকাও ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নেই। এই টাকা কীভাবে সরালো, সেটা ইসলামী ব্যাংক জয়পুরহাট শাখার কর্মকর্তাদের জানার কথা। যদি আমাদের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তাহলে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেবো। এ বিষয়ে আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ রানা বলেন, ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট শাখায় টাকা আত্মসাতের ঘটনায় পাঁচটি মামলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট শাখার ব্যবস্থাপককে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও দুই আসামি পলাতক। পুলিশ তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে।
Advertisement
আল মামুন/এসআর/এএসএম