বিনোদন

‘লেখক-শিল্পী-বুদ্ধিজীবীদের সরকারের লেজুড়বৃত্তি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে’

‘লেখক-শিল্পী-বুদ্ধিজীবীদের সরকারের লেজুড়বৃত্তি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে’

শিল্পীদের নিয়ন্ত্রণ করার প্রবণতা থেকে সরকারকে সরে আসতে হবে। লেখক-শিল্পী- বুদ্ধিজীবীদেরও সরকারের লেজুড়বৃত্তি থেকে বেরিয়ে সাহসী ভূমিকা রাখতে হবে। কারণ তারাই ভবিষ্যতের পথ দেখাতে পারেন। যদি একজন শিল্পী স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের সুযোগ না পান, তাহলে সৃজনশীলতার জন্ম হয় না, শিল্প কেবল আনুগত্যের হাতিয়ার হয়ে পড়ে। ‘সংস্কৃতিখাতে বাজেট পর্যালোচনা ও প্রস্তাবনা’ শীর্ষক এক সেমিনারে কথাগুলো বলেছেন অর্থনীতি বিশ্লেষক ও সমাজচিন্তক আনু মুহাম্মদ।

Advertisement

আজ (১৮ এপ্রিল) শুক্রবার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় ছিল সংস্কৃতিখাতের বাজেট প্রস্তাবনা নিয়ে সেমিনার। বিকেলে থিয়েটার আর্টিস্টস অ্যাসোসিয়েশন অব ঢাকার (টাড) আয়োজনে সেমিনারকক্ষে ‘সংস্কৃতিখাতে বাজেট পর্যালোচনা ও প্রস্তাবনা’ শীর্ষক এ সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু ‍মুহাম্মদ।

নাট্যজন ও টাড সভাপতি আজাদ আবুল কালামের সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তৃতা দেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও অভিনেতা মামুনুর রশীদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, নৃত্যশিল্পী ও গবেষক লুবনা মারিয়াম, সংগীতশিল্পী সুজিত মোস্তফা, শেখ জসিম, আবৃত্তিকার গোলাম সারোয়ার, শিল্পসমালোচক মঈনুদ্দিন খালেদ, আলোকচিত্রী কে এম জাহাঙ্গীর আলম, যন্ত্রসংগীতশিল্পী রিপন খান, বাজেট বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, আমাদের দেশে প্রাক-বাজেট আলোচনায় কৃষক থাকেন না, শ্রমিক থাকেন না, সংস্কৃতিকর্মী থাকেন না। অথচ এই তিনটি শ্রেণিই সমাজের ভিত্তি। তাদের অভাব, তাদের বঞ্চনা, এবং তাদের দাবিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু নীতিনির্ধারক পরিসরে তাদের কোনো জায়গা নেই।

Advertisement

তিনি বলেন, উপজেলা পর্যায়ে যদি সত্যিকার অর্থে মানবিক ও সৃজনশীল সমাজ গঠন করতে হয়, তাহলে সেখানে লাইব্রেরি, খেলার মাঠ, নাটকের মঞ্চ এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য নির্দিষ্ট অবকাঠামো থাকা জরুরি। অথচ আমরা দেখছি, দিন দিন এসব জায়গা সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে।

তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, একটা সময় বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের স্বপ্ন নিয়ে দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতি লেখা হতো। সেই সব দেয়ালে লেখা স্বপ্নগুলো আজ চাপা পড়ে গেছে। এখন আমরা দেখছি, এক শ্রেণির আষ্ফালনে সমাজ ও সংস্কৃতির পরিসর ছোট হয়ে আসছে, ভয় এবং নিয়ন্ত্রণের আবহে সাংস্কৃতিক চর্চা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

আনু মুহাম্মদ বলেন, বর্তমান সরকারের সামনে এই বাজেট একটি পরীক্ষা। তারা কি সত্যিই সংস্কৃতির উন্নয়নে বাজেট বরাদ্দ বাড়াবে? নাকি তারা প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর চাপ ও মদদে এমন পদক্ষেপ নেবে, যা আরও বেশি সংকোচন ও দমননীতিকে উৎসাহিত করবে? আমরা যেটা বুঝি, যে সমাজে শিক্ষকের সম্মান নেই, সেখানে শিল্পীর অবস্থান আরও করুণ হয়। আজ শিক্ষকদের অবস্থা ভালো না, আর শিল্পীদের অবস্থা তো একেবারে শোচনীয়।

বাজেটের অর্থ জনগণের। সেকথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে এই অর্থনীতি বিশ্লেষক বলেন, সরকার প্রায়ই বলে, “আমরা তো অনেক টাকা বরাদ্দ করেছি।” কিন্তু এই টাকা সরকারের নিজস্ব টাকা নয়, এই টাকা জনগণের টাকা। কাজেই তাদের দায়িত্ব, এই টাকা জনগণের চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী বরাদ্দ করা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখনো আমরা দেখতে পাচ্ছি, বড় অংশের বাজেট চলে যাচ্ছে লুটপাট, অপচয় ও অপ্রয়োজনীয় খাতে, যেটা জনগণের নয়, গোষ্ঠীস্বার্থের সেবা করে। তাই আমাদের এই কথাগুলো বারবার বলতে হবে। পাবলিক মানি কীভাবে পাবলিকের কাজে লাগবে, সেই দাবি তোলাই আমাদের দায়িত্ব।

Advertisement

আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, আমরা অতীতে দেখেছি, কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি—যারা দায়িত্বে ছিলেন—তাদের ভুল সিদ্ধান্তের জন্য জাতি অনেক কিছু হারিয়েছে। আজ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমির মতো প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্রকৃত দায়িত্ব পালন করছে না, বরং তারা কোনো কোনো সময় নিরপেক্ষতার বদলে অনুগত শিল্পীদের প্রাধান্য দিচ্ছে। কিন্তু অনুগত শিল্পী দিয়ে কোনো রাষ্ট্র সৃজনশীল ভবিষ্যত গড়তে পারে না। তাই আমাদের কথা বলা বন্ধ করা যাবে না। বারবার বলতে হবে, উচ্চারণ করতে হবে, ছড়িয়ে দিতে হবে জনমানসে। জনগণের মধ্যে এই বোধ ছড়িয়ে দিতে হবে যে, সংস্কৃতির অধিকার মানেই তাদের জীবনের অধিকার, সমাজের ন্যায্যতার প্রশ্ন।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে আজাদ আবুল কালাম বলেন, ‘বাংলাদেশ এমন একটি রাষ্ট্র, যার জন্ম হয়েছে ভাষা ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মধ্যদিয়ে। অথচ দুঃখজনকভাবে আমরা দেখছি, যেই রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছে, সংস্কৃতিকে বরাবরই গৌণ মনে করেছে। এই মনোভাবের ফলে, রাষ্ট্র যখন সংস্কৃতিকে গুরুত্ব দেয় না, তখন সাধারণ মানুষের মনেও এর গুরুত্ব কমে যায়।’ সেমিনারে ভিন্ন ভিন্ন শিল্পের প্রতিনিধিরা তাদের নিজ নিজ খাতের সংকট, চাহিদা এবং নীতিগত প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। সংস্কৃতি খাতে দীর্ঘদিনের অবহেলা কীভাবে শিল্পচর্চার ধারা ও শিল্পীদের জীবনমানকে বিপন্ন করছে, সেদিকেও আলো ফেলেন এই শিল্পীরা।

সেমিনারে অন্য বক্তারা :

তথ্যভিত্তিক সাংস্কৃতিক নীতিমালার অভাব : লুবনা মারিয়ামনৃত্যশিল্পী, প্রশিক্ষক ও গবেষক লুবনা মারিয়াম তার বক্তব্যে তথ্যভিত্তিক সাংস্কৃতিক নীতিমালায় গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সংস্কৃতি খাতে এখনও আমরা তথ্যভিত্তিক সাংস্কৃতিক নীতিমালার অভাবে ভুগছি। আমাদের অধিকাংশ দাবিই এখনো বর্ণনামূলক — গল্পের মতো উপস্থাপন করা হয়। ফলে দাবি আদায়ে যুক্তির জোর পাওয়া যায় না। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়েও এ ধরনের তথ্যভিত্তিক গবেষণা ও ডেটা সংগ্রহের কাঠামো নেই।নৃত্যশিল্প প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নৃত্য একটি গভীর ঐতিহ্যবাহী ও সৃজনশীল শিল্পমাধ্যম। এটি কেবল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারক নয়, বরং সামাজিক সংহতি, পর্যটন সম্ভাবনা এবং কর্মসংস্থানের একটি শক্তিশালী চালিকাশক্তিও হতে পারে। তাই নৃত্যখাতে বাজেট বৃদ্ধি একান্ত প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, নৃত্য শুধুই সৌন্দর্যের বাহক নয়। এটি সমাজের সুর, স্পন্দন, এবং আত্মার বহিঃপ্রকাশ। তাই রাষ্ট্র যদি নৃত্যকে যথাযথ গুরুত্ব দেয়, তবে এই শিল্পমাধ্যমটি দেশের সাংস্কৃতিক মর্যাদা বৃদ্ধির পাশাপাশি অর্থনীতিতেও দৃশ্যমান অবদান রাখতে পারে। নৃত্যের জন্য বাজেট শুধু ব্যয় নয়, এটি ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ — এই বোধ যদি আমাদের নীতিনির্ধারকরা রাখেন, তাহলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও তার পরিচয় আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। অথচ বাংলাদেশের নৃত্যশিল্প এখনো বাজেট বন্টনের দিক থেকে শহরমুখী ও সীমাবদ্ধ। যার ফলে গ্রামীণ নৃত্যশিল্প ও শিল্পীরা বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। বাউল, মণিপুরী, আদিবাসী ও অন্য প্রথাগত নৃত্যরূপ এখন বিলুপ্তির মুখে, যা রক্ষা করতে হলে বিশেষ বরাদ্দ ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার প্রয়োজন।

নৃত্যখাতের বাজেট বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, নানান প্রথাগত ও জাতিগত নৃত্যরূপ হারিয়ে যাচ্ছে। এগুলো সংরক্ষণের জন্য সরকারি বাজেটের বিকল্প নেই। গ্রামাঞ্চলে নৃত্যশিক্ষার সুযোগ নেই বললেই চলে। জেলা ও উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি ও স্থানীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলোকে নৃত্যের প্রশিক্ষণকেন্দ্রে পরিণত করতে হবে। বাজেট শহরভিত্তিক হওয়ায় গ্রামের শিল্পীরা পেছনে পড়ে যাচ্ছে। বাজেটে তফসিলভুক্ত বরাদ্দ ও অঞ্চলভিত্তিক সমতা নিশ্চিত করতে হবে। নৃত্য উৎসব, ট্যুর, ওয়ার্কশপ, লোকনৃত্য প্রদর্শনী, এসব আয়োজন থেকে অর্থনৈতিক আয় ও কর্মসংস্থান সম্ভব। প্রথাগত নৃত্যের সংরক্ষণ, ডকুমেন্টেশন ও ভিজ্যুয়াল আর্কাইভ গঠনের জন্য আলাদা বাজেট প্রয়োজন। ইউনেস্কোর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা পেতে হলে তথ্যভিত্তিক বাজেট কাঠামো ও স্বচ্ছতা জরুরি।

জেলা ও উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির কার্যক্রম সম্প্রসারণ, গ্রামীণ নৃত্যশিল্পীদের জন্য প্রশিক্ষণ, ওয়ার্কশপ ও বৃত্তি কর্মসূচি, স্থানীয় উৎসব ও মেলাভিত্তিক ক্ষুদ্র অনুদান স্কিম চালু, ডিজিটাল নৃত্য আর্কাইভ ও ভিজ্যুয়াল রিসোর্স সেন্টার গঠন, নৃত্যনির্ভর পর্যটন কর্মসূচি, রোড শো ও আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী আয়োজন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নৃত্যবিষয়ক পাঠ্যক্রম ও ক্লাব কার্যক্রমে অর্থায়ন, গবেষণা ও একাডেমিক নৃত্যচর্চায় বরাদ্দ এবং তথ্যভিত্তিক নীতিমালা প্রণয়নে বাজেট বরাদ্দের সুপারিশ করেছেন তিনি।

শুধু অর্থ বরাদ্দ নয়, প্রয়োজন একটি মুক্ত পরিবেশ: তারিক আনাম খানঅভিনেতা তারিক আনাম খান বলেন, বাংলাদেশ একটি ভাষা ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পথ ধরে অর্জিত রাষ্ট্র, যেখানে থিয়েটারসহ সকল শিল্পচর্চা ছিল এবং এখনও রয়েছে সামাজিক পরিবর্তনের প্রেরণা হিসেবে। স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে থিয়েটার শুধু বিনোদন নয়, বরং সম্মিলিত চেতনা, ভিন্নমত এবং স্বপ্ন প্রকাশের জন্য একটি শক্তিশালী মাধ্যম হয়ে ওঠে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আজ সেই থিয়েটার ও সাংস্কৃতিক খাতটি অব্যবস্থাপনা, অবহেলা এবং কাঠামোগত দুর্বলতার শিকার।

তারিক আনাম খানের মতে, এই সংকটের মূল কারণ হলো — রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনার অভাব, প্রয়োজনীয় তথ্যভিত্তিক নীতিনির্ধারণ না করা এবং সংস্কৃতিচর্চার জন্য সুরক্ষিত পরিবেশ না থাকা। তিনি বলেন, থিয়েটারের বিকাশের জন্য একটি সুগঠিত সংস্কৃতিনীতি, গবেষণানির্ভর পরিকল্পনা এবং একটি স্বাধীন সাংস্কৃতিক পরিবেশ তৈরি করা একান্ত জরুরি। জাতীয় বাজেটে থিয়েটার খাতে বরাদ্দ বাড়ানো শুধু অর্থায়নের প্রশ্ন নয়, এটি একটি মূল্যবোধের প্রশ্ন — আমরা আমাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়, আমাদের ইতিহাস এবং সমাজ গঠনে শিল্পের ভূমিকাকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছি, তার পরিচায়ক। এই বাজেটের মাধ্যমে থিয়েটার ইনস্টিটিউট, গবেষণাকেন্দ্র, প্রান্তিক থিয়েটার গ্রুপের সহায়তা, শিল্পীদের সম্মানী ও কল্যাণ তহবিল এবং করপোরেট পৃষ্ঠপোষকতার জন্য প্রণোদনামূলক নীতিমালা তৈরি করা সম্ভব।

তারিক আনাম খান আরও বলেন, শুধু অর্থ বরাদ্দ নয়, প্রয়োজন একটি মুক্ত পরিবেশ, যেখানে ক্ষমতা বা রাজনৈতিক চাপের বাইরে থেকে শিল্পীরা নির্ভয়ে কাজ করতে পারেন। করপোরেট পৃষ্ঠপোষকতাকে থিয়েটারের সাথে যুক্ত করার বিষয়েও ইতিবাচক ও নীতিগত উদ্যোগ প্রয়োজন, যেমনটি আন্তর্জাতিক মানের থিয়েটার চর্চার ক্ষেত্রে দেখা যায়। সর্বোপরি থিয়েটার রাষ্ট্রের ‘সাংস্কৃতিক আত্মপরিচয়ের’ অন্যতম বাহক। তাই এই শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়া, পৃষ্ঠপোষকতা করা এবং বাজেটে এর জন্য যথাযথ বরাদ্দ নিশ্চিত করা কেবল শিল্পী বা নাট্যসংগঠকদের স্বার্থে নয় বরং জাতির ভবিষ্যৎ সাংস্কৃতিক চেতনার স্বার্থেই গুরুত্বপূর্ণ।

নাট্যচর্চাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় আনা জরুরি: মামুনুর রশীদমঞ্চনাটকের বাজেট প্রসঙ্গে স্পষ্ট ও সমালোচনামূলক বক্তব্য উপস্থাপন করেন মামুনুর রশীদ। তিনি বলেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও শিল্পকলা একাডেমির কাঠামো ও নীতিগত দুর্বলতা সংস্কৃতিচর্চার পরিপন্থী হয়ে উঠেছে।

তিনি অভিযোগ তোলেন, শিল্পকলা একাডেমির বিভিন্ন শাখা থাকলেও তার কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ। লোকবল নেই, ব্যবস্থাপনার অভাব প্রকট। এমনকি মেকআপ রুমগুলো কেয়ার টেকারের বাসস্থানে পরিণত হয়েছে। শিল্পচর্চার স্থানে সৃজনশীল পরিবেশ অনুপস্থিত।

বাজেট ও নীতিনির্ধারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি বাজেট ও অনুদানের পরিকল্পনা করেন। কিন্তু সেই প্রক্রিয়া প্রায়শই অংশগ্রহণমূলক বা স্বচ্ছ নয়। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের বাজেটের বেশিরভাগ অংশ এস্টাবলিশমেন্ট খাতে চলে যায় — ভবন, বেতন, গাড়ির পেছনে, সরাসরি সংস্কৃতিচর্চায় আসে না। মঞ্চনাট্য একটি লোকশিক্ষার মাধ্যম, তাই নাট্যচর্চাকে শুধু বিনোদনের অংশ হিসেবে না দেখে একে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় আনা জরুরি, যাতে এর প্রভাব ও গুরুত্ব আরও ব্যাপকভাবে স্বীকৃতি পায়।

বাজেট ব্যবস্থাপনায় গঠনমূলক পরিবর্তনের প্রস্তাবে তিনি বলেন, নাট্যদল ও নাট্যশিল্পীদের জন্য স্যালারি গ্রান্ট চালু করতে হবে, যেন তারা ন্যূনতম জীবিকা নিশ্চিত করে শিল্পচর্চা করতে পারে। শিল্পকলা একাডেমিকে একটি নির্বাচিত সদস্যদের দ্বারা পরিচালিত স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে, যারা বাস্তবিক অর্থে নীতি নির্ধারণে সক্ষম। শিল্পকলা যেন নিজেরা প্রোগ্রাম না করে, বরং বাজেট সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর মাধ্যমে খরচ হয়, সেই নীতিগত কাঠামো তৈরির ওপরও জোর দেন তিনি।

শহরে মঞ্চনাটকের অবকাঠামোগত সংকট তুলে ধরে মামুনুর রশীদ বলেন, মিরপুর, উত্তরা, বসুন্ধরা, বনানী, এত বড় জনপদেও একটি থিয়েটার হল নেই, নেই বইয়ের দোকান, সিনেমা হল। অথচ ধানমণ্ডিতে ১ হাজার ৩৫০টি রেস্টুরেন্ট। অর্থাৎ আমাদের সমাজে ‘খাওয়া’ হয়ে উঠেছে প্রধান বিনোদন। জাতির মনন তৈরির সুযোগ কমে গেছে। আমরা অর্থনৈতিকভাবে হয়তো ধনী হচ্ছি, কিন্তু সাংস্কৃতিক ও মানসিকভাবে গরীবই থেকে যাচ্ছি। প্রতিবেশী দেশ ভারতের উদাহরণ টেনে মামুনুর রশীদ বলেন, ভারতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশত জন্মবার্ষিকীতে সরকার হাজারের বেশি স্টুডিও থিয়েটার তৈরি করেছে, সংগঠনগুলোকে প্লট দিয়েছে। আমাদের দেশেও এ রকম উদ্যোগ এখন সময়ের দাবি।

এই নাট্যজন পরামর্শ দিয়ে বলেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের বাজেট বাড়াতে হবে, তবে দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন সবার আগে প্রয়োজন। শিল্পীর মর্যাদা ও জীবিকার নিশ্চয়তা দিতে হবে। যোগ্য শিল্পীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। আমরা শিল্পকে সস্তা করে ফেলেছি, এটি বন্ধ করতে হবে।

সংস্কৃতির বাজেটকে ‘খরচ’ নয়, বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে: এম আবু ইউসুফসংস্কৃতি খাতের বাজেট শুধু অবকাঠামো তৈরির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। সেই অবকাঠামোয় যারা কাজ করবেন, শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী, সংগঠক, তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি, ন্যায্য পারিশ্রমিক, কল্যাণভাতা, প্রশিক্ষণ, কর্মসংস্থানের সুযোগ এসবের জন্যও বাজেটে সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ থাকতে হবে। একে শুধু ‘খরচ’ হিসেবে নয়, একটি বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে, যেমন শিক্ষা খাতে বাজেট দেওয়া হয়।

আমরা যখন টেকসই উন্নয়নের কথা বলি, তখন তিন পি, অর্থাৎ, পিপল, প্লানেট ও প্রসপারিটি, এই তিনটি মূলস্তম্ভের কথা বলি। এর মধ্যে পিপল, অর্থাৎ মানুষকে সত্যিকার অর্থে মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সংস্কৃতি একটি অপরিহার্য উপাদান। এটি কেবল একটি আলাদা খাত নয়, বরং এটি একটি ক্রস-কাটিং বিষয়, যা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়নের প্রতিটি স্তরের সাথে গভীরভাবে জড়িত। তবে এই খাতে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো সংস্কৃতিচর্চা এবং নীতিনির্ধারণে একটা অগোছালো ও খণ্ডিত পদ্ধতি কাজ করছে। সরকারের চিন্তাভাবনা এখনও অনেকাংশেই সেকেলে এবং প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতায় আবদ্ধ। প্রয়োজন একটি সমন্বিত, ইনটিগ্রেটেড অ্যাপ্রোচ, যেখানে সংস্কৃতি শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বিবেচিত হবে।

তিনি বলেন, অনেক দেশে স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও কালচারাল সেন্টার একই এলাকায় সমন্বিতভাবে গড়ে তোলা হয়। আমাদের এখানেও সে রকম চিন্তা করতে হবে। আমরা যদি সত্যিকারের সৃজনশীল সমাজ গড়ে তুলতে চাই, তাহলে আমাদের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে সংস্কৃতি খাতের জন্য বাজেট বরাদ্দে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনতে হবে। আজ শিক্ষা ব্যবস্থাও হয়ে পড়েছে পুরোপুরি রেজাল্ট-ওরিয়েন্টেড, যেখানে জ্ঞান, কল্পনাশক্তি, শিল্পচর্চা ও মূল্যবোধের জায়গা সংকুচিত হয়ে পড়েছে। অথচ শিশুদের মানসিক বিকাশ, সামাজিক দক্ষতা ও দায়বদ্ধতা তৈরিতে সংস্কৃতির গুরুত্ব অপরিসীম। যেমন দেশে জেন্ডার বাজেট বা শিশু বাজেট চালু রয়েছে, তেমনি সংস্কৃতি বাজেটও একটি ‘ক্রস-কাটিং বাজেট’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব যা সময়োপযোগী।

প্রান্তিক পর্যায়ের সংস্কৃতি, যেখানে অসংখ্য মানুষ যুক্ত আছেন, সেখানে বাজেটের সুফল পৌঁছাতে না পারলে শহরকেন্দ্রীকতার ভারসাম্যহীনতা আরও বাড়বে। বরং সংস্কৃতি খাতকে সঠিকভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দিলে এটি বৃহৎ আকারে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।

প্রাইভেট সেক্টরের সিএসআর বাজেটের একটি অংশ সংস্কৃতি খাতে প্রবাহিত করার জন্যও রাষ্ট্রকে নীতিগতভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে বহু খ্যাতনামা থিয়েটার বা ফেস্টিভ্যাল করপোরেট অর্থায়নে পরিচালিত হয়। আমরাও একই মডেল অনুসরণ করতে পারি।

একইসঙ্গে একটি ‘ন্যাশনাল কালচারাল ইকোনোমি সেল’ গঠন করা যেতে পারে, যারা সাংস্কৃতিক খাতে বাজেট বরাদ্দের রূপরেখা, খাতভিত্তিক ব্যয় এবং পারফরমেন্স ট্র্যাকিংয়ের কাজ করবে। বাজেট যেন পারফরম্যান্স-বেজড ও রেসপনসিভ হয়, সে ব্যবস্থা থাকতে হবে। পাশাপাশি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের জন্য ক্যাপাসিটি বিল্ডিং প্রোগ্রাম চালু করাও সময়ের দাবি।

অভিজ্ঞতা, মান ও অবদানের ভিত্তিতে শিল্পীসম্মানী নির্ধারণ করতে হবে: সুজিত মোস্তফাবাংলাদেশে সংগীতাঙ্গনের বাজেট ও রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সংগীতশিল্পী প্রশিক্ষক সুজিত মোস্তফা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের শিল্পীরা সমাজে সবচেয়ে নিগৃহিত ও অবহেলিত একটি শ্রেণি। তারা শুধু অর্থনৈতিক দিক থেকেই নয়, সামাজিকভাবে সম্মানহীন অবস্থায় রয়েছেন। বিশ্বের অন্য দেশগুলোতে যেখানে শিল্পীদের মর্যাদা, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা হয়, সেখানে বাংলাদেশে শিল্পীদের সম্মান, মর্যাদা ও ন্যায্য পারিশ্রমিক এখনো স্বপ্ন।

তিনি বলেন, যেমনভাবে ব্রিটিশ সরকার অপেরা শিল্পকে রক্ষার জন্য পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে এসেছে, তেমনি বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে রক্ষার জন্যও রাষ্ট্রকে কার্যকর ও সংগঠিত ভূমিকা পালন করতে হবে। কারণ শিক্ষা যদি হয় জাতির মেরুদণ্ড, তবে সংস্কৃতি হচ্ছে জাতির মনন। এই মননের সঠিক বিকাশ ছাড়া কোনো জাতি প্রকৃত অর্থে উন্নত হতে পারে না।

বর্তমানে বেতার, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র শিল্পীরা তথ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় থাকলেও বাকিগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিচালিত হচ্ছে, যার কারণে বাজেট বরাদ্দ ও সুনির্দিষ্ট নীতিমালায় বিশৃঙ্খলা দেখা যাচ্ছে। তিনি শিল্পীদের জন্য একটি জাতীয় সম্মানী কাঠামো বা গ্রেডিং সিস্টেম প্রণয়নের আহ্বান জানান, যেখানে শিল্পীদের অভিজ্ঞতা, মান ও অবদানের ভিত্তিতে সম্মানী নির্ধারণ করা হবে।

তার প্রস্তাব অনুযায়ী বেতার ও টেলিভিশনের শিল্পীদের সম্মানী গ্রেড অনুযায়ী যথাযথ হারে বাড়াতে হবে। যেখানে পাশের দেশে ‘এ’ গ্রেড শিল্পী ৪০ হাজার টাকা পান, সেখানে বাংলাদেশে তা এখনো ২ হাজার। শিল্পকলা একাডেমির সর্বোচ্চ গ্রেডের শিল্পীদের জন্য ২৫ হাজার টাকা, বাংলা একাডেমির সম্মানীও ন্যূনতম ২৫ হাজার টাকা হওয়া উচিত বলে মনে করেন এই জ্যেষ্ঠ শিল্পী। ‘এ’ গ্রেডের পর আরও কয়েকটি গ্রেড নির্ধারণ করে শিল্পীদের জন্য ২০ হাজার, ১৫ হাজার, ১০ হাজার টাকা করে সম্মানী নির্ধারণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যন্ত্রশিল্পীদের ক্ষেত্রেও একইভাবে সম্মানী বৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে হবে। জেলা শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষকদের বেতন বর্তমানে মাত্র ২ হাজার টাকা, যা অত্যন্ত অপ্রতুল। এটি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়াতে হবে।

দেশে অনেক নিষ্ঠাবান সংগীত প্রশিক্ষক আছেন, যারা নিরলসভাবে কাজ করলেও কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রণোদনা পান না। এই ধরনের শিল্পীদের বাছাই করে গ্রেড অনুযায়ী মাসিক ১ লাখ, ৭০ হাজার, ৫০ হাজার, ৪০ হাজার টাকা করে প্রণোদনা দেওয়া গেলে সংগীত শিক্ষার মান ও ধারাবাহিকতা বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া জাতীয় বাজেটের ন্যূনতম ৪ শতাংশ সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ রাখার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, বাজেট বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও পরিকল্পনার অভাবে বছরের শেষে বরাদ্দকৃত অর্থ ফেরত চলে যায়, যা স্পষ্ট করে যে যথাযথ সদিচ্ছা ও কার্যকর পরিকল্পনার অভাব রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বড় সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে বছরে ১০ লাখ এবং মান অনুযায়ী ৫ ও ৩ লাখ টাকা করে বার্ষিক অনুদান প্রদান করা যেতে পারে। বিদেশে শিল্পীরা পারফর্ম করতে গেলে তাদের জন্য পারফরম্যান্স ভাতা নির্ধারণ করতে হবে। সর্বোপরি, শিল্পীকে যথাযথ মর্যাদা দিতে হবে। এজন্য একটি ‘শিল্পী সম্মান ভাতা কমিটি’ বা ‘ট্রাস্ট’ গঠন করে স্বচ্ছ ও টেকসই ব্যবস্থাপনায় শিল্পীদের সম্মান নিশ্চিত করতে হবে।সংগীতকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সুসংগঠিত ও মর্যাদাপূর্ণ শিল্পমাধ্যম হিসেবে গড়ে তুলতে জাতীয় বাজেটে অন্তত ৩ শতাংশ বরাদ্দ নিশ্চিত করার দাবি জানান কণ্ঠশিল্পী, সুরকার, সংগীত পরিচালক শেখ জসিম।

আন্তর্জাতিক পরিসরে দেশের ভাবমূর্তি গঠনে আলোকচিত্রীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন : জাহাঙ্গীর আলোকচিত্রী কে এম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আলোকচিত্র আমাদের সময়ের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও চেতনার ভিজ্যুয়াল দলিল। এটি শুধু শিল্প নয়, বরং প্রতিবাদ, সংরক্ষণ, জনমত গঠনের একটি শক্তিশালী মাধ্যম। বাংলাদেশের ঐতিহ্য, সৌন্দর্য ও বাস্তবতা তুলে ধরতে এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে দেশের ভাবমূর্তি গঠনে আলোকচিত্রীরা দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। অথচ তারা রাষ্ট্রীয়ভাবে অবহেলিত।

শিল্পকলা একাডেমিতে দীর্ঘকাল ধরে আলোকচিত্র বিভাগ অনুপস্থিত ছিল, এবং এখন বিভাগ চালু হলেও বাজেটের অভাবে কার্যকর কোনো কাজ সম্ভব হচ্ছে না। জাতীয় সংস্কৃতি নীতিতে আলোকচিত্রকে অন্তর্ভুক্ত করা, ভিজ্যুয়াল আর্কাইভ নির্মাণ, নবীন-প্রবীণ আলোকচিত্রীদের নিয়ে গবেষণা ও প্রদর্শনীর উদ্যোগের জন্য এখনই প্রয়োজন পর্যাপ্ত বরাদ্দ। তাই আলোকচিত্র বিভাগকে শক্তিশালী করতে এবং ভিজ্যুয়াল ইতিহাস সংরক্ষণের স্বার্থে বাজেট বৃদ্ধি সময়ের দাবী।

এই শিল্পখাতের বরাদ্দের ক্ষেত্র উল্লেখ করে তিনি বলেন, আলোকচিত্র বিভাগের কাঠামোগত উন্নয়ন ও জনবল নিয়োগ, ভিজ্যুয়াল আর্কাইভ গঠনের জন্য প্রযুক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা, নবীন আলোকচিত্রীদের প্রশিক্ষণ, বৃত্তি ও গবেষণার সুযোগ, প্রবীণ ও খ্যাতনামা আলোকচিত্রীদের কাজ সংরক্ষণ ও ডিজিটাল প্রকাশনা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোকচিত্র প্রদর্শনী আয়োজন ও অংশগ্রহণে সহায়তা, আলোকচিত্র বিষয়ক প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়ন ও পৃষ্ঠপোষকতা, আঞ্চলিক ও প্রান্তিক সংস্কৃতির ভিজ্যুয়াল ডকুমেন্টেশন উদ্যোগ, আলোকচিত্রবিষয়ক জাতীয় নীতি প্রণয়নে বাজেট সহায়তা।

আবৃত্তিশিল্পকে স্বতন্ত্র শাখা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে: গোলাম সারোয়ারসংগঠক, আবৃত্তিশিল্পী ও প্রশিক্ষক গোলাম সারোয়ার বলেন, আবৃত্তি একটি স্বতন্ত্র ও পরিশীলিত পারফর্মিং আর্ট হলেও জাতীয় বাজেটে এই শিল্পটির জন্য কোনো সুসংগঠিত বরাদ্দ নেই, যা একটি গুরুতর অবহেলার প্রতিচ্ছবি। এই শিল্পচর্চায় পোষাক, মঞ্চসজ্জা, আবহসংগীত, আলো, সাউন্ড প্রযুক্তি, মহড়া ও পরিবেশনা মিলনায়তন ভাড়া, শিল্পীদের যাতায়াত ও খাদ্য ব্যয়সহ নানা আনুষঙ্গিক খরচ জড়িত, যা একে একটি ব্যয়বহুল শিল্পমাধ্যমে পরিণত করে। অথচ বর্তমান বাস্তবতায় কেবল নামমাত্র অনুদানেই এর সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে, যা শিল্পীদের নিরুৎসাহিত করছে। বাজেটে আবৃত্তিশিল্পকে স্বতন্ত্র শাখা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মিলনায়তন ভাড়ায় ভর্তুকি, আবহ সংগীত ও প্রযুক্তি সহায়তা, উৎসব ও প্রযোজনাভিত্তিক অনুদান এবং শিল্পীদের সম্মানীভাতাসহ একটি পূর্ণাঙ্গ ‘আবৃত্তি উন্নয়ন তহবিল’ গঠনের দাবি অত্যন্ত সময়োপযোগী। এভাবে সুপরিকল্পিত বাজেট বরাদ্দের মাধ্যমে আবৃত্তিকে টেকসই, মর্যাদাপূর্ণ এবং পেশাগতভাবে স্থিতিশীল একটি শিল্পমাধ্যমে রূপান্তর করা সম্ভব।

চারুকলায় বাজেট বৃদ্ধি সময়োপযোগী : মঈনুদ্দিন খালেদশিল্পসমালোচক মঈনুদ্দিন খালেদ বলেন, চারুকলা একটি জাতির দৃষ্টিভঙ্গি, সৃজনশীলতা এবং সাংস্কৃতিক পরিচয়ের অন্যতম শক্তিশালী বাহন। এটি শুধু নান্দনিকতা নয়, বরং ইতিহাস সংরক্ষণ, সমাজ সচেতনতা বৃদ্ধি, ও তরুণ প্রজন্মের মানসিক বিকাশে ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশে চারুকলা বিভিন্ন আঙ্গিকে যেমন চিত্রকলা, ভাস্কর্য, ছাপচিত্র, ইনস্টলেশন আর্ট ইত্যাদির মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের ভাবমূর্তি গঠনে সাহায্য করছে। তদুপরি, এই খাতের মধ্যে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ, সামাজিক বার্তা প্রচারে শিল্পীর সক্রিয়তা এবং পর্যটনের সম্ভাবনা রয়েছে। অথচ বাজেট বরাদ্দ এখনও প্রয়োজনের তুলনায় সীমিত। এই প্রেক্ষাপটে চারুকলার খাতে বাজেট বৃদ্ধি সময়োপযোগী এবং জরুরি।

এমআই/আরএমডি