‘রোবট কি আমাদের চাকরি খেয়ে ফেলবে?’ প্রযুক্তির প্রতিটি অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে এই প্রশ্নটা যেন আরও জোরে কানে বাজে। এক সময় যে রোবট ছিল সায়েন্স ফিকশনের চরিত্র, আজ তারা বাস্তব জীবনের সহযাত্রী। কেউ হয়তো কারখানার লাইনে কাজ করছে, কেউ ঘর মোছে, আবার কেউ চিকিৎসকের হাতে অস্ত্রোপচারে সহায়তা করছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এদের আগমনে মানুষ কেমন প্রভাবিত হচ্ছে?
Advertisement
একটা সময় ছিল, যখন মানুষের হাতেই তৈরি হতো গাড়ি, জামা-কাপড় বা খাবার। এখন সেই জায়গায় রোবট। জার্মানির বিএমডব্লিউ বা জাপানের টয়োটা কারখানায় দেখা যায়, শত শত রোবট মানুষ ছাড়াই গাড়ি তৈরি করছে। এতে খরচ কমছে, উৎপাদন বাড়ছে। তবে একইসঙ্গে কমছে শ্রমিকের প্রয়োজন।
বাংলাদেশেও রোবটিক্সের ছোঁয়া পড়তে শুরু করেছে। কিছু গার্মেন্টস কারখানায় অটোমেটিক কাটিং মেশিন চালু হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রোবটিক্স ল্যাব গড়ে উঠেছে, তরুণ উদ্ভাবকেরা তৈরি করছে সার্ভিস রোবট। সম্প্রতি ঢাকায় কয়েকটি রেস্তোরাঁয় দেখা মিলেছে এমন রোবটদের, যারা খাবার পরিবেশন করে হাসিমুখে। এ দৃশ্য মুগ্ধ করে, কিন্তু একইসঙ্গে একটা অজানা ভয়ও তৈরি করে; তা হলো মানুষ কোথায় যাবে?
তবে শুধু ভয় নয়, সম্ভাবনাও আছে। অনেক গবেষক বলছেন, রোবট মানুষকে কাজ থেকে বাঁচিয়ে সৃজনশীল কাজে মনোযোগ দিতে সাহায্য করবে। যেমন একজন কৃষক রোবট দিয়ে জমি চাষ করাতে পারলে তিনি সময় পাবেন ফলন বাড়ানোর গবেষণায়। চিকিৎসক অপারেশন থিয়েটারে রোবটের সাহায্যে আরও নিখুঁতভাবে অস্ত্রোপচার করতে পারবেন।
Advertisement
বিশ্ব অর্থনীতি ফোরামের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের মধ্যে ৮৫ মিলিয়ন কাজ হারাতে পারে, আবার ৯৭ মিলিয়ন নতুন কাজ তৈরি হবে প্রযুক্তির কারণে। এর মানে রোবট কিছু কাজ নেবে, আবার নতুন ধরনের কাজ তৈরি করবে। যেমন রোবট মেইনটেন্যান্স, প্রোগ্রামিং এবং রোবট-ম্যান ইন্টারঅ্যাকশন বিশেষজ্ঞ।
আমাদের করণীয় কী? উত্তর সোজা, সময়ের সঙ্গে তাল মেলানো। রোবটের সঙ্গে টিকে থাকতে হলে শিখতে হবে নতুন দক্ষতা। শুধু বই মুখস্থ নয়, দরকার বিশ্লেষণ, সৃজনশীলতা আর প্রযুক্তির জ্ঞান।
রোবট কি কাজ কেড়ে নিচ্ছে? না কি আমাদের কাজ সহজ করছে? উত্তর নির্ভর করছে আমরা কীভাবে এই প্রযুক্তিকে গ্রহণ করি। ভয় নয়, দরকার প্রস্তুতি। কারণ রোবটের সঙ্গে নয়, বরং রোবটকে পাশে নিয়েই ভবিষ্যৎ গড়া এটাই হতে পারে টেকসই পথ।
আরও পড়ুনএআই ভয়েস ক্লোনিং বুঝবেন ৪ সংকেতে‘ডিপফেক’ এআইয়ের আরেক ফাঁদ, রক্ষা পাবেন যেভাবেসূত্র: ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম, ফোর্বস, ওয়্যার্ড, ব্লুমবার্গ টেক
Advertisement
কেএসকে/জেআইএম