নতুন শিল্প ও ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বাড়ানোর পর দেশের শেয়ারবাজারে টানা দরপতন দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে কমে গেছে লেনদেনের গতি।
Advertisement
সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। পাশাপাশি কমেছে সবকয়টি মূল্যসূচক। একই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার পাশাপাশি কমেছে সবকয়টি মূল্যসূচক। একই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। এর মাধ্যমে টানা চার কার্যদিবস শেয়ারবাজারে দরপতন হলো।
এর আগে শিল্প গ্যাসের মূল্য বাড়ানো হচ্ছে এমন গুঞ্জনে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার (১৩ এপ্রিল) শেয়ারবাজারে ঢালাও দরপতন হয়। শেয়ারবাজারের লেনদেন শেষ হওয়ার পর শিল্প ও ক্যাপটিভের নতুর সংযোগের ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানায় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিএসইসি)।
Advertisement
গ্যাসের মূল্য বাড়ানোর পর সোমবার পহেলা বৈশাখের ছুটি থাকায় শেয়ারবাজারে লেনদেন হয়নি। তবে মঙ্গলবার ও বুধবার শেয়ারবাজারে আবার ঢালাও দরপতন হয়। একই সঙ্গে ৮ কার্যদিবস পর ডিএসইতে লেনদেনর পরিমাণ তিনশ কোটি টাকার ঘরে নেমে আসে।
এ পরিস্থিতিতে আজ বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে। কিন্তু লেনদেনের শেষদিকে গড়পড়তা সব খাতের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দরপতন হয়। এতে সবকয়টি মূল্যসূচক কমেই দিনের লেনদেন শেষ হয়।
দিনের লেনদেন শেষে সব খাত মিলিয়ে ডিএসইতে ১২৪ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে পেরেছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৯০টির। এছাড়া ৮২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
আরও পড়ুন অনেক মিষ্টি কিনেছি কোনো দোকানদার ভ্যাটের রিসিট দেননি বাংলাদেশি পণ্যে বছরে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি শুল্ক পায় যুক্তরাষ্ট্রভালো কোম্পানি বা ১০ শতাংশ অথবা তার বেশি লভ্যাংশ দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৭৩টির শেয়ারের দাম বেড়েছে এবং ১০৮টির দাম কমেছে। এছাড়া ৩৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। মাঝারি মানের বা ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেওয়া ২৪টি কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ার বিপরীতে ৪১টির দাম কমেছে এবং ১৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
Advertisement
এছাড়া বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেওয়ার কারণে পচা ‘জেড’ গ্রুপে স্থান হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ২৭টির শেয়ারের দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪১টির এবং ২৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। পাশাপাশি ১২টি মিউচুয়াল ফান্ডের দাম বাড়ার বিপরীতে কমেছে ৯টির এবং ১৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
সার্বিকভাবে দাম কমার তালিকায় বেশি প্রতিষ্ঠান থাকায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৮ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৯৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৪ পয়েন্ট কমে এক হাজার ১৪৩ পয়েন্টে নেমে গেছে। এছাড়া বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৮৭৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
সবকয়টি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৩৯ কোটি ২৯ লাখ টাকার। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩৯৬ কোটি ৪২ লাখ টাকার। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ৫৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা।
এ লেনদেনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে বিচ হ্যাচারির শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির ১৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা উত্তরা ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকার। ১২ কোটি ২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে মিডল্যান্ড ব্যাংক।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, এনআরবি ব্যাংক, বেক্সিমকো ফার্মা, লাভেলো আইসক্রিম, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্ট, শাইনপুকুর সিরামিক এবং এবি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড।
অন্য শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৬৩ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৯৮ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬০টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১০১টির এবং ৩৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
এমএএস/কেএসআর/জিকেএস