আন্তর্জাতিক

পশ্চিমবঙ্গবাসীর উদ্দেশে মমতার খোলা চিঠি

পশ্চিমবঙ্গবাসীর উদ্দেশে মমতার খোলা চিঠি

ভারতের সংসদে ৩ এপ্রিল গভীর রাতে বিতর্কিত ওয়াকফ সংশোধনী বিল পাশ হয়। এই বিতর্কিত বিলে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর তা আইনে পরিণত হয়েছে। তারপর থেকে ভারতের পাশাপাশি কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে।

Advertisement

এমন পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গে শান্তি ফেরানোর জন্য এবার রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি লিখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। একই সঙ্গে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় সহিংসতার ঘটনার কারণে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি এবং দেশটির হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘকে এক যোগে আক্রমণও করেছেন তিনি। এর পাশাপাশি খোলা চিঠিতে শান্তির আবেদন জানান মুখ্যমন্ত্রী। মুর্শিদাবাদ, মালদহ, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় হিংসার পেছনে যারা রয়েছে, তাদের কড়া হাতে দমন করা হচ্ছে বলে খোলা চিঠিতে উল্লেখ করেন মমতা।

চিঠির প্রথমেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বিজেপিকে আক্রমণ করে বলেন, বিজেপি এবং তাদের সঙ্গীরা পশ্চিমবঙ্গে হঠাৎ খুব আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে। এই সঙ্গীদের মধ্যে আরএসএস-ও আছে। তিনি বলেন, আমি এর আগে আরএসএস-এর নাম নেইনি, কিন্তু এবার বাধ্য হয়েই বলতে হচ্ছে যে, রাজ্যে যে কুশ্রী মিথ্যার প্রচার চলছে তার মূলে তারাও আছে।

তিনি আরও বলেন, প্ররোচনার সূত্রে একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এরা ব্যবহার করছে। ব্যবহার করছে বিভেদের রাজনীতি করার জন্য। এরা ডিভাইড অ্যান্ড রুলস-এর খেলা খেলতে চায়। এ খেলা বিপজ্জনক।

Advertisement

রাজ্যবাসীকে শান্ত থাকার আবেদন জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমার আবেদন হলো, দয়া করে ধীর ও শান্ত থাকুন। আমরা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার নিন্দা করি এবং তাদের রুখবো। দাঙ্গার পেছনে আছে যে দুর্বৃত্তরা তাদের কড়া হাতে দমন করা হচ্ছে। কিন্তু সেই সঙ্গে, পারস্পরিক অবিশ্বাসের বাতাবরণও আমাদের এড়িয়ে চলতে হবে। সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে পরস্পরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে, পরস্পরের ব্যাপারে সহমর্মী ও যত্নশীল হতে হবে।

বিগত কয়েকদিন আগে রামনবমীর মিছিলের নামে রাজ্যজুড়ে অস্ত্র প্রদর্শন করা হয়েছে, এই খোলা চিঠিতে রামনবমীর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি লিখেছেন, আগুনের সঙ্গে খেলা করার জন্য ওরা প্রথমে রামনবমীর দিনটিকেই বেছে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের রামনবমী উদযাপন হয় খুবই শান্তিপূর্ণভাবে। জীবনের জ্বলন্ত সমস্যাগুলো থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘোরানোই ওদের লক্ষ্য। তাই তারা বিভেদগামী প্রচারের আগুন জ্বালাতে চায়।

এরপর মমতা ব্যানার্জি অভিযোগ করে বলেন, বিজেপি এবং তার সঙ্গীরা যা প্রচার করেছে তা মিথ্যা। তাদের কথায় অপব্যাখ্যা ভর্তি। দয়া করে ওদের কথায় বিশ্বাস করবেন না। আমরা সকলে মিলেমিশে থাকতে চাই। ওরা সংকীর্ণ নির্বাচনী রাজনীতির কথা ভেবে আমাদের মধ্যে ভাগাভাগি করতে চায়।

মুর্শিদাবাদের ঘটনার পর আইন-শৃঙ্খলার স্বার্থে তাদের সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে বলেও জানান তিনি। মমতা বলেন, এই ঘটনার পর দুজন পুলিশ কর্মকর্তাকে সরানো হয়েছে। পুলিশ পুরো ঘটনার তদন্ত করছে। উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পশ্চিমবঙ্গ অন্যান্য রাজ্যের মতো নয়। এখানে সংবিধান-বিরোধী ব্যবস্থা কায়েম নেই। বাস্তবিকই বাংলা সব অর্থেই অগ্রণী রাজ্য।

Advertisement

বিজেপিশাসিত একাধিক রাজ্যের নাম নিয়ে মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী লিখেছেন, উত্তর প্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান-এসব রাজ্যেতো প্রতিবাদ-মিছিল করতেই দেওয়া হয় না। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে তো এমন সংবিধান বিরোধী ব্যবস্থা কায়েম নেই। উত্তরপ্রদেশে ওরা বুলডোজার চালায়-জন্ম হয় যন্ত্রণার। বিপরীতে আমাদের দেখুন-যে কেউ যখন উৎপীড়িত বোধ করেন, আমরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই।

এই খোলা চিঠির শেষের অংশে মমতা রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়ে বলেন, ধীর থাকুন ,শান্ত থাকুন, ঐক্যবদ্ধ থাকুন। মিথ্যা সাম্প্রদায়িক প্রচারের বিপদগামী হবেন না। আসুন আমরা মিলেমিশে একজোট হয়ে থাকি এবং ওদের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে লড়ি। ওদের গুন্ডামি ও মিথ্যার বিরুদ্ধে আমাদের লড়তে হবে।

আরও পড়ুন: ম্যারাথনে মানুষের সঙ্গে দৌড়াচ্ছে রোবট যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভে হাজারো মানুষ ডোনাল্ড ট্রাম্প/ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার নির্বাহী আদেশে সই

যদিও মমতা ব্যানার্জির এই চিঠির পরই রাজ্য রাজনীতিতে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দ মমতার খোলা চিঠির প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বিজেপি নেতা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর খোলা চিঠির বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর পুরো চিঠির ছত্রে ছত্রে বিভাজনের রাজনীতি রয়েছে। উস্কানি প্রথমে কে দিয়েছিলেন? আমার প্রশ্ন রইলো মুখ্যমন্ত্রীর কাছে।

ডিডি/টিটিএন