চিকিৎসক ও নার্স সংকটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা সেবা প্রার্থীরা। দাতা সংস্থার বাজেট ও লোকবল সংকটের পাশাপাশি বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত এখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থা।
Advertisement
এছাড়া দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন, হ্নীলা সাব সেন্টার ও ডেলিভারি সেন্টারও বন্ধ রয়েছে। হাসপাতালে এক্সরে মেশিন ও ইসিজি আছে কিন্তু টেকনিশিয়ান না থাকায় মানুষ সেবা পাচ্ছে না, যার কারণে সাধারণ মানুষ অত্যন্ত কষ্টে আছে। এছাড়া সরকারি অ্যাম্বুলেন্স আছে, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে চালক নেই। তবে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রণয় রুদ্রের প্রচেষ্টায় স্থানীয়ভাবে চালক ম্যানেজ করে এ সেবাটি কোনোমতে চালু রাখা হয়েছে। তাছাড়া নেই পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও সিকিউরিটি গার্ড। নবজাতক শিশু পরিচর্যা ইউনিট (এনআইসিইউ) বন্ধ রয়েছে গত জানুয়ারি মাসের এক তারিখ থেকে।
তাছাড়া হাসপাতালে ২৯ জন নার্সের মধ্যে ৭ জন নার্স রয়েছেন। মিডওয়াইফ আছেন চারজনের মধ্যে ১ জন। এমএলএসএস আছেন মাত্র দুই জন, তার মধ্যেও একজনকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এদিকে হাসপাতালটিতে কোনো ধরনের ফার্মাসিস্ট নেই। সাধারণ মানুষ সকালে গিয়ে একটি টিকিট সংগ্রহ করে যে চিকিৎসা নেবে, সেখানেও কোনো লোকজন নেই। টেলিমেডিসিন সেবা বন্ধ রয়েছে। ব্লাড ট্রান্সফিউশন ও কিশোরী বান্ধব কেন্দ্রও বন্ধের পথে।
Advertisement
অপরদিকে সেন্টমার্টিনে এনজিওর সহযোগিতায় ১৬ জন স্টাফ নিয়ে ২৪ ঘণ্টা সেবা দিতে একটি ডেলিভারি সার্ভিস সেন্টার ছিল। এনজিও সংস্থার বাজেট ও লোকবল না থাকায় সেটিও বর্তমানে বন্ধ আছে। আর হ্নীলা উপ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০ জন লোকবল নিয়ে একটি ডেলিভারি সেন্টার ছিল, কিন্তু বাজেট না থাকায় লোকবল সংকটে আপাতত সেটিও বন্ধ।
এ বিষয়ে সিপিপির জাতীয় পদকপ্রাপ্ত নারীনেত্রী কুলসুমা বেগম বলেন, হাসপাতালে আগে ভালো সেবা পাওয়া যেত। সম্প্রতি চিকিৎসক ও নার্স সংকটে তা বন্ধের পথে। সমস্যা সমাধানের জন্য জরুরি উদ্যোগ নিতে আমরা জেলা সিভিল সার্জন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরুরি সহযোগিতা কামনা করছি।
চিকিৎসা নিতে আসা রহিমা বেগম বলেন, আগে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যথাযথ চিকিৎসা সেবা পাওয়া যেত। এখন দেখি শত শত মানুষ আসে চিকিৎসা নিতে কিন্তু চিকিৎসক ও নার্সের অভাবে আমরা সঠিক সেবা পাচ্ছি না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রণয় রুদ্র বলেন, টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও নার্স সংকট নিয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক শেখ এহসান উদ্দিনকে জানিয়েছি। উনি কিছু লোকবল দিয়ে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন। এছাড়াও জেলা সিভিল সার্জনকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। আশা করছি শিগগিরই সমস্যার সমাধান হবে।
Advertisement
কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদুল হক বলেন, টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সব সমস্যা উল্লেখ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। তবে শিগগিরই টেকনাফ হাসপাতালে নতুন একটি প্রজেক্ট শুরু হতে পারে বলে তিনি জানান। আশা করছি শিগগিরই সমস্যার সমাধান হবে। সব মিলিয়ে তিনি গণমাধ্যমের সহযোগিতা কামনা করেন।
এফএ/এমএস